• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
রোহিঙ্গা ইস্যু

এবার খুলতে পারে জট


নিউজ ডেস্ক নভেম্বর ২১, ২০১৭, ০২:৫৩ পিএম
এবার খুলতে পারে জট

ঢাকা : রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ইস্যুতে অবশেষে নীরবতা ভাঙ্গলো মিয়ানমারের সবচেয়ে কাছের বন্ধু চীন। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যবর্তনে তারা তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছে। মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে এশিয়া-ইউরোপ মিটিংয়ে (আসেম) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে চীন এ প্রস্তাব দেয়। চীনের এ প্রস্তাবকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়েই ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।

অন্যদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও কূটনৈতিক বোদ্ধারা মনে করছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে এবার হয়তো একটি পথ খুলতে পারে। তারা মনে করেন, মিয়ানমারের বিগবস হচ্ছে চীন। চীন যা বলে, বিনা বাক্যব্যয়ে তা মেনে নেয় মিয়ানমার। কেউ কেউ মনে করেন, চীনে বৃষ্টি হলে মিয়ানমারের মানুষ মাথায় ছাতা ধরবে। আর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আরো কয়েক ডিগ্রি এগিয়ে। তারা কোনভাবেই চীনের বিরাগভাজন হতে চায় না।

গত ৩০ বছর তারা চীনের মন জয় করে ক্ষমতা আঁকড়ে আছে। তারা মিয়ানমারের এখনকার রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চিকে দুই যুগের বেশি আটকে রেখেছিল। আর এতেও নীরব সমর্থন ছিল চীনের। আমেরিকা, ইউরোপের বাঘা বাঘা রাষ্ট্ররা সে সময় সু চিকে সাহায্য করতে চেয়েও পারেনি। অর্থাৎ, চীন যা চায়, মিয়ানমারেই তা প্রথম বাস্তবায়ন হয়।

অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও এমনটি মনে করেন। গত রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয়া কঠিন হবে। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সফলতা আছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী (ওয়াং ই) শনিবার বাংলাদেশে এসেছেন। তিনিও বলেছেন রোহিঙ্গাদের ফেরানো সহজ হবে না। তবে এটা এখন সারাবিশ্বে আলোচিত ইস্যু (রোহিঙ্গা)। আমরা রোহিঙ্গা ইস্যুকে আর্ন্তজাতিক মহলে তুলে ধরতে পেরেছি। আমরা আশা করছি, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে দিতে পারবো।’

চীন বাংলাদেশের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তারা ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন তোফায়েল।

এদিকে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে গতকাল সোমবার দু’দিনব্যাপী এশিয়া-ইউরোপ বৈঠক বা আসেম সম্মেলন শুরুর আগে আগে গত রবিবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সংবাদ সম্মেলন করে এ তিন দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

প্রস্তাবগুলো হচ্ছে-

এক. প্রথম পর্যায়ে রাখাইনে অস্ত্রবিরতি কার্যকর করতে হবে, যাতে শৃঙ্খলা আর স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয় এবং মানুষকে আর ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে না হয়।   
 
দুই. অস্ত্রবিরতি কার্যকর হলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ তৈরি হয়।

তিন. চূড়ান্ত ধাপে রোহিঙ্গা সঙ্কটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে মনোযোগ।

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি গতকাল সোমবার আসেম সম্মেলনের উদ্বোধন করেন, যেখানে এশিয়া ও ইউরোপের ৫১টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নিচ্ছেন।

এর আগে তিনি নেপিদোতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর বা সরকার প্রধান অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট তিন কিয়াও ও সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারও আগে ঘুরে যান বাংলাদেশ। এখানেও তিনি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের নেতৃত্বের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে রোহিঙ্গ সংকট সমাধানে চীনের তিন ধাপের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন ওয়াং ই।

এই পরিকল্পনা তিনটি হলো, প্রথমত; অস্ত্রবিরতি এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, যেন রাখাইন থেকে লোকজন না পালায় এবং শান্তিতে থাকে। দ্বিতীয়ত; মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সাম্যের ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের উপায় খোঁজা এবং তৃতীয়ত, রাখাইন রাজ্যের উন্নয়নে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং বলেন, চীন বিশ্বাস করে- সংলাপের মধ্য দিয়েই প্রতিবেশী দুই দেশ রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করতে পারে। রোহিঙ্গা সংকটের মূলে রাখাইনের দারিদ্র্য দায়ী উল্লেখ করে চীনের এ পররাষ্ট্রমন্ত্র বলেন, রাখাইনে সম্পদ আছে, কিন্তু যথেষ্ট উন্নয়ন হয়নি। তাই এই অঞ্চলকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে এবং উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে মিয়ানমারকে সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই। এক্ষেত্রে সহযোগিতা ও ভূমিকা রাখতে চায় চীন।

এর আগে গত ১৮ নভেম্বর ঢাকা সফরকালে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পরামর্শ দেন।

সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ওয়াং ই সোমবার থেকে নেপিদোয় শুরু হওয়া আসেমের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন। মনে করা হচ্ছে, এই বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ইউরোপীয় দেশগুলো মিয়ানমারকে চাপ দিতে পারে।

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদে রাখাইনে নিধনযজ্ঞ শুরু করে। এতে এখন পর্যন্ত সোয়া ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে জাতিগত নিধনযজ্ঞ বলে অভিহিত করেছে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে সংকটের শিগগির সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্ব সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!