• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার ঈদ কেনাকাটায় গুরুত্ব পেয়েছে দেশীয় পোশাক


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৭, ২০১৮, ১২:৪৭ পিএম
এবার ঈদ কেনাকাটায় গুরুত্ব পেয়েছে দেশীয় পোশাক

ঢাকা : ফ্যাশন হাউজগুলোর নানামাত্রিক উদ্যোগের ফলে দেশের মানুষের পোশাক কেনার অভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। দেশীয় ফ্যাশনে আগ্রহ বাড়ছে তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী মানুষের। ক্রেতাদের অভিমত, দেশীয় ফ্যাশন হাউজের তৈরি পোশাক বাইরের আমদানি করা পোশাকের চেয়ে উন্নতমানের। সুতার মান ভালো। রঙে স্থায়ী, দামে সাশ্রয়ী।

জানা গেছে, বর্তমানে শতাধিক ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউজ স্বনামে শিল্পমাত্রায় দেশীয় ফ্যাশন শিল্পকে উজ্জ্বল দিগন্তের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের ফ্যাশন হাউজগুলোর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংগঠন ফ্যাশন এন্ট্রাপ্রেনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে, এক দশক আগে দেশীয় ফ্যাশনের বাজার ছিল এক হাজার কোটি টাকার। বর্তমানে সেই অঙ্ক ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

বলা যায়, দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে ধারণ করে দেশীয় কাপড়, দেশীয় বুনন, রঙ ও নকশার বৈচিত্র্যে এসব পোশাক উৎসব-পার্বণকে অনুষঙ্গ করে বিপ্লব ঘটিয়েছে। একসময়ের ঘরোয়া বা শৌখিন আঙ্গিকে গড়ে ওঠা ছোট বুটিক হাউজগুলো সময়ের বিবর্তনে নামিদামি ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।

উল্লেখ করা যেতে পারে আড়ং, অঞ্জন’স, কে-ক্র্যাফট, রঙ, নগরদোলা, সাদাকালো, প্রবর্তন, শ্রদ্ধা, বাংলার মেলা, অন্যমেলা, নবরূপা, গ্রামীণ চেক, নীলাঞ্জনা, ওজি, বিবিয়ানা, দেশালসহ শ্রুতিমধুর অনেক ফ্যাশন হাউজের নাম।

আশার খবর হলো- এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরেও বিস্তৃতি ঘটিয়ে রফতানি শুরু করেছে। জানা গেছে, ছোট-বড় মিলিয়ে দেশে এখন ফ্যাশন হাউজের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। বছরে টার্নওভার ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি। ফ্যাশন এন্ট্রাপ্রেনারস অ্যাসোসিয়েশন-ফিয়াবের তথ্যমতে, বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ লোক এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন উৎসবে সরবরাহ করে থাকেন নিত্যনতুন পোশাক।  

ঈদ আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় উৎসব। সারা বছর যে বেচাকেনা হয় তার প্রায় ৪০ শতাংশই হয় রমজান মাসের ঈদকে কেন্দ্র করে।

জানা গেছে, বৈশাখে অভ্যন্তরীণ দেশীয় ফ্যাশন পোশাকের বাজার কমবেশি দেড় হাজার কোটি টাকা।  

আমরা গর্ব করে বলতে পারি, একসময়ের ঘরোয়া বা শৌখিন বুটিক হাউজগুলো মেধা-মননে দেশীয় সভ্যতাকে ধারণ করে রূপ নিয়েছে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডে। বাংলার ষড়ঋতুর আবেশ পাওয়া যায় এখন দেশীয় পোশাকে। পোশাক পরিধানে আরাম আয়েশের বিষয়গুলোও বাদ যাচ্ছে না। তার মানে এই শিল্পে জ্ঞান গবেষণা চলছে নিরন্তর। এভাবেই সময় আর রুচিবোধের পালাবদল ঘটিয়ে বিকশিত হচ্ছে আমাদের দেশীয় ফ্যাশন শিল্প।  

আমাদের দেশের জনপ্রিয় ফ্যাশন হাউজগুলোর মধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠান নিপুণ, রঙ, কে-ক্র্যাফট, সাদাকালো, অঞ্জন’স, বিবিয়ানা, দেশাল, প্রবর্তনা, নগরদোলা ও বাংলার মেলা- যূথবদ্ধ হয়ে দেশীদশ নামে পৃথক একটি ধারা সৃষ্টি করেছে। পরবর্তীকালে আরো ১০টি ফ্যাশন হাউজ অন্যমেলা, এড্রয়েট, এম ক্র্যাফট, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির, নবরূপা, ব্ল–-আইস, ম্যাকয়, স্মার্টেক্স, শৈল্পিক ও স্টুডিও এমদাদ নিয়ে ‘স্বদেশী’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দেশীয় বাজার সম্প্রসারণে এসব উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

সংশ্লিষ্টদের অভিমত, নিজস্ব ব্র্যান্ডের প্রচার-প্রচারণা, বিপণিবিতানের সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন থাকলেও অর্থায়ন সঙ্কটে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর সীমাবদ্ধতা আছে। তবে জেলা শহরগুলোতে স্থানীয় আগ্রহী বুটিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হিসেবে ফ্যাশন হাউজগুলোর আউটলেট চালু করা যেতে পারে।  

আমাদের দেশীয় ফ্যাশন শিল্পের বিকাশে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ। স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণ। তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান, দেশের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে বিদেশি বাহারি নামের পোশাক পরিহার করে দেশীয় ফ্যাশনে আমাদের নিজস্ব পোশাক কিনুন, পরিধান করুন, উপহার দিন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!