• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার বাবুলের বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৩১, ২০১৭, ১১:৫৩ এএম
এবার বাবুলের বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ

এবার পরকীয়ার অভিযোগ ওঠেছে চাকরিচ্যুত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে। তার এই পরকীয়ার বলী হয়েছেন আরও একজন। তিনি ঝিনাইদহ পুলিশের এসআই আকরাম। পরকীয়ায় বাধা হওয়ায় ওই এসআইকে মাথায় কুপিয়ে হত্যা করানোর অভিযোগও উঠেছে বাবুলের বিরুদ্ধে। বাবুল তখন এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগই শুনতে চাইতেন না।

নিহত এসআইয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে দুই বছর আগের এই হত্যাকাণ্ডকে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা বলেন, নিজ বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ার পরও তৎকালীন ঝিনাইদহের পুলিশ কর্মকর্তারা এই ব্যাপারে নিহতের পরিবারকে কোনো সহযোগিতা করেননি। তারপরও আকরাম হোসেনের বোন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে রেখেছিলেন। সেই মামলাটির তদন্তও বেশি দূর এগুতে পারেনি বাবুলের কারণে। এখন বিচারের আশায় আকরামের ছোট বোন জান্নাত আরা পারভীন রিনি গতকাল সোমবার বাবুল আক্তারের শ্বশুরের সঙ্গে দেখা করেন। নিহত আকরাম হোসেন তখন বিমানবন্দরে স্পেশাল ব্রাঞ্চে এসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

নিহত আকরাম হোসেনের বোন রিনি বলেন, ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মহাসড়কে মাথায় কুপিয়ে তার ভাইকে আহত করা হয়। ১৭ দিন চিকিত্সাধীন থাকার পর তিনি মারা যান। তখন পুলিশ এটি ট্রাক দুর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করে। চিকিৎসকরা তখন আমাদের জানিয়েছিলেন, আকরামের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তখনই আমরা সন্দেহ করি এটি হত্যা। কিন্তু ওই ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। আমরা ওই মামলায় বাবুল আক্তার, তার ফুফাতো ভাই সাদিমুল ইসলাম মুন ও নিহত আকরামের স্ত্রী বনানী বিনতে বছির বর্ণি’কে আসামি করি। কিন্তু পুলিশ তাদের নাম বাদ দিয়ে একটি মামলা রেকর্ড করলেও তদন্ত আর এগোয়নি। তখন বহু মানুষের কাছে বিচার চেয়েও পায়নি।

রিনি অভিযোগ করেন, ‘আমার ভাইয়ের সঙ্গে তার স্ত্রীর মধ্যে বাবুল আক্তারকে নিয়ে সম্পর্কের অবনতি হয়। এক পর্যায়ে আমার ভাই তার স্ত্রীকে ঝিনাইদহে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এ নিয়ে মীমাংসার কথা বলে ঝিনাইদহে ডেকে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের বাড়িও ঝিনাইদহ সদরে। তারপরও পুলিশ তখন আমাদের কোনো সহযোগিতা করেনি। যদি এটি দুর্ঘটনাই হয়, তাহলেও তো অভিযুক্ত ট্রাক চালককে আটক করবে, ট্রাকটি জব্দ করবে, কিছুই তারা করেনি। তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের মগবাজারে একটি ফ্ল্যাট ছিল। সেই ফ্ল্যাটে এখন বর্ণি বসবাস করে। বাবুল আক্তার বর্তমানে আদদ্বীন হাসপাতালে চাকরি নিয়েছেন। ওই ফ্ল্যাটটি হাসপাতালের পাশেই। বাবুল আক্তারও বর্তমানে ওই এলাকায় থাকেন। ওই ফ্ল্যাটেই থাকেন, নাকি অন্য ফ্ল্যাটে থাকেন তা আমরা জানি না। এখনও তাদের দু’জনের মধ্যে খুবই সখ্যতা রয়েছে।

রিনি বলেন, সাতক্ষীরাতে বাবুল আক্তারের বাবা ও বর্ণির বাবা পাশাপাশি বাসায় থাকতেন। বর্ণির বাবা বিআরডিবিতে চাকরি করতেন। আর বাবুলের বাবা পুলিশে। সেই সুবাদে তাদের দু’জনের মধ্যে পারিবারিকভাবে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। তখন থেকেই বাবুল আক্তারের সঙ্গে বর্ণির একটি সম্পর্ক ছিল। এর মধ্যে পরিবারের সিদ্ধান্তে বাবুল মিতুকে বিয়ে করে। আর বর্ণির বিয়ে হয় আকরামের সঙ্গে। কিন্তু বাবুল আর বর্ণির মধ্যে তখনও যোগাযোগ ছিল। প্রথমে আমরা বিষয়টা বুঝতে পারিনি। পরে বিষয়টা ধরা পড়ে। রিনি বলেন, আমাদের পাঁচ বোনের একমাত্র ভাই ছিলেন আকরাম। তাকে মেরে ফেলা হলো, অথচ আমরা বিচার পেলাম না। বর্ণি আমার ভাইয়ের ফ্ল্যাট দখল করে সুখেই আছে। এখন আর তাদের অবৈধ সম্পর্কে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।

বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বলেন, বাবুল কোনো অপরাধ করলে আমি চাই তার শাস্তি হোক। আকরাম হোসেনের পরিবারও ন্যায়বিচার পাক। পুলিশ যদি এখন সঠিক তদন্ত করে তাহলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।

ঝিনাইদহের তৎলীন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান অনেকদিন তাদের গালিগালাজ করেছেন। মূলত বাবুলের প্রভাবের কারণেই তখন আমাদের পরিবার ন্যায়বিচার পায়নি। আমার বিশ্বাস, এখন সঠিক তদন্ত হলে, আমরা ন্যায়বিচার পাব।

এসব বিষয়ে বাবুল আক্তারের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ২২ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেনকে মিতু হত্যা মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারও সিএমপিতে এসে তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন। ২০১৬ সালের ৫ জুন নগরীর জিইসির মোড় এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!