• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক ঈদ, আমি ও আমার মা


হৃদয় আজিজ, নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৪, ২০১৭, ০২:৪৯ পিএম
এক ঈদ, আমি ও আমার মা

ঢাকা: পৃথিবীতে কোন সন্তানকে যদি বলা হয়, তোমার সবচেয়ে কাছের ব্যক্তিটি কে? সম্ভবত সবাই বলবে ‘আমার মা’। সব সন্তানের মত আমার মাও আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়, আমার বেহেশত।

২০১১ সাল, তখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি, আর থাকি উপজেলা শহরে মেসে। বাবা দিনমজুর হওয়ায় মেসের খরচ দিতে তার কষ্ট হতো। টিউশনি করতাম, তবে খরুচে হওয়ায় সেই টাকা নিজেরই লাগতো। তাই আমাকে নিয়ে বাবা-মায়ের একটু চিন্তা হতো; আমি জীবনে কিছু করতে পারবো কি না। সেবার ঈদুল ফিতরের সকালের ঘটনা।

আগের রাত থেকেই মা একটু অসুস্থ ছিলেন। তাই আমার মনটাও খারাপ ছিলো। তখন মায়ের কোলে এক বছরের ছোট ভাই আতিক। সকালে অসুস্থ শরীরে মা রান্না করে শুয়ে পড়লেন। আমার নামাজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে দেরি হওয়ায় বাবা একাই ঈদগাহে যান। আমি নামাজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে ঘরে গিয়ে দেখি মা বিছানায় কাতরাচ্ছেন। পাশে ছোটভাই মা-মা বলে ডাকছে। পাশে গিয়ে বসে মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই দেখি তিনি জ্ঞান হারিয়েছেন।

এদিকে আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ি। একটু স্বাভাবিক হয়ে পাশের বাড়ি থেকে বড় চাচিকে ডেকে আনি। তিনি তেল-রসুন গরম করে মায়ের হাত-পায়ে মাসাজ করতে থাকেন। এর পরেই মা প্রলাপ বকা শুরু করেন, ‘হৃদয়ের বাপ, তুমি কও হামাগেরে ছোল খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ও কিচ্চু করতে পারবিনে; তুমি দেকো ও একদিন ঠিকই বড় হবি।’

এ প্রলপ যখন মা বকছিলো তখন চাচি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো, আর আমার চোখ দিয়ে অজান্তেই পানিয়ে গড়িয়ে পড়ছিলো। মার হার্টের অসুখ আগে থেকেই ছিলো। তাই বাড়িতে ওষুধ আনাই থাকতো। চাচি ও আমার সেবায় মার জ্ঞান ফিরে আসে। এরপর ওষুধ খাওয়ায়ে দিলে একটু সুস্থ হয়ে ওঠেন।

তখন প্রায় দুপুর বারোটা বেজে গেছে তাই আমার আর ঈদগাহে যাওয়া হয়নি। মা যখন ওই প্রলাপগুলো বকছিলেন তখন আমার মনে হচ্ছিলো- ওগুলো মার মুখ দিয়ে সৃষ্টিকর্তা বলে দিচ্ছেন। সেদিন আমি বুঝতে পেরেছি, মা তার সন্তানকে কতটা ভালোবাসেন।

এর আগের ঈদগুলো আমার কাটাতো বাইরে বাইরে। মা-বাবাকে তেমন পাত্তাই দিতাম না। কিন্তু, সেদিন মার আঁচল থেকে একটুও দূরে যাইনি। সেই ঈদটাই আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের ঈদ ছিল।

আজ মাকে ছেড়ে অনেক দূরে থাকতে হয়। হয়তো তিন মাস, চার মাস পর দেখা হয়। অনেক ঈদও মায়ের সঙ্গে করা হয় না। মাকে ছেড়ে প্রথম ঈদ করেছি ২০১৫ সালে। সেদিন সকালে মা আমাকে ফোন দিয়ে কেঁদেছিলেন। সে ঈদটা আমার সবচেয়ে খারাপ গেছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!