• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একই কায়দায় স্কুল ফেরত ৫০০ কিশোরীকে ধর্ষণ


আন্তর্জাতিক ডেস্ক জানুয়ারি ১৭, ২০১৭, ০১:২০ পিএম
একই কায়দায়  স্কুল ফেরত ৫০০ কিশোরীকে ধর্ষণ

ঢাকা: বাবার বন্ধু সেজে জামা কিনে দেয়ার কথা বলে দিল্লির ৫০০ কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে সুনীল রাস্তোগির (৩৮)। ১২ বছরে একই কায়দায় স্কুল ফেরত ওই সব কিশোরীদের ধর্ষণ করেছে এই ধর্ষক। ধর্ষক সুনীল রাস্তোগির উত্তর প্রদেশের রামপুরের বাসিন্দা। তিনি পেশায় দর্জি। 

গত শনিবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে নিজের কুকীর্তির কথা স্বীকার করে সুনীল। জানিয়েছেন, ১২ বছরে তার হাতে অন্তত ৫০০ কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। লাল জ্যাকেট আর বিজোড় দিন ছিল তার কাছে সৌভাগ্যের। এক বিশেষ লাল জ্যাকেট পরেই বিনা বাধায় একের পর এক কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। আর সেই লাল জ্যাকেটের সূত্রেই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।

পাঁচ সন্তানের জনক সুনীল জানান, দিল্লিই ছিল তার প্রিয় জায়গা। ক্যালেন্ডারে দাগানো থাকত বিজোড় সংখ্যার তারিখ। সেই শুভ দিন দেখেই দিল্লিতে তার আসা হতো। স্ত্রী জানতেন, ব্যবসার কাজে দিল্লি যাচ্ছে সে।

সাত থেকে এগারো এই ছিল তার পছন্দের বয়স। পকেটে থাকত সব স্কুলের নাম-ঠিকানা। ঠিক বেলা ২টা থেকে ৪টার মধ্যে রাস্তায় নামতেন সুনীল। সেই সময়ই স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে মেয়েরা। এক সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে কেউ পিছিয়ে পড়লেই এগিয়ে যেত সুনীল। বলতেন, তিনি তার বাবার বন্ধু। তাকে জামা ও পোশাক দিতে এসেছেন। প্রতিবার প্রত্যেকের জন্য নতুন নতুন জামা বানিয়ে আনতেন। কিশোরীদের ভুলিয়ে কখনও নিউ অশোক নগরের একটি পরিত্যক্ত সিঁড়ির কোণে, কখনও কোনো ঘুপচি গুদাম বা অন্ধকার গলিতে নিয়ে যেতেন।

সুনীল এক সময় থাকত পূর্ব দিল্লির কল্যাণপুরীতে। ২০০৪ সালে এক প্রতিবেশীর মেয়েকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সামাজিক দুর্নামের ভয়ে মেয়েটির পরিবার পুলিশের কাছে না যাওয়ায় পার পেয়ে যান সুনীল। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফের আরেকটি মেয়েকে ধর্ষণ করেন। এবারও পুলিশের কাছে যায়নি পরিবার। ফলে আবারো বেঁচে যান সুনীল। তবে প্রতিবেশীদের চাপে কল্যাণপুরী ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। উত্তর প্রদেশের রুদ্রপুরে চলে যান সপরিবারে।

পুলিশকে সুনীল আরও জানিয়েছেন, শুধুমাত্র বিজোড় সংখ্যার তারিখেই অপারেশন চালাতেন তিনি। মন্ত্র জপতে জপতে নামতেন ট্রেন থেকে। তার বিশ্বাস ছিল লাল জ্যাকেটই বাঁচিয়ে দেবে তাকে। গ্রেপ্তার হওয়ার পরও তাই বলেছেন সুনীল।

প্রশ্ন উঠছে, অপরাধের পর অপরাধ করেও কীভাবে এত বেপরোয়া ছিলেন সুনীল রাস্তোগি? পুলিশ মনে করছে, কুকর্ম করেও বার বার ছাড় পেয়ে সাহস বেড়ে গিয়েছিল তার। ২০০৬ সালে উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুরে ছয়মাসের জন্য জেল খাটতে হয় তাকে। কিন্তু সেই এক বারই।

২০১৩ সালের ডিসেম্বরের পর নড়েচড়ে বসে দিল্লি পুলিশ। কয়েক দিনের ব্যবধানে নিউ অশোকনগর থানায় দুই কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। দুই ক্ষেত্রেই নির্যাতনের ধরন এক। দুজনকেই নতুন জামার লোভ দেখানো হয়। অভিযোগকারীরা জানান, ছেড়ে দেয়ার জন্য কান্নাকাটি করলে হাসতে থাকেন হেনস্থাকারী। ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে কিছু তথ্য হাতে পায় পুলিশ। কিন্তু সুনীলকে ধরার জন্য সে সব যথেষ্ট ছিল না।

তখন এলাকার বাসিন্দা, দোকানদার, রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। তাদের থেকেও জানা যায় লাল জ্যাকেট পরা একটি লোকের কথা। তাদের দেয়া বিবরণ এবং দুই কিশোরীর বর্ণনা জুড়ে আঁকানো হয় ছবি। এবার সেই ছবি দেখিয়ে শুরু হয় তল্লাশি। কিন্তু পুরো পূর্ব দিল্লিতে তল্লাশি চালিয়েও সন্দেহভাজন কাউকে পাওয়া যায়নি সে সময়।

এরপর পুরো উত্তর ভারতে গত ১২ বছরের অপরাধসংক্রান্ত নথি ঘাঁটতে শুরু করে পুলিশ। এক বার জেলে যাওয়ায় পুলিশের খাতায় নাম ছিল সুনীলের। ফটো ও স্কেচ মিলিয়ে তৈরি করা হয় একশো জনের তালিকা। তা থেকে চিহ্নিত করা হয় সুনীলকে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সুযোগের সন্ধানে ছিল পুলিশ। এর মধ্যেই তারা খবর পায়, শনিবার দিল্লিতে আসবেন সুনীল। তাকে ধরার জাল পাতা হয়। সে রাতে পূর্ব দিল্লির কোন্ডলির গোপন ডেরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুনীলকে।

নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মেনকা গাঁধী জানান, সারা দেশে যৌন হেনস্থার একটি রেকর্ড তৈরির প্রস্তাব বছর দুই আগেই দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা আজও হয়নি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!