• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এক আশ্চর্য প্রেমকাহিনি


ফিচার ডেস্ক সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৬, ১০:৩০ এএম
এক আশ্চর্য প্রেমকাহিনি

ভালবাসা ঠিক কতখানি ব্যাপ্ত হতে পারে? কতখানি শক্তি জোগাতে পারে ভালবাসা। বিশেষত ভালবাসার মানুষটি যখন চিরতরে ছেড়ে দিয়েছে হাত? যারা ভালবাসতে জানেন, প্রেম যে তাদের কাছে এক অনির্বাণ জীবনীশক্তি তা যেন নতুন করে প্রমাণ করেছে দীপিকা আর রনের কাহিনি। এরা দু’জনেই একসময় ভারতীয় বিমানবাহিনীতে কাজ করতেন।

তাদের ভালবাসার মর্মস্পর্শী উপাখ্যান সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে ফেসবুকের ‘ফৌজি লাইফ অ্যান্ড দেওয়ার লাভ কনফেশনস’ নামক পেজে। তাদের প্রেমকথা পড়ে চোখে জল এসে গেছে অনেকেরই।

২০০২ সালে সূচনা দু’জনের প্রণয়জীবনের। সেই সময় এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমিতে যখন ট্রেনিং নিচ্ছেন দীপিকা, তখন সেই অ্যাকাডেমিতে সিনিয়র মোস্ট ট্রেনি হিসেবে রয়েছেন রোনাল্ড কেভিন সেরাও, সংক্ষেপে রন। সেখানেই পরিচয় দু’জনের। পরিচয় অচিরেই গড়ায় প্রেমে।

অ্যাকাডেমির সাইকেল স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ প্রেমালাপ চলত তাদের। কথা হত ভবিষ্যৎ জীবন, পেশা কিংবা নিজের আত্মীয় পরিজনদের নিয়ে। দু’জনে হাতে হাতে রেখে এক মধুময় ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন।

ট্রেনিং শেষ হওয়ার পরে কোনওদিনই একই বেস ক্যাম্পে দু’জনের পোস্টিং হয়নি। কিন্তু তাতে ভাঁটা পড়েনি তাদের প্রেমে। ২০০৬ সালে বিয়ে হয় তাদের। তারপরেও কখনও এক জায়গায় পোস্টিং পাননি তারা। স্বামীকে একবার চোখের দেখা দেখতে কখনও সপ্তাহান্তে তেজপুর, কখনও হালওয়ারা কখনও বা আম্বালায় ছুটে যেতেন দীপিকা। আর দীপিকার টানে বেঙ্গালুরু বা আগ্রায় চলে আসতেন রন।

১৭ জানুয়ারি ছিল রনের জন্মদিন। ২০০৭ সালের ওই দিনে দীর্ঘক্ষণ ফোনে কথা বলেন দীপিকা আর রন। রন বলেন, এত সুন্দর জন্মদিন তার জীবনে আগে কখনও আসেনি। খুব খুশি ছিলেন দীপিকাও। কিন্তু তখনও তার কোনও ধারণাই ছিল না যে, রনের সঙ্গে এই তার শেষ কথা বলা। ১৮ জানুয়ারি ২০০৭ সালে দীপিকা জানতে পারেন, যে জাগুয়ার কমব্যাট যুদ্ধবিমানটি নিয়ে আকাশে উড়েছিলেন রন, সেটি জয়সলমিরের উপরে মাঝ আকাশেই বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন রন।

প্রাথমিকভাবে স্বামীর মৃত্যু বিহ্বল করে দিয়েছিল দীপিকাকে। যুদ্ধবিমানের ককপিটে আর জীবনে কখনও পা রাখতে পারেননি দীপিকা। কিন্তু একটা সময় তিনি বুঝতে পারেন, রনের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়িত করতে হলে তাকে আরও ধৈর্যশীল হতে হবে। তিনি নিজেকে সামলে নেন। এয়ারফোর্সের চাকরি ছেড়ে তিনি ফিরে যান পড়াশোনায়। এমবিএ কোর্স কমপ্লিট করেন। এবং শেষ পর্যন্ত কর্পোরেট সেক্টরে একটি চাকরি নেন।

বর্তমানে দিল্লিতে একটি ফ্ল্যাটে একাই থাকেন দীপিকা। সঙ্গী বলতে একটি কুকুর, আর সর্বক্ষণের একজন পরিচারিকা। আর হ্যাঁ, অদৃশ্য সঙ্গী হিসেবে রয়েছে রনের স্মৃতি। কাজের ব্যস্ততার মধ্যে বেশ কেটে যায় তার দিনগুলো।

রনের শূন্যতা অনুভব করেন ঠিকই, কিন্তু যখনই তার মনে পড়ে যে, রন নিজের স্ত্রীকে একজন স্থিতধী মানুষ হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, তখনই মনের জোর বেড়ে যায় দীপিকার। তিনি মনে মনে জানেন, অদৃশ্য সঙ্গী হিসেবে এখনও তার পাশেই রয়েছেন রন, রয়েছেন অনুপ্রেরণা হয়ে, জীবনীশক্তি হয়ে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!