• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
নাসিক নির্বাচন

এককাট্টা বিএনপি, আ.লীগে চোরা ফাটল


নিজস্ব প্রতিবেদক  ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬, ১১:১১ এএম
এককাট্টা বিএনপি, আ.লীগে চোরা ফাটল

বিএনপির এখন মূল দৃষ্টি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের দিকে। কারণ এ নির্বাচনকে তারা একটি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করতে চায়। এ লক্ষ্যেই দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এখন তৎপর। নাসিক নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হলে দলটির পক্ষ থেকে বলা হবে, ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। অতএব তাদের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই। অন্যদিকে পরাজিত হলে কারচুপির অভিযোগ এনে বলা যাবে- এই সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন একটি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার। 

এ লক্ষ্যে নাসিক নির্বাচনে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। দলের হেভিওয়েট নেতারা প্রতিদিনই চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা। অন্তত এক ডজন নেতা কয়েক দিন ধরে নারায়ণগঞ্জেই থাকছেন। এর বাইরে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারাও ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটছেন নারায়ণগঞ্জে। 

সেই তুলনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঠে দেখা মিলছে কম। এর কারণ হিসেবে ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রীয় নেতারা মন্ত্রী-এমপি হওয়ায় নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী দলীয় প্রার্থীর প্রচারণায় মাঠে নামতে পারছেন না; কিন্তু সংসদে না থাকার সর্বোচ্চ সুবিধা নিচ্ছে বিএনপি। 

আওয়ামী লীগের কেন্দ্র, এমনকি খোদ দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা ওপরে-ওপরে এককাট্টা। কিন্তু ভেতরের খবর বলছে ওই এককাট্টায় ‘চোরা ফাটল’ রয়ে গেছে। শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে আইভীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। তার বড় ভাই ও জাতীয় পার্টির (জাপা) এমপি সেলিম ওসমানও নীরব রয়েছেন। তবে নির্বাচনের আর মাত্র তিন-চার দিন বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত শামীম-সেলিমের সঙ্গে দেখা মেলেনি দলের মেয়র প্রার্থী আইভীর।

জানা গেছে, শুক্রবার রাতে সেলিম ওসমানের সঙ্গে বসেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ। এ সময় সেলিম ওসমান তাকে বলেছেন, ‘আইভী তো আমার কাছে ভোট চায়নি, দোয়া চেয়েছে। আমি দোয়া করছি, প্রয়োজনে তার জন্য দোয়া চাইতে মিলাদ দিতে পারি।’ তবে অপর এক প্রতিক্রিয়ায় শামীম ওসমান বলেন, ‘আইভী কোথায় কী বলছে তা নিয়ে আমি ভাবছি না, আমার নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি নেত্রীর নির্দেশে নৌকার জন্য কাজ করছি।’

এদিকে সেলিনা হায়াৎ আইভী বেশ দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, ‘আমি যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। আমি মনে করি, উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্যই নারায়ণগঞ্জের মানুষ নৌকা প্রতীকে ভোট দেবে। নৌকার পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত নৌকা জয়ী হবে।’ গতকাল (১৮ ডিসেম্বর) রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শহরের ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগের সময় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় আইভি সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসির পরিবর্তন দাবি করে বলেন, ‘সিদ্ধিরগঞ্জের ওসির পরিবর্তন চাই। এটা ওই এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও জনগণের দাবি। ওসি সেখানে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করছেন।’ শামীম ওসমানের অবস্থান সম্পর্কে আইভী বলেন, ‘উনি (শামীম ওসমান) চাইলেও আইনের বাধার কারণে আসতে পারবেন না। তবে সব নেতাকর্মী শুরু থেকে আমার পাশে ছিল এখনো আছে।’

অদৃশ্য তৃতীয় শক্তি ষড়যন্ত্র করছে কি না প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম যত পক্ষ নিয়ে আলোচনা হোক না কেন, ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত থাকলে কোনো পক্ষের ক্ষমতা নেই। কোনো কিছুই হবে না।’ নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে আইভী বলেন, ‘আমি প্রথম থেকেই নির্বাচন কমিশনকে বলে আসছি, আমি সরকারি দলের প্রার্থী হিসেবে কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা নিতে চাই না। কোনো পক্ষপাতিত্ব চাই না। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে নৌকা জয়ী হবে।’

নারায়ণগঞ্জের ফলাফল আমেরিকার ট্রাম্প ও হিলারি নির্বাচনের মতো হবে কি না এ রকম প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘এটা বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ। তবে জনগণ যে রায় দেবে তা মেনে নেব।’

অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, ‘যদি কোনো ধরনের ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং না হয় তাহলে ধানের শীষ বিপুল ভোটে জিতবে। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আমি আশা করব, নির্বাচন কমিশন এবার এ ধরনের কিছু করবে না।’

গতকাল (১৮ ডিসেম্বর) রবিবার সকাল থেকে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপার বন্দরে ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগের সময় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সাখাওয়াত। তিনি বলেন, ‘আমি নদী পার হয়ে এসেছি। আমি দেখেছি, মানুষের কী কষ্ট। নদীর দুই পারের মানুষই চায় দ্রুত একটি সেতু। আমি নির্বাচিত হতে পারলে প্রথমেই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করব।’ বিএনপি প্রার্থী বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুতের পাশাপাশি হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স ফি কমানো হবে। এসব ট্যাক্সের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।’

সাখাওয়াত বলেন, ‘আমি একটি মাস্টারপ্ল্যান করে কাজ করব। নারায়ণগঞ্জে অনেক সমস্যা, যা বিগত দিনে দূর হয়নি। আমি মেয়র হলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেব।’

‘ধানের শীষের জোয়ার’ বইছে দাবি করে সাখাওয়াত বলেন, ‘যেখানেই যাচ্ছি মানুষ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সবাই ধানের শীষে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!