• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ‘নিরপেক্ষ সরকারের’ রূপরেখা দেবে বিএনপি


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ১৯, ২০১৬, ০৭:০৫ পিএম
এবার ‘নিরপেক্ষ সরকারের’ রূপরেখা দেবে বিএনপি

ঢাকা: নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালীকরণে সরকারের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে বিএনপি। এবার ‘নিরপেক্ষ সরকারের’ রূপরেখা দেবার কথা ভাবছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলটি। 

গত শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালীকরণে সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাব দিয়েছে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সংবাদ সম্মেলনে ‘নিরপেক্ষ সরকার’ বিষয়ে যেসব কথা এসেছে, সেখান থেকে কিছু প্রশ্ন উঠেছে সবার মনে।

সেদিন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যতিরেকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন যাতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারে সে উদ্দেশ্যেই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজন। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ভবিষ্যতে যথাসময়ে জাতির সমীপে উপস্থাপন করব।’

খালেদা জিয়ার ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের’ সংজ্ঞা আসলে কী রকম হবে, তা নিয়ে এরই মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, বিএনপিকে কি তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে কিছুটা হলেও সরে এসেছে?

তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি থেকে বিএনপি সরে এসেছে, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। কারণ একটি অবাধ নির্বাচনের জন্য ওই সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। হতে পারে ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার’টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারেরই আরেকটি বিকল্প, যা শুধু নাম আর কিছু প্রক্রিয়াগত পার্থক্য তৈরি করবে মাত্র।

তৎকালীন বিএনপি সরকারের শাসনামলে আওয়ামী লীগ-জামায়াতের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সর্বশেষ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনও এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ২০০৬ সালের সর্বশেষ সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন না দিয়ে দুই বছর ক্ষমতায় থাকলে এ প্রক্রিয়া প্রশ্নের মুখে পড়ে।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০১১ সালে ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে আদালত তা বাতিল ঘোষণা করে। পরের মাসে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত করে সরকার।

তবে ওই সময়ে আদালত এও বলে যে, শান্তি-শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে আগামী দুটি সাধারণ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করার পর এ নিয়ে বিএনপি চরম বিরোধিতা করে। তৎকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, সেটিকে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি।

ওই সময়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, আদালতের রায় বর্তমান সরকারকে তাদের নিজেদের ইচ্ছেমতো, একতরফাভাবে সুবিধাজনক সংশোধনী সংবিধানে এনে ক্ষমতায় টিঁকিয়ে রাখতে সহায়তা করবে। সুপ্রিম কোর্টের এ রায় দেশের রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক সংকট আরও ঘনীভূত করবে।

২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে প্রথম দফায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে যায় বিএনপি। একই সঙ্গে নির্বাচনে ভোট বর্জনের দাবি জানায়। ‘বিতর্কিত’ ভোট গ্রহণ শেষে আওয়ামী লীগ তৃতীয় দফায় সরকার গঠন করলেও বছরশেষে আবারো আন্দোলনে যায় বিএনপি। তবে দু’দফায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিফল দলটি এখন শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের কথা বলছে।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে কাজী রাকিবউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এসে ভবিষ্যতে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন বলে জানালেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এলো কিনা- জানতে চাইলে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কথা বলছেন। কিন্তু এই সরকার কেমন হবে তা বলেননি। তার মানে তো এই নয় যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসেছি। এখানে অন্য ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ নেই। যখন রূপরেখা দেয়া হবে, তখনই এ বিষয়ে সবাই পরিষ্কার ধারণা পাবে।’

তবে দলের আরেক নীতিনির্ধারক লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান মনে করেন, অবাধ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়কই হতে হবে, এমন কোনো কারণ নেই। অন্য নামেও নিরপেক্ষ সরকার হতে পারে।

তিনি বলেন, মূল লক্ষ্য হচ্ছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকারের জন্য কেমন সরকার হওয়া চাই। অনেক দেশেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই, সেখানে কি সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে না? মূল কথা, বিএনপির ডিমান্ড (চাওয়া) হচ্ছে একটি অবাধ নির্বাচন। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য যে ধরনের সরকার ব্যবস্থা দরকার বিএনপি সেই ধরনের সরকারের রূপরেখা দেবে। সেটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্পও হতে পারে।

বিএনপি সময়ের সঙ্গে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী রাজনীতি করে জানিয়ে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন, বিএনপি সময়ের কথা বিবেচনা করে এবং জনগণের চিন্তা-চেতনা নিয়ে কাজ করে। সেজন্য তিনি (খালেদা জিয়া) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প আরেকটি সরকারের রূপরেখা দিতে পারেন। সেই রূপ রেখা দেয়ার পরই বোঝা যাবে, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসেছে কি-না। তখন বোঝা যাবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচনকালীন সাহয়ক সরকারের পার্থক্য কী?

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!