• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, রাজীব মীর বহিষ্কার


জবি প্রতিনিধি জুলাই ১০, ২০১৭, ০৬:০১ পিএম
একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, রাজীব মীর বহিষ্কার

ঢাকা: একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মীর মোশারেফ হোসেন (রাজীব মীর) স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত হয়েছেন। এই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষককে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হলো। 

তিনটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দোষী প্রমাণিত হওয়ার পর রোববার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৪তম সিন্ডিকেট সভায় তার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, রাজীব মীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ৫ এপ্রিল সাংবাদিকতা বিভাগের এক ছাত্রী প্রশাসনের কাছে রাজীব মীরের বিরুদ্ধে একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি প্রদান, যৌন হয়রানিসহ বেশকিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন। এসময় তিনি মুঠোফোন রেকর্ডসহ বিভিন্ন প্রমাণাদিও উপস্থাপন করেন।

ওই ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ট্রেজারার সেলিম ভূঁইয়াকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেলে একই বছরের ১১ এপ্রিল রাজীব মীরকে বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। এ কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রমাণ হওয়ায় গত বছরের ২৮ এপ্রিল ৭১ তম সিন্ডিকেট সভায় রাজীব মীরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এদিকে, ওই ছাত্রীর অভিযোগের পর সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের একাধিক ছাত্রী রাজীর মীরের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলে রাজীব মীরের যৌন হয়রানির তদন্ত চলে। শিক্ষিকা লাইসা আহমেদ লিসার নেতৃত্বে ওই কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, জবির বাংলা বিভাগের শিক্ষিকা ড. হোসনে আরা বেগম জলিসহ কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন। 

তদন্ত চলাকালে অভিযোগকারীরা মুঠোফোন রেকর্ড, ফেসবুক চ্যাট, ম্যাসেজসহ বিভিন্ন প্রমাণাদি তুলে ধরেন। পাশাপাশি ছাত্রীদের সিনেমা হলে যেতে বাধ্য করা, বাসায় নিয়ে যাওয়া, একসঙ্গে একাধিক ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভনে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টাসহ নানা বিষয় উঠে আসে। পরে এ কমিটির তদন্তেও রাজীব মীর দোষী সাব্যস্ত হন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের প্রতিবেদনে রাজীব মীরের বিরুদ্ধে জোর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

এর আগে রাজীব মীরের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে ক্যাম্পাসে দুটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনও আন্দোলনে নেমেছিল।

এদিকে দুটি তদন্তে রাজীব মীরের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের তৎকালীন সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে উচ্চতর তদন্ত কমিটি (ট্রাইবুন্যাল) গঠন করা হয় গত বছরের নভেম্বরে। 

ওই কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব বেলায়েত হোসেন তালুকদার ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নূরে আলম আবদুল্লাহ। এ কমিটি গত বছরের নভেম্বরে রাজীব মীরকে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থিত (গণশুনানি) করে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজীব মীর অভিযোগকারী ছাত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন। এ কারণে তিনি বারবার ক্ষমা চেয়ে আসছেন বলেও বিচারকদের জানান। জবাবে বিচারকরা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীনরা শিক্ষক হতে পারে না। 

অন্যদিকে ‘প্রথম স্ত্রীকে ছেড়ে ছাত্রীর সাথে সম্পর্কে জড়ানোর চেষ্টার’ অভিযোগের জবাবে রাজীব মীর বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যান। বিচারকদের জেরার মুখে তিনি বলেন, এনগেজমেন্ট হলেও পরে তা ভেস্তে যায়।

কিন্তু তার প্রথম বিয়ের কাবিননামা বিচারকদের কাছে রয়েছে জানালে তিনি বলেন, এনগেজমেন্ট ও বিয়েকে তিনি একই ভেবেছিলেন। পরে এই কমিটির প্রতিবেদনেও অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় রাজীব মীরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।

এর আগে ২০০৪ সালের ২৯ মার্চ পূর্বতন কর্মস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে ছাত্রীরা রাজীব মীরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল, যা জাতীয় দৈনিকগুলোতেও প্রকাশিত হয়েছিল। ওই বিশ্ববিদ্যালয়েও তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছিল।

এছাড়া ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজীব মীরের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের মদদ দেয়া, ছাত্রীদের অনৈতিক প্রস্তাব দেয়াসহ নানা অভিযোগ এনে তার অপসারণ দাবি করে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছিল।

অন্যদিকে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হালিম প্রামাণিককে কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৪তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে প্রকাশনা জালিয়াতির অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেএ

Wordbridge School
Link copied!