• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এমপি-ইউএনওর বিরুদ্ধে সাঁওতালদের ফের মামলা


গাইবান্ধা প্রতিনিধি নভেম্বর ২৬, ২০১৬, ১০:০৯ পিএম
এমপি-ইউএনওর বিরুদ্ধে সাঁওতালদের ফের মামলা

গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জে সাঁওতালদের ওপর হামলার ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, ইউএনও, চিনিকলের এমডি, দুই ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে আরো একটি মামলা দায়ের করেছেন সাঁওতালরা। এই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

শনিবার (২৬ নভেম্বর) বেলা ২টায় থমাস হেমরম বাদী হয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

সাঁওতালদের ওপর হামলা, উচ্ছেদ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও গুলি করে মানুষ হত্যার অভিযোগে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার এ তথ্য জানিয়েছেন। এ সময় থমাস হেমরমকে সহায়তা করতে আইন ও শালিস কেন্দ্র, ব্লাস্ট, নিজেরা পারি এবং এএলআরডির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল থানায় উপস্থিত ছিল।

উল্লেখ্য, এর আগে একই ঘটনায় গত ১৬ নভেম্বর গভীর রাতে উপজেলার মুয়ালীপাড়া গ্রামের স্বপন মরমু বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। (মামলা নম্বর ২৩, তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১৬)। তবে ওই মামলার এজাহারে কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি।

শনিবারের মামলা প্রসঙ্গে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার জানান, ‘গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আউয়াল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নান, উপজেলার সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাকিল আহমেদ বুলবুল, কাটাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রফিক, ইক্ষু খামারের ম্যানেজার আব্দুল মজিদ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হোসেন ফুকুসহ ৩২ জনের নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা  আসামি করা হয়েছে।’

ওসি আরো জানান,  ‘এ-সংক্রান্ত একটি মামলা আগেই দায়ের করা হয়েছে। এ কারণে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন,  ‘ইতিপূর্বে স্বপন মরমুর দায়ের করা মামলায় এ পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

তবে স্বপন মরমুর মামলা দায়েরের পর সাঁওতাল নেতারা দাবি করেছিলেন, এ মামলা তাদের পক্ষ থেকে করা হয়নি। পুলিশ অতিউৎসাহী হয়ে মূল ঘটনা আড়াল করে দোষীদের বাঁচাতে ক্ষতিগ্রস্ত মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া গ্রামের বাইরের অন্য গ্রামের সাঁওতালদের ডেকে নিয়ে তাদের মতো করে মামলা দায়ের করেছে। এদিকে ‘জাতীয় আদিবাসী পরিষদ’-এর সভাপতি রবীন্দ্রনাথ নরেন আরো বলেছিলেন, ‘আগামীতে আমরা এ ঘটনায় মামলা দায়ের করব।’  শনিবার সেই মামলাই দায়ের করা হলো বলে সাঁওতালরা জানান।

প্রসঙ্গত, গত রবিবার (৬ নভেম্বর) গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায়-দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে তীরবিদ্ধ হয়েছেন ৯ পুলিশ সদস্য এবং গুলিবিদ্ধ হন চার সাঁওতাল। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনজন সাঁওতাল মারা যান।

ওই ঘটনার পর পুলিশ-র‌্যাব রবিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে। এ সময় তাদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ  লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা।

সংঘর্ষের ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক কল্যাণ চক্রবর্তী বাদী হয়ে ওই দিন রাতেই ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত চারজন সাঁওতালকে গ্রেফতার করে। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!