• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এক নজরে আওয়ামী লীগের ২০টি সম্মেলন


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ২২, ২০১৬, ০৫:৩১ পিএম
এক নজরে আওয়ামী লীগের ২০টি সম্মেলন

ঢাকা : দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যমন্ডিত দল বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ ৬৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ দলটি ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এর প্রথম কাউন্সিল (দলীয় সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে। 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিল শুরু হলো শনিবার (২২ অক্টোবর) থেকে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে (ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান) এর মহাযজ্ঞ চলছে। রোববারও (২৩ অক্টোবর) চলবে।

এবার এক নজরে দেখে নেয়া যাক আওয়ামী লীগের ২০টি কাউন্সিল (সম্মেলন)।

আওয়ামী লীগের জন্ম
১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের জন্য প্রথম সমাবেশ হয় ঢাকার কেএম দাশ লেনের কেএম বশির হুমায়ূনের বাসভবন ‘রোজ গার্ডেনে’। আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে সেখানে বক্তব্য প্রদান করেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। এখানেই মূলত স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল হিসেবে জন্ম নেয় বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তখন অবশ্য এর নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’।

দ্বিতীয় কাউন্সিল
১৯৫৩ সালের ১৪ নভেম্বর ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে প্রথমবারের মতো কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের। এই কাউন্সিলে গঠিত কমিটিতে সভাপতি ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তৃতীয় কাউন্সিল
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় কাউন্সিল হয় ১৯৫৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। ঢাকার সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত হওয়া এই কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের এজেন্ডাগুলো ছিল পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ এবং অবিলম্বে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ন।

একটি অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে সবার সামনে তুলে ধরতে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটা বাদ দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ রাখা হয়। দলের দ্বিতীয় কাউন্সিলেও সভাপতি ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশন (চতুর্থ)
১৯৫৬ সালের ১৯-২০ মে ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সাধারণ পরিষদের নির্বাচন দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার উপায় বের করাই ছিল এই কাউন্সিলের লক্ষ্য।

টাঙ্গাইলের কাগমারীতে বিশেষ কাউন্সিল (পঞ্চম)
টাঙ্গাইলের কাগমারীতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের আরেকটি বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এই কাউন্সিলেই স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ-বপন করা হয়। এখানে মূল আলোচ্যসূচি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি।

ষষ্ঠ কাউন্সিল
১৯৬৪ সালের ৬ ও ৭ মার্চ ঢাকার হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগিশ সভাপতি ও শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। এই কাউন্সিলে মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আজিজুর রহমান আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

সপ্তম কাউন্সিল ও ৬ দফা দাবি
হোটেল ইডেনে ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিলে ৬ দফা দাবি পুস্তিকাকারে বিতরণ করা হয়। এই কাউন্সিলে প্রথমবারের মত আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন তাজ উদ্দিন আহমেদ।

পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগে সর্বশেষ কাউন্সিল (অষ্টম)
হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে ১৯৭০ সালের ৪ জুন ১১৩৮ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ৬ দফার ভিত্তিতে রচিত ১১ দফা এই কাউন্সিলে গুরুত্ব লাভ করে। সেই সঙ্গে আগত ১৯৭০ সালের নির্বাচন নিয়েও এই কাউন্সিলে আলোচনা হয়। নির্বাচনকে একটি গণভোট হিসেবে দেখার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান কাউন্সিলের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমান।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল (নবম)
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হিসেবে অর্থাৎ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল। এই কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন জিল্লুর রহমান। সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে পুনরায় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য এই কাউন্সিলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার আগে শেষ কাউন্সিল (দশম)
১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের দশম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মারা যাওয়ার আগে এটিই ছিল আওয়ামী লীগের শেষ কাউন্সিল। দলীয় গঠনতন্ত্রে গণতান্ত্রিক ভাবধারা প্রণয়নের জন্য শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। কারণ নতুন গঠনতন্ত্র অনুসারে সরকারের দায়িত্বে থাকা কেউ দলের দায়িত্বে থাকতে পারবে না। ফলে এএইচএম কামারুজ্জামানকে সভাপতি ও জিল্লুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু ও আওয়ামী লীগের ১১তম কাউন্সিল
ঢাকার হোটেল ইডেনের প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই কাউন্সিলে আসলে নির্দিষ্ট কোন কাউন্সিলর ছিল না। তার পরিবর্তে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক করে ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়।

১২তম কাউন্সিল
১৯৭৮ সালের ৩, ৪ ও ৫ এপ্রিল দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আবদুল মালেক উকিলকে সভাপতি  ও আবদুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন (ত্রয়োদশ)
দলে নেতৃত্ব শূন্যতা ছিল দীর্ঘদিন। তা পূরণ হয় শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে। তাই ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি তিনদিন ব্যাপী এই কাউন্সিলে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন আবদুর রাজ্জাক। আওয়ামী লীগের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই কাউন্সিলে দলের ‘নীতি-নির্ধারণের’ দায়িত্ব অর্পিত হয় ‘সভাপতিমণ্ডলি’র ওপর।

চতুর্দশ কাউন্সিল
১৯৮৭ সালের ১ থেকে ৩ জুন পর্যন্ত চলা এই কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। সেই সঙ্গে নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।

সংসদীয় গণতন্ত্রে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল (পঞ্চদশ)
সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯২ সালের ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ তার জাতীয় কাউন্সিল করে। সেখানে ২০ সেপ্টেম্বর নতুন অর্থনৈতিক নীতিমালার আলোকে সর্বসম্মতিক্রমে দলের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনা হয়। এখানেও সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন জিল্লুর রহমান।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় থাকাকালীন কাউন্সিল (ষোড়শ)
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয় লাভের পর ১৯৯৭ সালের ৬ ও ৭ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এখানেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন।

বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল (সপ্তদশ)
বিএনপি ও স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি জামায়াত ইসলাম ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর একদিনের জন্য জাতীয় কাউন্সিলে বসে আওয়ামী লীগ। এখানে নতুন প্রাণ পায় দলটি। এ সময় শেখ হাসিনা সভাপতি ও মো. আবদুল জলিল সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরবর্তী আওয়ামী লীগের কাউন্সিল (অষ্টাদশ)
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরবর্তী ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আসার পর ২৪ জুলাই জাতীয় কাউন্সিলের আয়োজন করে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সভাপতি ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচন করা হয়।

উনিশতম কাউন্সিল
বঙ্গবন্ধু কনভেনশন সেন্টারে ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর একদিনের জন্য জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ঘোষণাপত্রের সংশোধনী এখানে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এবারও সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নির্বাচিত হন।

২০তম জাতীয় সম্মেলন
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বর্তমানে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন চলছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!