• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এডিপিতে বরাদ্দ কমছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা


অর্থনৈতিক রিপোর্ট ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮, ০৩:৪২ পিএম
এডিপিতে বরাদ্দ কমছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা

ঢাকা : চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হচ্ছে না। উন্নয়ন খাতে সরকারের ছোট-বড় ১ হাজার ৩০০ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকার এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছিল। তবে এ থেকে ৬ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) আরএডিপির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) পরবর্তী সভায় অনুমোদনের জন্য এ খসড়াটি উপস্থাপন করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এডিপির আওতায় বরাদ্দ দেওয়া শতভাগ অর্থ ব্যয় করার লক্ষ্যে অর্থবছরের শুরু থেকেই বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কয়েক দফায় মন্ত্রণালয়ে ডেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বড় প্রকল্পের পরিচালকদের পাশাপাশি তিনি ডেকেছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদেরও। বিভিন্ন বৈঠকের ফলাফল পর্যালোচনা করে এবার শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন মন্ত্রী। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এসব উদ্যোগ সফল হলো না। এ ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্ত হওয়া আরএডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা তহবিল থেকে ৫২ হাজার ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। বছরের শুরুতে এডিপিতে বিদেশি অর্থায়ন ধরা হয়েছিল ৫৭ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে আরএডিপিতে উন্নয়ন সহায়তা কমছে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা।

আরএডিপিতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ ধরা হচ্ছে ৯ হাজার ২১৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে আরএডিপিতে সংস্থার অর্থায়ন ১ হাজার ৫৪০ কোটি ১৯ লাখ টাকা কমছে। তবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকার বরাদ্দ অপরিবর্তিত থাকছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর বড় আকারের এডিপি প্রণয়ন করে বছরের মাঝপথে তা কাটছাঁট করা হয়। বছর শেষে বাস্তবায়নের হার দাঁড়ায় আরো কম। বাস্তবায়নের সক্ষমতা না থাকলেও বড় এডিপি প্রণয়নের একটা প্রবণতা চলে আসছে। প্রতিবারই বিদেশি সহায়তায় বড় লক্ষ্য ধরা হয়ে থাকে। এ প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসা উচিত।’

জাহিদ হোসেন আরো বলেন, ‘এবার খাদ্য আমদানির চাপের কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। এ অবস্থায় সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে চলমান আমদানি-নির্ভর প্রকল্পে বরাদ্দ কিছুটা কমানো যৌক্তিক ছিল। আরএডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ার বিপরীতে বরাদ্দ কমে আসায় কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থসঙ্কট হবে।’

কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের সংশোধিত এডিপিতেও অর্থ বরাদ্দে সর্বাধিক অগ্রাধিকার পাচ্ছে পরিবহন খাত। এ খাতে বরাদ্দ থাকছে ৩৭ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। মোট আরএডিপির ২৫ দশমিক ২৮ শতাংশ অর্থ দেওয়া হচ্ছে পরিবহন খাতে। কয়েক বছর ধরে তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও বরাদ্দের বিচারে এবার দ্বিতীয় অবস্থানে বিদ্যুৎ খাত। ২২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা এ খাতে দেওয়া হচ্ছে। এ হিসাবে আরএডিপির ১৫ দশমিক ১ শতাংশ অর্থ বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনয়ন ও অধিক কর্মসংস্থানের জন্য পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে তৃতীয় সর্বাধিক ১৬ হাজার ৭৯৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এ খাতে বরাদ্দ থাকছে আরএডিপির ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ অর্থ।

এ ছাড়া ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে ১৫ হাজার ২১৩ কোটি টাকা, শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ১৪ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবারকল্যাণ খাতে ৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৫ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে কম বরাদ্দ পাওয়া খাতের মধ্যে গণসংযোগে ২২০ কোটি টাকা এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে ৩১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।

আরএডিপিতে নতুন ৩৫০ প্রকল্প যোগ করা হচ্ছে। ফলে প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৬৫৮টিতে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৩৬৫টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৪৩টি, জাপান ঋণ মওকুফ তহবিলের (জেডিসিএফ) প্রকল্প তিনটি। এর বাইরে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে রয়েছে ১৪৭টি। এডিপিতে প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৩০৮টি। আরএডিপিতে বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্প থাকছে ১ হাজার ৫১১টি।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকার এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছিল। অর্থবছরের মাঝখানে কাটছাঁট করে এডিপির আকার নামিয়ে আনা হয় ১ লাখ ১৯ হাজার ২৯৬ কোটি টাকায়। অবশ্য বছর শেষে এডিপি বাস্তবায়ন ব্যয় হয় ১ লাখ ৭ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। আরএডিপির ৮৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ অর্থবছর শেষে ব্যয় হয়। অবশ্য এডিপির হিসাবে বাস্তবায়ন হার দাঁড়ায় ৮৬ দশমিক ৯৩ শতাংশে। মূল এডিপির ১৬ হাজার ১১৭ কোটি টাকা ফেরত যায় গত অর্থবছরে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছে ৫৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। মূল বরাদ্দের ৩৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে জানুয়ারি পর্যন্ত। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ২৮ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৩ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ২ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে সাত মাসে। গত অর্থবছরের একই সময়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছিল ৩৯ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা, যা শতাংশের দিক থেকে ৩২ দশমিক ৪১ শতাংশ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!