• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘এজাহারভুক্ত আসামিরা ইউপি চেয়ারম্যান পলাশকে হত্যা করেননি’


ফরহাদ খান, নড়াইল সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮, ০৬:০৪ পিএম
‘এজাহারভুক্ত আসামিরা ইউপি চেয়ারম্যান পলাশকে হত্যা করেননি’

নড়াইল : ‘এজাহারভুক্ত আসামিরা ইউপি চেয়ারম্যান পলাশকে হত্যা করেননি। দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ দুর্বৃত্তদের জবানবন্দিতে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তাই প্রকৃত হত্যাকারীদের নামে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয়াসহ এ হয়রানিমূলক মামলা থেকে এজাহারভুক্ত আসামিদের নাম প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় পরবর্তীতে লোহাগড়ায় কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।’

আজ বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতারা এসব কথা বলেন। ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর আয়োজনে প্রতিবাদ সভাসহ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।  

দিঘলিয়া ইউনিয়ন আ. লীগের সভাপতি স ম ওহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আ. লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শরীফ মনিরুজ্জামান মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম মুন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এম এ কাইয়ূম খান চুন্নু, লোহাগড়া উপজেলা আ. লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মাসুদুজ্জামান মাসুদ, দিঘলিয়া ইউনিয়ন আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ, সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম বাদশা মিয়া, জাতীয় শ্রমিক লীগ লোহাগড়া পৌর শাখার আহবায়ক মিজানুর রহমান মিন্টু, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি মোজাম খান, ছাত্রলীগ দিঘলিয়া ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুর রহিম সুজন, ছাত্রলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

জানা যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর পৌনে ১২টার দিকে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে দুর্বৃত্তরা নড়াইলের দিঘলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও লোহাগড়া উপজেলা আ. লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক লতিফুর রহমান পলাশকে (৪৮) কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর ১৭ ফেব্রুয়ারি নিহত পলাশের ভাই সাইফুর রহমান হিলু বাদী হয়ে জেলা আ. লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ মনিরুজ্জামান, লোহাগড়া উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুজ্জামান মাসুদ, দিঘলিয়া ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি স ম ওহিদুর রহমানসহ ১৫ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে চারজন পলাতক এবং অন্যরা জামিনে আছেন।

এদিকে, মোবাইল মেসেজের সূত্রে ধরে পলাশ হত্যার নেপথ্য কাহিনী বেরিয়ে এসেছে। উন্মোচিত হয়েছে হত্যা রহস্য। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং লোহাগড়ার কুমড়ি গ্রামের সৈয়দ আল আমিনের বাবা ইলিয়াস আলী হত্যা ও শান্ত শেখের ফুফু তথা নিহত পলাশের প্রথম স্ত্রী মদিনা বেগম হত্যার অভিযোগে পলাশকে কুপিয়ে হত্যা করে চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুর্বৃত্তরা চার রাউন্ড গুলি ছুঁড়লেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনী বের করতে মামলাটি তদারকির দায়িত্ব পান নড়াইলের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মেহেদী হাসান। মোবাইল মেসেজের সূত্র ধরে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিনের মধ্যে চারজনের সম্পৃক্ততার কথা বের করেন পুলিশ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান।
 
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, পলাশ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় লোহাগড়ার কুমড়ি পশ্চিমপাড়ার মৃত সৈয়দ ইলিয়াস আলীর ছেলে সৈয়দ আল আমিন (২৭), পনিরুল ইসলামের ছেলে শান্ত শেখ (২২) ও সৈয়দ আলী আহম্মেদের ছেলে সৈয়দ রোমান আলী (২২) এবং গোপীনাথপুরের মফিজার শেখের ছেলে গোলাম কিবরিয়া (২৩)। এ  চারজন এজাহারভুক্ত আসামি না হলেও তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে পলাশ হত্যাকাণ্ডে তাদের সরাসরি সম্পৃক্তার কথা বেরিয়ে এসেছে। গত ২৫ মার্চ লোহাগড়া আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন বড়ালের আদালতে আল আমিন, গোলাম কিবরিয়া ও রোমান ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে পলাশ হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং শান্ত শেখের সম্পৃক্ততার কথা জানায়।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী জেলা পরিষদ সদস্য সাইফুর রহমান হিলু বলেন, এজাহারভুক্ত সব আসামি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। এ ছাড়া সাত মাস অতিবাহিত হলেও চার্জশিট দেয়া হয়নি। আসামিপক্ষের স ম ওহিদুর রহমান বলেন, পলাশ হত্যাকাণ্ড ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আমাদের আসামি করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্ধিতে পলাশ হত্যায় চারজন সরাসরি জড়িত বলে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। কেবলমাত্র হয়রানি করার জন্য ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত খুনিদের নামে চার্জশিট দেয়ার দাবি জানান তিনি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, অধিকতর তদন্ত শেষে চাঞ্চল্যকর পলাশ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান পলাশ হত্যা মামলাটি প্রথম থেকেই গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান পলাশ হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত তিনজন পলাশ হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন। প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পলাশ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপরাধ বিশ্লেষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, পুলিশের আন্তরিকতা এবং প্রযুক্তির কল্যাণে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!