• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একজন পুলিশের পোশাক, পুরো বাংলাদেশের পোশাক


ফেসবুক থেকে ডেস্ক জুলাই ৩০, ২০১৭, ০৫:১০ পিএম
একজন পুলিশের পোশাক, পুরো বাংলাদেশের পোশাক

ঢাকা: একজন পুলিশের ভুল যেমন পুরো পুলিশ বাহিনীর ভুল, তেমনি একজন পুলিশের পোশাক পুরো বাংলাদেশের পোশাক। সুতরাং আইন এবং অপরের অধিকারের প্রতি সবাই শ্রদ্ধাশীল না হলে তার ফল হতে পারে বিপদজনক। 

বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া এরকম একটি গল্প তুলে ধরেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন। 

রোববার (৩০ জুলাই) ফেসবুকে দেয়া Sunny Sanwar -এর সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো: 

‘অফিস থেকে খবর আসল অপহরণকারীরা টাকা রিসিভ করতে রাজী হয়েছে। তাই সকাল সকাল বিছানা ছেড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। রাস্তায় বেশ ট্রাফিক জ্যাম। এদিকে হাতে সময় মাত্র দুই ঘন্টা। ডিবি অফিসে টিম রেডি হয়ে বসে আছে। আমি গেলেই তারা বের হবে। উত্তরা থেকে মহাখালী আসতে ৪৫ মিনিট সময় লাগলেও মহাখালী এসে আটকে গেলাম।

অফিসে পৌঁছে টিম নিয়ে কেরানীগঞ্জ যেতে হবে। সময় দরকার ৪ ঘন্টা। পেয়েছি মাত্র ২ ঘন্টা। টেনশনে অস্থির লাগছে। গাড়ির সীটে বসে বসে অপহরণকৃত সাত বছরের সেই শিশু বাচ্চার চেহারাটা আঁকছি। তাকে বুঝি আর বাঁচানো গেল না! আজ টাকা না দিলে বুড়িগঙ্গার পানি থেকে ছেলেকে খুঁজে নিতে বলে দিয়েছে অপহরণকারী।

যাহোক, এবার রাস্তাটা একটু ফ্রি হল, কিন্তু আমাদের গাড়ির সামনে একটা প্রাইভেটে কার এমনভাবে দাঁড়িয়ে গেল যে আমরা কোন দিকেই যেতে পারছি না। এদিকে চোখের সামনে দিয়ে একটা সিগন্যাল ক্লেয়ার হল, কিন্তু এক বিন্দুও সামনে যাওয়া গেল না।

পুলিশের ড্রাইভার বলে কথা, হর্ণ বাজাতে থাকল। বিরক্তিকর হর্ণ! তবুও গাড়িটি সরছে না। এদিকে পিছনেও অসংখ্য গাড়ি। ড্রাইভার এবার দীর্ঘক্ষণ হর্ণ চেপে ধরল। এতে সামনের গাড়ির ড্রাইভার বিরক্ত হয়ে বারবার পিছনের দিকে তাকাচ্ছে আর দাঁত কটমট করছে। কিন্তু গাড়ি সরাচ্ছে না। দুই ড্রাইভারই পরষ্পরের উপর খুব বিরক্ত। একজন সরছে না, আরেকজন হর্ণ ছাড়ছে না। আর আমি বসে বসে মেডিটেশন করছি।

Caption

শেষমেষ কোন উপায়ন্তুর না দেখে আমাকে ছাড়াই টিমের সদস্যদের ডিবি অফিস থেকে বের হতে বললাম। তারা আমাকে ছাড়াই চলে গেল। আমি গাড়িতেই বসে রইলাম। একজন ভদ্রলোক হাতে ফল-ফলাদির একাধিক প্যাকেট নিয়ে সামনের গাড়িটিতে উঠে বসলেন। এবার সেই গাড়িটি চলতে শুরু করল। পিছে পিছে আমরাও ছুটলাম।

অধিকাংশ গাড়ির ড্র্বাইভারই পুলিশের গাড়ি দেখলে একটু সমীহ করে। সমীহটা হয়তো ভয় থেকেই করে। কিন্তু আজ সমীহ তো দূরের কথা উল্টা বেকুব হয়ে গেলাম-

পুলিশের গাড়ির ড্রাইভার খুব দ্রুত সেই থেমে থাকা গাড়িটি অতিক্রম করে সামনে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর সেই গাড়িটি আবার আমাদের গাড়িটিকে অতিক্রম করে একটু সামনে গিয়েই গাড়ির মাথা বাঁকা করে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে আমাদের আটকে দিল। 

হরণের শব্দে বিরক্ত হওয়া সেই ড্রাইভার এবার জানালা খুলে আমার পুলিশ ড্রাইভারকে বলল, "একেবারে চাবাইয়া খাইয়া ফালামু। হর্ণ বাজাস না? ঠিকভাবে গাড়ি চালাবি, না হয় পাব্লিকের মাইর মাটিতে পরব না কইলাম।"

আমার ড্রাইভার স্তব্ধ, বডি গার্ড বেকুব আর আমি 'গবেষণার বিষয়বস্তু' পেয়ে নির্লিপ্ত রইলাম। 'চেতা' ড্রাইভারটি গাড়ি টান মেরে চলে গেল। আমরা ২০-২৫ মিনিট নিশ্চুপ রইলাম। কেউ কারও সাথে কথা বলছি না। এটা কি হল! পাবলিক গাড়ির ড্রাইভার অন্যায় করে আবার পুলিশের গাড়িকে ফাপর দিল??!!

গাড়ির মালিক অনেক ক্ষমতাবান কেউ ছিলেন হয়তো। তাই হয়তো ড্রাইভারের "সূর্যের থেকে বালু গরম' অবস্থা ছিল। সে তার রাগ এবং ক্ষমতার পুরোটা প্রদর্শন করলেও আমরা ৫%ও করতে পারলাম না।

এটা বর্তমানের অনেকগুলো ঘটনার একটি উদাহারণ মাত্র। গাড়িওয়ালা কিছু লোকদের ক্ষমতার সাথে রাষ্ট্রীয় পুলিশের আইনী ক্ষমতার এই ভারসাম্যহীনতা কাম্য নয়। এসবের প্রতিকারের জন্য অনেক ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশদের মামলা পর্যন্তও করতে হচ্ছে। 

একজন পুলিশের ভুল যেমন পুরো পুলিশ বাহিনীর ভুল, তেমনি একজন পুলিশের পোশাক পুরো বাংলাদেশের পোশাক। আইন এবং অপরের অধিকারের প্রতি সবাইকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সে ড্রাইভার-পুলিশ-গাড়ির মালিক যেই হোক না কেন, এটা যে কোন দেশের ন্যুনতম নাগরিক দায়িত্ব। এটা মেনে চললে একদিকে যেমন সভ্যতার ছুঁয়া পাওয়া যাবে, তেমনি কারও অপহৃত সন্তানকেও যথা সময়ে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেএ

Wordbridge School
Link copied!