• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার দুই মেডিকেল ছাত্রসহ ৩ তরুণ ‌‘নিখোঁজ’


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৮, ২০১৬, ০২:৩৮ এএম
এবার দুই মেডিকেল ছাত্রসহ ৩ তরুণ ‌‘নিখোঁজ’

পাবনা মেডিকেলের ‘নিখোঁজ’ ছাত্র জাকির ও তন্ময়

ঢাকা: এবার দুই মেডিককেল ছাত্রসহ আরও ৩ তরুণ ‌‘নিখোঁজ’ হওয়ার খবর মিলেছে। এ নিয়ে এক সপ্তাহে ‘নিখোঁজ’ তরুণদের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ৯-এ। আগে চার তরুণ ‘নিখোঁজের’ রহস্য উন্মোচিত হওয়ার আগেই আরও তিনজনের ‘লাপাত্তা’ হওয়ার খবর পাওয়া গেলো।

সর্বশেষ ‘নিখোঁজ’ তিনজনের মধ্যে জাকির হোসেন ও তানভীর আহম্মেদ তন্ময় পাবনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় পাবনা সদর ও রংপুরের কাউনিয়া থানায় জিডি হয়েছে। আরেক নিখোঁজ বরিশালের আগৈলঝড়ার মার্কাজ মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের ছাত্র নিয়ামত। সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ১ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থেকে সাফায়েত হোসেন, জায়েন হোসেন খান পাভেল, সুজন ও মেহেদী নামে এক সঙ্গে চার তরুণ ‘লাপাত্তা’ হয়। এদের মধ্যে সাফায়েত ও পাভেল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ৫ ডিসেম্বর বনানী থেকে নিখোঁজ হয় সাঈদ আনোয়ার খান নামে আরেক তরুণ। এছাড়া ৩০ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মাটিকাটার বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেনি ইমরান ফরহাদ নামে আরেক তরুণ। ইমরান মোহাম্মদপুরের কেয়ার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী।

পুলিশ সূত্র জানায়, পাবনা মেডিকেলের চতুর্ষ বর্ষের ছাত্র তানভীর আহম্মেদ তন্ময়। সে মেডিকেলে এক নম্বর হোস্টেলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিল। গত ৩০ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে সে হোস্টেল থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেনি। এরপর থেকে তার মোবাইল নাম্বারও বন্ধ পাওয়া যায়। 

পরদিন তার রুমমেট ও কলেজ কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন তন্ময়ের গ্রামের বাড়িতেও যায়নি। পরে পাবনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সদর থানায় একটি জিডি (নম্বর ২০) করেন। তানভীরের বাবার নাম নূর আলম। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের মিস্ত্রিপাড়ায়। পাবনা সদর থানার এএসআই জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ ঘটনায় জিডি হয়েছে। পুলিশ তার অবস্থান জানার চেষ্টা করছে।

রংপুরের কাউনিয়া থানার ওসি আবদুল কাদের জিলানী জানান, ‘কাউনিয়ার সুরুজ্জামানের ছেলে জাকির হোসেন রংপুর থেকে পাবনা যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়েছেন। এ ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে একটি জিডি করেছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’

পুলিশ সূত্র জানায়, জাকির পাবনা মেডিকেলের শিক্ষার্থী। এর আগে সে রাজশাহীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। সম্প্রতি রংপুরের কাউনিয়ার বাসায় গিয়েছিল। ৩ ডিসেম্বর সে বাসা থেকে আবার পাবনার উদ্দেশে ট্রেনে রওনা হয়। ট্রেনটি গাইবান্ধা যাওয়ার পর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। ৪ ডিসেম্বর তার বাবা বাদী হয়ে কাউনিয়া থানায় জিডি করেন।

পাবনা মেডিকেলের একটি সূত্র জানায়, জাকির পাবনা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনও তথ্য জানা যায়নি। জাকিরের ফেসবুকে গত ৬ অক্টোবর আপডেট হওয়া একটি তথ্যে পাবনা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বলে উল্লেখ রয়েছে।

নিখোঁজ শিক্ষার্থী জাকির ও তন্ময়ের এক সহপাঠী বলেন, ‘তারা দুজন পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়তো। তবে তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত কিনা, বলতে পারি না।’

তন্ময় ও জাকিরের ফেসবুকের প্রোফাইল ঘেঁটে ইসলাম ও ধর্ম নিয়ে কিছু পোস্ট শেয়ার করতে দেখা গেছে। তবে তারা কট্টরভাবে ধর্ম পালন করতেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সম্প্রতি  একাধিক উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের তরুণরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েও তদন্ত করছে। 

এদিকে বরিশালের আগৈলঝড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, গত ৩০ নভেম্বর বাসা থেকে বেরিয়ে যায় নিয়ামত নামে এক মাদ্রাসা ছাত্র। এ ঘটনায় তার বাবা খোরশেদ বেপারী বাদী হয়ে ৩ ডিসেম্বর একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন। সে স্থানীয় মার্কাজ মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। তার মোবাইল কল রেকর্ডসের তথ্য অনুযায়ী, তার সর্বশেষ অবস্থান ঢাকায় বলে জানা গেছে।

ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, নিখোঁজ নিয়ামত জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে কিনা, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। প্রাথমিকভাবে আমরা জেনেছি মা-বাবার বকাবকির কারণে সে অভিমান করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। তার অবস্থান জেনে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!