• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
ভূমিকম্পের পূর্বপ্রস্তুতি বলতে ‌‘চিঠি চালাচালি’

এখনও ঠাঁই দাঁড়িয়ে রাজধানীর ৩২১ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ১৫, ২০১৬, ১২:২৬ পিএম
এখনও ঠাঁই দাঁড়িয়ে রাজধানীর ৩২১ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন

বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। যে কোনো সময় রিখটার স্কেলে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। অথচ শুধু রাজধানীতেই অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৩২১টি ভবন রয়েছে, যা ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ধসে পড়বে। হতাহত হবে কয়েক লাখ মানুষ। এসব ভবন অপসারণে গত এপ্রিলে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয় সরকার। 

কিন্তু আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও এখনও কাজই শুরু করেনি সংশ্লিষ্টরা। চিঠি চালাচালি আর কর্মশালার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে ভূমিকম্পের প্রস্তুতি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে উদ্ধার যন্ত্র কেনা ও করণীয় নির্ধারণে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী বলেন, আমাদের সীমিত সম্পদের মধ্যে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে যা যা করণীয় তার সবই করা হবে। আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশে এ ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার আশংকা নেই বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। 

নেচার জিওসায়েন্স সাময়িকী সোমবার (১১ জুলাই) ভূমিকম্প সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রায় এক যুগ ধরে যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের একদল বিজ্ঞানী গবেষণা করে তথ্য পেয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাঞ্চল এবং মিয়ানমারের কিছু অংশে প্রচণ্ড শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ হতে পারে। এতে ঢাকাসহ বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও বিপুল প্রাণহানির আশংকা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলটির বিস্তার প্রায় ২৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। এতে প্রায় ১৪ কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশংকা রয়েছে।

বুধবার (১৩ জুলাই) এ সংবাদ বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে। এটি ছিল ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। মানুষের মধ্যে ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তারপরও বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে এ বিষয়ে কোনো বৈঠক বা কর্মসূচি নেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও পাঠানো হয়নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা সকাল থেকেই বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গাইবান্ধা ছিলেন।

সেখান থেকে সচিব মো. শাহ কামাল জানান, ভূমিকম্পের ব্যাপারে সরকার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৩২১টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও পূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকেও চিঠি দেয়া হয়েছে। ১৬৯ কোটি টাকার উদ্ধারকারী যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। পাশাপাশি ১০০ কোটি টাকার কম্বল কেনার প্রক্রিয়া চলছে।

ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি কমাতে করণীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে কর্মশালা করা হচ্ছে। জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের পোস্টার ও হ্যান্ডবিল বিতরণ করা হচ্ছে। প্রায় ২০ লাখ স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

নেচার জিওসায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণার বিষয়ে সচিব বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে করণীয় নির্ধারণ করব।’

২৭ এপ্রিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠক। সেখানে রাজধানীর অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৩২১টি ভবন অপসারণ করার জন্য এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং বাড়ির হোল্ডিং নম্বর বাতিলসহ মোট ১২টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ওই বৈঠকে। সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করতে ১৮ মে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়। এর অনুলিপি রাজউক, সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা দফতর প্রধানদের দেয়া হয়।

কিন্তু রাজউক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ঠেলাঠেলিতে ঝুলে আছে এসব ভবন অপসারণ কার্যক্রম। আইনের অজুহাত দেখিয়ে, একে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে প্রায় দেড় মাস কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকেন সংশ্লিষ্টরা। ৬ জুন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় রাজউকের নেতৃত্বে ভবন অপসারণ করা হবে। এ কাজে শ্রমিক ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা দেবে তিন সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের এক মাস অতিবাহিত হলেও এখনও ভবন অপসারণের কার্যক্রম শুরু করেনি রাজউক।

৩২১টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ বিষয়ে শাহ কামাল বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে তাগিদ দিচ্ছি। এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও তিন সিটি কর্পোরেশন ভালো বলতে পারবে। কারণ এসব ভবন অপসারণের দায়িত্ব তাদের।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজউকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (বর্তমানে সদস্য উন্নয়ন) আবদুর রহমান বলেন, ‘আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই ভবন অপসারণের কাজ শুরু করা হবে।’

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম প্রায় অভিন্ন ভাষায় বলেন, কাজটি আমাদের নয়, রাজউকের। তারা কাজ শুরু করলে আমরা সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!