• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
উত্তরায় স্কুলছাত্র খুন

এখনো দমেনি ৫ গ্রুপের ‘কিশোর গ্যাংস্টার’রা


সুজন কৈরী জানুয়ারি ১৩, ২০১৭, ০২:৩২ পিএম
এখনো দমেনি ৫ গ্রুপের ‘কিশোর গ্যাংস্টার’রা

রাজধানীর উত্তরায় ‘গ্যাং ওয়ার’-এর বলি হলো ১৪ বছর বয়সী স্কুলছাত্র আদনান কবির। ‘কিশোর গ্যাংস্টার’ গ্রুপের অন্যতম সক্রিয় সদস্য আদনানকে কুপিয়ে ও বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ গ্রুপ। 

এরপর উত্তরায় দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়টি সামনে আসে। এসব গ্রুপ কিশোরদের নিয়ে গঠিত হলেও এরা ভয়ংকর। প্রয়োজনে প্রতিপক্ষের কিশোরকে খুন করতেও পিছপা হয় না।

হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি এ রকম কিশোর ‘গ্যাং ওয়ারেই’ মৃত্যু হয়েছে আদনানের। তবে সেই গ্যাং কোনো বড় সন্ত্রাসীদের নয়, কিশোরদের। গ্যাংয়ের সিনিয়র মেম্বারদের বয়স ১৬ থেকে ১৮ আর জুনিয়রদের ১৪-১৫ বছর।

প্রতিপক্ষের হামলায় নির্মমভাবে খুন হয় কিশোর আদনান। এর পরও এসব কিশোর গ্যাংস্টারের কার্যক্রমে কোনো ভাটা পড়েনি। তারা এখন প্রকাশ্যে চলাফেরা কমালেও অনলাইনে একে অপরকে হত্যারও হুমকি দিচ্ছে!

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরো উত্তরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে কিশোরদের পাঁচটি গ্যাংস্টার গ্রুপ। অস্ত্র, মাদকসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যার সঙ্গে তারা জড়িয়ে পড়ছে না। 

গ্যাংগুলো হলো, নাইনস্টার, ডিসকো বয়েজ উত্তরা, পাওয়ার বয়েজ উত্তরা, বিগ বস ও নাইন এমএম বয়েজ উত্তরা। নিহত আদনান নাইনস্টার গ্রুপের জুনিয়র মেম্বার ছিল। ডিসকো গ্রুপের সদস্যদের হামলায়-ই তার মৃত্যু হয়। আদনান নিজেও নাইনস্টার গ্রুপের সক্রিয় সদস্য ছিল।

ফুটফুটে সুন্দর চেহারার আদনানের বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। এ বয়সে পড়াশোনা আর খেলাধুলা নিয়েই থাকার কথা ছিল। কিন্তু কে জানত অসৎ সঙ্গে গ্যাং ওয়ারে পড়ে মরতে হবে তাকে! আদনান উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। 

স্থানীয়রা জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে এ পাঁচটি গ্রুপ প্রায়ই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তাদের ভয়ংকর সব কর্মকান্ড বড় সন্ত্রাসীদেরও হার মানায়। তাই বড়-ছোট সবাই তাদের ভয় পায়। সংঘর্ষ, অস্ত্র আর ক্ষমতার প্রদর্শন তো নিয়মিত ব্যাপার। 

এ ছাড়া বিকট শব্দে বাইক চালানো, পার্টি করা, মাদক সেবন ও স্কুল-কলেজের মেয়েদের উত্ত্যক্ত করাই এসব কিশোরের কাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাইলস্টোন কলেজের এক শিক্ষার্থী জানান, নিহত আদনান নাইনস্টার গ্রুপের সদস্য ছিল। ওই গ্রুপের লিডারের নাম তালাচাবি রাজু। আর ডিসকো বয়েজের লিডার ছোটন ও সেতু। এছাড়াও আরো তিনটি গ্রুপ রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপের সদস্যই প্রায় একই বয়সের এবং তারা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

আদনানের নির্মম মৃত্যুর পরও যে এসব কিশোরের টনক নড়েনি তার প্রমাণ মেলে নাইনস্টার গ্রুপের আরেক সদস্য চৌধুরী রাজের ফেসবুক পোস্ট থেকে। রাজ তার ফেসবুকে একটি স্ক্রিনশটসহ পোস্ট দেয়।

স্ক্রিনশটে দেখা যায়, রাফিউর রহমান রাফি নামে একজন রাজকে হুমকি দিয়ে ইনবক্সে লিখেছে, সে তাদের পরবর্তী টার্গেট। জবাবে রাজ পোস্টে লিখেছে, ‘পারলে আমারে মাইরালাইস, নইলে তোরা বাঁচবি না’। রাজের ফেসবুকে লেখা, ‘ভাই এটা আন্ডারওয়ার্ল্ড’। রাজকে হুমকি দেওয়ার ওই স্ক্রিনশটে মিম নামে একজন কমেন্ট করে, ‘একজনকে মেরে ওদের শান্তি হয়নি’। 

জবাবে রাজ বলে, ‘জানি না’। তাহশিন নামের আরেকজন কমেন্টেসে লেখে, ‘পুলিশকে জানাও রাজ।’ জবাবে সে লিখে, ‘পুলিশকে বিলিভ করি না, তারা কিছুই করতে পারবে না।’ মেহেরাব আহমেদ নামে একজন লেখে, ‘এই পোলাডা কই থাকে?’ 

উত্তরে রাজ বলে, ‘ফায়দাবাদ’। ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসে, ‘ওকে’। সেখানে রাজ আবার লেখে, ‘রাফু নাম পোলার মামা।’ মেহেরাব লেখে, ‘পোলার নাম্বার আছে কোনো তোর কাছে।’ জবাবে রাজ বলে, ‘না মামা’।

এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি মো. শাহ আলম বলেন, নিহত স্কুলছাত্র আদনান নাইনস্টার গ্রুপের মেম্বার ছিল। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ওই গ্রুপের সঙ্গে ডিসকো বয়েজ নামের আরেকটি গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছিল। ঘটনার দিন ডিসকো গ্রুপের সদস্যরা সেখানে অবস্থান করছিল, আদনানকে একা পেয়ে ওরা এ ঘটনা ঘটায়। 

ওসি আরো বলেন, ‘আদনান হত্যাকান্ডে আমরা নাফিজ মো. ডন (১৯) ও সাদাফ (১৬) নামে দুজনকে গ্রেফতার করেছি। মামলাটি অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। বাকি আসামি গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। 

তাদেরকেও যথাসময়ে গ্রেফতার করা হবে। কেউ পালিয়ে যেতে পারবে না। কারণ প্রত্যেকের ফেসবুক আইডি ও স্থায়ী ঠিকানা আমাদের হাতে রয়েছে।’

গত ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় একদল ছেলে উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবিরকে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। তার বাবা বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় সেদিনই নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। 

মামলার আসামিরা হলেন, নাফিজ মো. আলম ওরফে ডন (১৯), নাঈমুর রহমান অনিক (১৯), সাদাফ জাকির (১৬), রায়হান আহমেদ সেতু (১৯), রবিউল ইসলাম (১৮), মো.আখতারুজ্জামান ছোটন (১৯), আহমেদ জিয়ান (১৯), খন্দকার শুভ (১৮) ও নাজমুস সাকিব (২২)।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!