• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এক মন্ত্রীতে জিম্মি পুরো সরকার!


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭, ১০:০৮ পিএম
এক মন্ত্রীতে জিম্মি পুরো সরকার!

পিজি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েও বাড়ি যেতে না পেরে ভাঙা পা নিয়ে অসহায় গবতলী টার্মিনালে এক কিশোর

ঢাকা: জনগণকে জিম্মি করে দবি আদায়ে পথে নেমেছে পরিবহন শ্রমিকরা। অপরদিকে গ্যাসের দাম বাড়লে জনভোগান্তি বাড়বে বলে ব্যবসায়ীরা সরকারকে দাম না বাড়ানোর জন্য বলছেন। গ্যাস ও পরিবহন দুটো বিষয়ই সরাসরি জনগণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ঠ। এরমধ্যে পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ করে সরকারেরই এক মন্ত্রী। যিনি শ্রমিক নেতা বলেই পরিচিত। দুই খাতের দুর্ভোগ থেকে জনগণকে কীভাবে রক্ষা করবে তা নিয়ে বেশ চাপের মুখে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।

রাতের বেলা গুলিস্তান ফ্লাইওভার দিয়ে যাত্রাবাড়ি, শনিরআখড়া, মাতুয়াইলের পথচারিরা হেটেঁ চলেছেন

কোনোরকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করেই পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় শ্রমিকরা। মানিকগঞ্জে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় এক বাস চালকের যাবজ্জীবন সাজা হওয়ায় ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে খুলনা বিভাগের দশ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট চলছিল। অপরদিকে সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি চালকের ফাঁসির দণ্ড দিলে ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশব্যাপী পালন শুরু করে তারা। 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এই কর্মসূচি পালন করছে। এই সংগঠনটির সভাপতি হচ্ছেন বর্তমান নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান। এই সংগঠনটিই সারাদেশের পরিবহন খাতকে নিয়ন্ত্রণ করে। মালিক পক্ষকেও শ্রমিক সংগঠনটিকে হিসেব করে চলতে হয়। গ্যাসের দাম বড়ানোর সিদ্ধান্তে বাড়তি খরচ মেটানোর চিন্তায় উদগ্রীব হয়ে রয়েছে সাধারণ জনগণ। এরপরেই আবার মঙ্গলবারের পরিবহন ধর্মঘট জনজীবনকে দুর্বিষহ করে ফেলেছে। এসবের মধ্যেও সরকার চলমান এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করেনি। যানবাহন না পেয়ে বগুড়ার কিছু পরীক্ষার্থীকে দৌড়ে কেন্দ্রে যেতে দেখা গিয়েছে।

বয়োজ্যেষ্ঠ, নারী ও শিশু, বাড়ি ফেরত রুগি ও তাদের স্বজনদের দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়। অফিসগামী ও বাড়ি ফেরত যেতে রিকশা ও পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছে বেশিরভাগকেই। এ সুযোগে রাজধানীর সড়কগুলোতে উচ্চ ভাড়ায় দাপিয়ে চলেছে রিকশাচালকরা। ঢাকা শহরের দুই কোটি মানুষেরে এই দুর্ভোগ শুরু হলো আজ থেকে। একদিন পার হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। অপরদিকে শ্রমিক সংগঠনটির পক্ষ থেকেও ধর্মঘট প্রত্যাহারের কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি।

গড়ি না পেয়ে গুলিস্তান ফ্লাইওভারের নিচে সিএনজি ও রিক্সার অপেক্ষায়

সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হরতালকে অযৌক্তিক ও আদালত অবমাননা বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু সরকারের প্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েও নিজ দলের সমর্থনপুষ্ট শ্রমিক সংগঠনটির কর্মসূচি বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেননি তিনি। বিষয়টিকে অনেকেই ভালো চোখে দেখছেন না। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মাদ এরশাদ এই ধর্মঘটকে দমন করার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।

অথচ ধর্মঘটের বিষয়ে চালকদের পক্ষে সাফাই গাইলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেছেন, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারেন। চালকেরা মনে করেছেন, তারা মৃত্যুদণ্ডাদেশ বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশের মতো রায় মাথায় নিয়ে গাড়ি চালাবেন না। তাই তারা স্বেচ্ছায় গাড়ি চালাচ্ছেন না। এটাকে ধর্মঘট নয় ‘স্বেচ্ছায় অবসর’ বলা যেতে পারে। এই জনদুর্ভোগে বোদ্ধা মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের এক মন্ত্রীর কাছে দল ও পুরো সরকার জিম্মি হয়ে গেল কি-না।

পায়ে হেঁটে গন্তব্যে

যেকোনো হরতালে দেশের পুলিশ বাহিনীর লক্ষ্যনীয় তৎপরতা দেখা যায়। কিন্তু এই ধর্মঘটে পুলিশের কোনো ভূমিকা দেখতে পায়নি গণমাধ্যম। সাধারণ জনগণ বিশ্বাস করতে চায়, দল ও সরকারের ওপর প্রধানমন্ত্রীর পুরো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। মন্ত্রীরা যেখানে ব্যর্থতার পরিচয় রেখেছেন, সেখানে অতীতের মতো প্রধানমন্ত্রী এবারও ভূমিকা রাখবেন।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!