• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
গুলশান হামলা

এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল পরিকল্পক ও অর্থদাতারা!


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১, ২০১৭, ০২:৫৮ পিএম
এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল পরিকল্পক ও অর্থদাতারা!

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ জোগানদাতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেলেও তাদের গ্রেফতার করতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিইউ)। হামলায় জড়িতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১২ জঙ্গি বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছেন।

এদিকে গুলশান হামলাসহ র‌্যাব-সিটিইউয়ের আটটি অভিযানে নারী-কিশোরসহ ৩৮ জঙ্গি নিহত হন। তাদের মধ্যে নব্য জেএমবির শীর্ষপর্যায়ের নেতাও রয়েছেন। তবে এই নিয়ে র‌্যাব-পুলিশের ভিন্ন মতও আছে। ঘটনাস্থল থেকে সিআইডি যেসব আলামত পরীক্ষার জন্য নিয়েছে, তার রিপোর্টও ছয় মাসে হাতে পায়নি কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তদন্তকারী সূত্র জানিয়েছে, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে যারা নিহত হয়েছেন বা আটক হয়েছেন তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে গুলশান হামলার সঙ্গে জড়িত। ওই হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এ পর্যন্ত দুজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তারা হলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম ও কল্যাণপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আটক রাকিব ওরফে রিগ্যান। এর পাশাপাশি এ ঘটনা তদন্তে শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তাদের মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া ৩২ প্রত্যক্ষদর্শী তাদের জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে কাউন্টার টেররিজম ধারণা করে, এই হামলার অন্যতম ‘মাস্টারমাইন্ড’ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডা প্রবাসী তামিম আহমেদ চৌধুরী। কিন্তু পরে তদন্তে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, তামিম আহমেদ চৌধুরী হোলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলায় অপারেশন কমান্ডার হিসেবে কাজ করেছেন। এদিকে গুলশান হামলায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রগুলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার একটি অস্ত্র কারখানায় তৈরি করা হয়েছিল। চাঁপাই নবাবগঞ্জের সীমান্ত পথ দিয়ে ট্রাকে আমের ঝুড়িতে করে অস্ত্রগুলো ঢাকায় আনা হয়। অস্ত্রের বাহক আটক হলেও ওইসব আগ্নেয়াস্ত্র তৈরিতে অর্থ কারা দিয়েছে তা এখনো শনাক্ত করা যায়নি।

গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মূল পরিকল্পনাকারী কে- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির মিডিয়া শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, এ হামলার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে অনেকেই পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছেন। হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী তামিম আহমেদ চৌধুরীও নিহত হয়েছেন। এর সঙ্গে আরো বেশ কয়েকজন জড়িত রয়েছেন, যাদের শনাক্ত করা ও গ্রেফতারেরর চেষ্টা চলছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের মুখপাত্র ‘দাবিক’-এর একটি সংখ্যায় তামিম আহমেদ চৌধুরী নিজেকে আবু দুজানভ আল-বাঙ্গালী নামে ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণার পর পর বাংলাদেশে আইএসের কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা প্রকাশ হয়। সে সময়ের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে লেখক, শিক্ষক, ব্লগার, বিভিন্ন ধর্মের মানুষসহ অন্তত অর্ধশত ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। আত-তামকীন নামে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ১১টি হত্যার দায় স্বীকার করে আনসার আল-ইসলাম নামে একটি জঙ্গি সংগঠন। ওয়েবসাইটে তাদের এই তথ্য দুই নামে প্রচার করা হয়। কখনো প্রচারকারী নিজেকে আবু ইউসুফ আল-বাঙ্গালী আবার কখনো আবু ইব্রাহীম আল-হানিফ নামে প্রচার করা হয়। মূলত তামিমের ওপরে এমন ব্যক্তি রয়েছেন যিনি এ জঙ্গি হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। তার পরিচালনা এই কথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

গত ৮ অক্টোবর সাভারের আশুলিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে পাঁচতলা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন আবদুর রহমান নামে এক জঙ্গি। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনার পর ২২ অক্টোবর র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, নিহত আবদুর রহমানই উগ্রবাদী সংগঠন নব্য জেএমবির প্রধান। তার আসল নাম সারোয়ার জাহান ওরফে শাইখ ইব্রাহীম আবু আল-হানিফ। র‌্যাব মহাপরিচালকের দাবি, নব্য জেএমবির নিহত অর্থদাতা আবদুর রহমানই ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কথিত বাংলাদেশ প্রধান শায়খ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ। ২৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় তামিম চৌধুরীর আস্তানায় কাউন্টার টেররিজম যখন অভিযান চালায় সে সময় এই দুজনের মধ্যে কথোপকথন হয়। বিশেষ একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তারা যোগাযোগ করে।

আবদুর রহমানকে নব্য জেএমবির প্রধান ও গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী-র‌্যাবের এই দাবির পর পর ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ওই দাবি নাকচ করে দেন। তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নিহত আবদুুর রহমান নব্য জেএমবির তৃতীয় সারির নেতা। তিনি আরো দাবি করেন ‘গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী এখনো জীবিত। তাকে আমরা খুঁজছি। যদিও তিনি নিজেকে ‘হানিফ’ নাম বলে প্রচার করছেন। কিন্তু তিনি নব্য জেএমবিতেই আছেন আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, গুলশান হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত এটিএম তাজউদ্দিন, নূরুল ইসলাম মারজান, জোনায়েদ খান, খালিদ, আজাদুল ওরফে কবিরাজ, বাশারুল্লাহ, রিপনসহ অন্তত ২৫ জনের নাম শনাক্ত করা গেছে। তাদের আটক করা সম্ভব হলে মূল পরিকল্পনাকারীর নাম জানা যাবে। ঘটনাস্থলে জব্দকৃত জিনিসপত্রের তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, ১৩ গাড়ি, ১১ বাইসাইকেল, বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোনসেট, নিহতদের মানিব্যাগসহ শতাধিক মালামাল। তাদের মধ্যে নিহত ১৭ বিদেশি নাগরিকের জব্দ করা মালামালগুলোর মধ্যে ইতালীয় দূতাবাসের মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর জাপানি ও বাংলাদেশিদের জব্দ করা মালামাল এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি।

জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনার সময় দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহতের পাশাপাশি অর্ধশত পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য আহত হন। আহতদের অনেকেই এখনো সুস্থ হননি। র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, ওই ঘটনায় শরীরের স্প্রিন্টার বিদ্ধ হওয়ার পর এখন অনেকটাই সুস্থের দিকে।

গত ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশি নাগরিক ও তিনজন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করা হয়। সেনাবাহিনীর কমান্ডো জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালালে সেখানে পাঁচজন জঙ্গি ও একজন সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হন। পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন সম্পন্ন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এমটিআই
 

Wordbridge School
Link copied!