• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এডিবির পূর্বাভাস : প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১২, ২০১৮, ০৪:৩৮ পিএম
এডিবির পূর্বাভাস : প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ

ঢাকা : চলতি (২০১৭-১৮) অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো নিয়ে তৈরি করা এডিবির এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বুধবার (১১ এপ্রিল) এডিবির ঢাকা আবাসিক মিশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন মিশনপ্রধান মনমোহন পারকাশ। প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সংস্থার অর্থনীতিবিদ সুন চ্যান হং।

সাময়িক হিসাব করে এবার ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা দিয়েছিল সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। অন্যদিকে সাড়ে ৬ থেকে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা দেয় বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনের সঙ্গে ইতোমধ্যেই দ্বিমত প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ অবস্থায় বছর শেষে প্রবৃদ্ধি দুই সংস্থার অনুমানের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকবে বলে ধারণা দিয়েছে এডিবি।

সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রবাসী আয় ঘুরে দাঁড়ালেও ভোগচাহিদা ঝিমিয়ে আছে। অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের বিশাল ব্যয় ও সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতির ফলেও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। তবে রফতানি খাতে আয় ধারণার চেয়ে বেশি বাড়বে। সব মিলে প্রবৃদ্ধি উন্নীত হবে ৭ শতাংশে।

স্বাগত বক্তব্যে স্বল্পোন্নত দেশের এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান আবাসিক মিশনপ্রধান মনমোহন পারকাশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যারা তিন শর্তই পূরণ করতে পেরেছে।

আবাসিকপ্রধান আরো বলেন, দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি রফতানি  রেমিট্যান্স বাড়বে। পোশাক শিল্পের বৈচিত্র্য ও শ্রমঘন শিল্প খাতে গুরুত্ব দেওয়া হলে আগামীতে প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে শিল্পায়নে গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

নতুন প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তির কারণে আগামীতে দেশের শ্রমবাজারে বিশেষ করে পোশাক খাতে কর্মসংস্থান কমে আসবে বলেও ধারণা দিয়েছে এডিবি। সংবাদ সম্মেলনে সুন চ্যান হং বলেন, পোশাক শিল্প ক্রমেই প্রযুক্তিনির্ভরতার দিকে ঝুঁকছে।

তিনি আরো বলেন, পরিচালন দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও উদ্ভাবনের প্রবণতা বাড়ছে। এর ফলে রফতানি প্রবৃদ্ধি ও আয় বাড়ছে। কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে আগামীতে জনশক্তির উচ্চমানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা ও নতুন উদ্ভাবনী স্টার্টআপ উদ্যোগ এবং উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

চলতি অর্থবছর কৃষি খাতে ২ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা দিয়েছে এডিবি। এ খাতে গত অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ হিসেবে এবার কৃষির প্রবৃদ্ধি কমছে। যদিও এবার কৃষিতে ৩ দশমিক ০৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা দিয়েছে বিবিএস।

এবার শিল্প খাতে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে এডিবির পূর্বাভাসে উঠে এসেছে। গত অর্থবছর এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। রফতানি বেড়ে যাওয়ার সুবাদে শিল্পের প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে ধারণা সংস্থাটির। অবশ্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক হিসাবে এবার শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। শিল্প খাতে পূর্বাভাস ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলনে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে।

সেবা খাতে এবার প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসবে বলে ধারণা দিয়েছে এডিবি। গত অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অবশ্য এবার সেবা খাতে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে মনে করছে বিবিএস। এডিবির হিসাবে সেবা খাতে সরকারের চেয়ে বেশি প্রাক্কলন করা হয়েছে।

এডিবির মতে চলতি অর্থবছরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ১ শতাংশে, যা গত অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে তেল ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে। প্রাকৃতিক গ্যাস-বিদ্যুতের দামের সমন্বয় করা এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে।

রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি সরকারি ব্যয়ে চলতি অর্থবছর লক্ষ্য পূরণ হবে না বলে মনে করছে এডিবি। এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার রাজস্ব আহরণে ৩১ দশমিক ৮০ শতাংশ ও ব্যয়ে ২৬ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল। উন্নয়ন খাতে ৩৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়তি ব্যয় ধরায় পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, রূপপুর, পায়রা বন্দর, রামপাল ও মাতারবাড়ীর মতো মেগা প্রকল্পে গতি আসার সম্ভাবনা ছিল। রাজস্ব আয় জিডিপির ১৩ শতাংশ ও সরকারি ব্যয় জিডিপির ১৮ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা ছিল। আয় ও ব্যয় বৃদ্ধিতে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা আদায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রত্যাশিত হারে আয় ও ব্যয় না হওয়ায় বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে।

অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে আগামীতে অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। অবকাঠামো খাতে জিডিপির ৬ থেকে ৮ শতাংশ ব্যয় করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। বিদ্যুৎ, সড়ক ও রেলওয়ের মতো অবকাঠামোতে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। বর্তমানে দেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ জিডিপির ৩ শতাংশ। উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে তা ৬ থেকে ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

দেশের কর কাঠামোতে বড় ধরনের সংস্কার আনতে হবে বলে মনে করে এডিবি। বাড়তি রাজস্ব আহরণে ভ্যাট আইন দ্রুত কার্যকর করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিযোগিতা সক্ষমতার বিবেচনায় আমদানি শুল্ক যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার চেয়েছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশ। একই সময়ে এশিয়ায় মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ২ দশমিক ৯ শতাংশে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!