• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এবার পল্টনে সমাবেশের জন্য আবেদন


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ৫, ২০১৬, ০১:৩৬ পিএম
এবার পল্টনে সমাবেশের জন্য আবেদন

সম্প্রতি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাঁকালো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর তাই একই স্থানে বড় আকারের সমাবেশ করে নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি জানান দিতে চেয়েছিল বিএনপি। সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম ঘটানোর জন্য বিএনপির নীতিনির্ধারকরা দফায় দফায় একাধিক বৈঠকও করেছেন।

কিন্তু প্রশাসন থেকে অনুমতি না পাওয়ায় ‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পূর্বঘোষিত সমাবেশ করতে পারছে না দলটি। দলের নেতারা বলছেন, বিএনপির জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়েই রাজধানীতে সমাবেশ করতে দিতে চায় না সরকার।

এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে এবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে পুলিশকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সোহরাওয়ার্দীতে অনুমতি না মেলায় আমরা ৮ নভেম্বর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছি। পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো লিখিত অনুমতি পাইনি। তবে আশা করছি, নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি আমরা পাব। 

৭ ও ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করে বিএনপি। কিন্তু আগামী ৭, ৮ ও ৯ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কোনো রাজনৈতিক দলকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয় পুলিশ।

এ বিষয়ে ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, একই জায়গায় একাধিক রাজনৈতিক দল সমাবেশ ডাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে কাউকে ৭ ও ৮ নভেম্বর সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। 

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাতে গণমাধ্যমকে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, একাধিক রাজনৈতিক দল আগামী ৭, ৮ ও ৯ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চেয়েছে। জননিরাপত্তার স্বার্থে তাই কোনো রাজনৈতিক দলকেই ওই তারিখগুলোতে সেখানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। তবে বিএনপি ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে কি না সে প্রশ্নের কোনো উত্তর সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে মেলেনি।

এদিকে সরকার ভয়ে বিএনপিকে ৭ নভেম্বর সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে ভয় পায়, বিএনপিকে ভয় পায়, বিশেষ করে খালেদা জিয়াকে ভীষণ ভয় পায়। এ কারণেই তারা সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে খালেদা জিয়া যদি মাঠে নামেন, তাহলে লাখ লাখ জনতা তার পিছু পিছু মাঠে নামে। কারণ তিনি হচ্ছেন গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতীক। আর আওয়ামী লীগ এই গণতন্ত্রকামী জনগণকে ভীষণ ভয় পায়। সেজন্যই তারা সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে না। 

আওয়ামী লীগ নতুন আঙ্গিকে পুনরায় দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করতে চায় বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের আচরণ কোনো সময়ই গণতান্ত্রিক ছিল না। তারা সবসময়ই একদলীয় চিন্তাভাবনা নিয়ে রাজনীতি করে গেছে। জনমত এবং জনগণের চাওয়াকে তারা কখনোই গুরুত্ব দেয়নি। এ কারণেই ৭ নভেম্বরের মতো একটা ঐতিহাসিক দিন তারা নিজেরাও পালন করে না, আর আমাদেরও পালন করতে দিচ্ছে না। সুতরাং আমাদের বসে থাকলে চলবে না, জেগে উঠতে হবে।

এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতি না পাওয়ার বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, মূলত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ব্যাপক জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়েই সরকার সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে না। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকজন দেশব্যাপী নিত্যদিন যেসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও অনাচার চালিয়ে যাচ্ছে, সমাবেশ থেকে সেসবের তীব্র প্রতিবাদ করা হবে-এই ভেবে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি সরকার।

বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা বিএনপি এবার ৭ নভেম্বরকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে নিজেদের শক্তিমত্তা তুলে ধরতে চেয়েছিল। গত ২৯ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ে এক সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোহরাওয়ার্দীতে ব্যাপক জনসমাগম ঘটাতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। একই সভায় ঢাকা মহানগর বিএনপির আহবায়ক মির্জা আব্বাস বলেছিলেন, ৭ নভেম্বর স্মরণকালের সমাবেশ করতে হবে। এজন্য দলের সবাইকে এবং সব স্তরের অঙ্গসংগঠনকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

এরপর গত ৩১ অক্টোবর দলের এক সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার জন্য জিয়াউর রহমানকে দায়ী করে বিএনপির ৭ নভেম্বরের কর্মসূচি প্রতিহতের হুমকি দেন।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে ৭ নভেম্বরের পরদিন ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছি আমরা।

এদিকে দলের নানা কর্মসূচিতে বাধা পেয়ে বিএনপি বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভিন্নমত প্রকাশের কোনো সুযোগ দিচ্ছে না। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি কর্মসূচি পালনের নামে নাশকতার বিস্তার ঘটাতে চাইছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!