• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার মন্ত্রীকন্যা বিদ্রোহী!


আরিফ সিদ্দিকী ডিসেম্বর ২, ২০১৬, ০৭:২৪ পিএম
এবার মন্ত্রীকন্যা বিদ্রোহী!

পাবনা: পাবনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল রহিম লাল। দলের বর্ষিয়ান ও ত্যাগী এই নেতাকে কেন্দ্রীয়ভাবেই দেয়া হয়েছে এ মনোনয়ন। তবে কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্তকে মানতে নারাজ ভূমিমন্ত্রী ও পাবনা জেলা সভাপতি শামসুর রহমান শরিফ ডিলুর মেয়ে মাহজাবিন শিরিন প্রিয়া।

মন্ত্রীকন্যা ইতোমধ্যে ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদটিও ত্যাগ করেছেন। এরপর দলীয় বিদ্রোহী হিসেবে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে জেলা নেতাদের মধ্যে।

মাহজাবিন শিরিন প্রিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও উজ্জ্বল। তিনি একদিকে ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।

প্রার্থিতা নিয়ে মাহজাবিন শিরিনের মনোবল শক্ত। তার কথা, ‘নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্যই আমার জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়া। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকব।’

এ ব্যাপারে দল মনোনীত প্রার্থী রেজাউল রহিম লাল বলেন, ‘নির্বাচন করার অধিকার দেশের প্রত্যেক নাগরিকেরই আছে। তবে কোনো ব্যক্তি দল সমর্থিত হয়ে থাকলে অবশ্যই তার দলের সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান কাম্য নয়। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান নিলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

জেলার একাধিক সিনিয়র নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলু নিজেই পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার স্ত্রী কামরুন্নাহার শরীফ ঈশ্বরদী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, মেয়ে প্রিয়া (বিদ্রোহী প্রার্থী) জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক; প্রিয়ার স্বামী আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র; মন্ত্রীর ছেলে সিহান শরিফ তমাল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি; মন্ত্রীর এক ভাই বশির আহমেদ বকুল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা; আরেক ভাই আনিস শরিফ লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ ছাড়া মন্ত্রীর বিভিন্ন আত্মীয়স্বজন মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

এমন পরিস্থিতিতে জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রকাশ্য বিদ্রোহী প্রার্থী বনে যাওয়ায় মাহজাবিন শিরিন প্রিয়াই শুধু নন, ভূমিমন্ত্রীকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে।

পাবনা আওয়ামী লীগকে ভূমিমন্ত্রী ‘পারিবারিক সংগঠন’ বানাচ্ছেন- এমন অভিযোগ তুলে ধরে জেলার কয়েকজন নেতা বলছেন, ‘এক পরিবার থেকে আর কত চান? 
সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় নাম থাকা জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক সরদার মিঠু আহমেদ নিজে দলের মনোনয়ন চেয়ে না পেলেও দলীয় সিদ্ধান্তকে সাধু বাদ জানিয়ে বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে গেলে তার দায় তাকেই নিতে হবে।’

পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, ‘আমরা শেষ সময় পর্যন্ত চেষ্টা করব কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী যেন না থাকে। তারপরও যদি কেউ নির্বাচনে অংশ নেন তাহলে দল তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

দলীয় বিদ্রোহী সম্পর্কে মনোনীত প্রার্থী রেজাউল রহিম লাল বলেন, ‘প্রিয়ার বাবার সঙ্গে রাজনীতি করছি। আমার ত্যাগ এবং দলে অবদানের কথা মানুষ জানে। সে (প্রিয়া) নির্বাচনে অংশ নেবে কি না সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। তবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অমান্য করে আওয়ামী লীগের কেউ এ ধরনের কাজে অংশ নিলে দল তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’ লাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করার মতো ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন তিনি (প্রিয়া)।’

রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে নারী আন্দোলনের নেত্রী বিদ্রোহী প্রার্থী মাহজাবিন শিরিন প্রিয়া বলেছেন, ‘আমি শিক্ষাজীবন থেকে রাজনীতি করছি। ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আজকের এই অবস্থান সৃষ্টি করেছি। বাবা-চাচা বা কারও দানে আমি এ অবস্থানে আসি নাই। নিজ যোগ্যতায় এই অবস্থান সৃষ্টি করেছি।'

উল্লেখ্য, গত ২২ আগস্ট ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে পাবনা জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যোৎসাহী হিসেবে মাহজেবিন শিরিন পিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৬-এর শ্রেষ্ঠ সমাজসেবা ও বিদ্যোৎসাহী ক্যাটাগরিতে তিনি ওই স্বীকৃতি লাভ করেন। এর আগে ২০১৫ সালেও তিনি শ্রেষ্ঠ বিদ্যোৎসাহী নির্বাচিত হয়েছিলেন। সামাজিক ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিভিন্ন পদক ও পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। ঈশ্বরদী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে মাহজেবিন শিরিন পিয়া একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। কয়েকমাস আগে তিনি এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!