• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এমসিকিউ নিয়ে দোটানায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ২৭, ২০১৮, ০২:৪৪ পিএম
এমসিকিউ নিয়ে দোটানায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী

ঢাকা : বোর্ড পরীক্ষায় বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) থাকবে কী থাকবে না, এ দোটানায় চরম উৎকণ্ঠায় পড়েছে দেশের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রায় আড়াই মাস হয়ে গেলেও এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন ঘোষণা না আসাই দিনে দিনে এ উদ্বিগ্নতা আরো বাড়ছে।

কেননা পাবলিক পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি শুরু করতে হয় আগেভাগেই। এখন যদি এমসিকিউ না থাকে তো শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নেওয়া হবে বৃথা। আবার যদি থেকেও যায়, তবে দোটানার কারণে অনেক শিক্ষার্থী প্রস্তুতি নিতে পিছিয়ে পড়বেন। পরীক্ষার বিষয়ে এ ধরনের অনিশ্চয়তা ভাবিয়ে তুলছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদেরকে।

জানা গেছে, আগামী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষার্থী অংশ নিবেন। এই পাবলিক পরীক্ষাকে ভিত্তি করেই অন্যান্য শ্রেণির পরীক্ষায় প্রশ্ন তৈরি ও নম্বর বিভাজন করা হয়।

যদি পাবলিক পরীক্ষার এমসিকিউতে কোনো পরিবর্তন আসে, তাহলে সব শ্রেণির পরীক্ষায়ই সেই পরিবর্তন আসবে। সেই হিসাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব মিলিয়ে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীই তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় এমসিকিউ থাকা না থাকা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরাও এক ধরণের ধোয়াসার মধ্যে আছেন। শিক্ষাবর্ষের প্রায় আড়াই মাসেও প্রশ্ন ও নম্বর বণ্টন চূড়ান্ত না হওয়ায় এ বিষয়ে কোন গাইডলাইন পাননি তারা। ফলে ধোয়াসার মধ্যে থাকা শিক্ষকরাও পাঠ দান করতে পারছেন না তাদের পরিকল্পনা মাফিক।

গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এবারের এসএসসি পরীক্ষার প্রায় প্রতিটি বিষয়েই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ছিল। রচনামূলক অংশের প্রশ্ন ফাঁস না হলেও এমসিকিউ প্রশ্ন পাওয়া গেছে প্রতিটি পরীক্ষার আগেই।

এ পরিস্থিতিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সভায় পিইসি পরীক্ষা থেকেও এমসিকিউ উঠিয়ে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়; যদিও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) চলতি বছরের পিইসি পরীক্ষার যে চূড়ান্ত নম্বর বিভাজন প্রকাশ করে, তাতে এমসিকিউ রাখা হয়।

ছয়টি বিষয়ের মধ্যে বাংলায় ১০, ইংরেজিতে ২০, গণিতে ২৪, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ে ৫০, প্রাথমিক বিজ্ঞানে ৫০ ও ধর্ম বিষয়ে ৫০ নম্বরের এমসিকিউ থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে ওই নম্বর বিভাজনে। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন সংশ্লিষ্টরা।

২৫ ফেব্রুয়ারির সভা শেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছিলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় এমসিকিউ তুলে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। নকলমুক্ত সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা আয়োজন করতে সব চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে পরীক্ষা নিয়ে কোনো বিতর্ক না হয়।

এবারের এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছিলেন শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে এমসিকিউয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তা ছাড়া গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমসিকিউ তুলে দেওয়ার ইঙ্গিত দেন।

এ ব্যাপারে অভিভাবকরা বলছেন, এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি মূলত নবম শ্রেণি থেকেই শুরু হয়। কারণ নবম-দশম শ্রেণিতে একই বই। আগামী বছরে যারা এসএসসি পরীক্ষার্থী, তাদের নবম শ্রেণির প্রতিটি পরীক্ষায় এমসিকিউ ছিল।

তাদের জন্য হঠাৎ করেই তা উঠিয়ে দিলে ফল ভালো হবে না। তাই যদি এসএসসির এমসিকিউয়ের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে যারা আগামী বছর নবম শ্রেণিতে উঠবে তাদের জন্য নিতে হবে।

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আফিফ আম্মারের পিতা ফজলুল হক শেখ বলেন, আসলে পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে হবে, সেটাই বড় কথা। যদি এমসিকিউ না থাকে, তো আগেই জানিয়ে দেওয়া হোক।

বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখলে তো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য বড়ই কষ্টের হয়ে উঠবে। কারণ সময় না পেলে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া যায় না। আর প্রস্তুতি না নিতে পারলে তো নকল প্রবণতা আরো বেড়ে যাবে।

এমসিকিউ উঠিয়ে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনার দোলাচলে ভুগছে জেএসসি পরীক্ষার্থীরাও। কেননা ওই দুই পাবলিক পরীক্ষায় এমসিকিউ উঠে গেলে জেএসসি থেকেও উঠে যাবে। কিন্তু শিক্ষাবর্ষের প্রায় আড়াই মাস পার হয়ে গেলেও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো নির্দেশনা নেই জেএসসির শিক্ষার্থীদের কাছে।

ফলে আগামী পিইসি ও সমমানের প্রায় ৩০ লাখ, জেএসসি ও সমমানের ২১ লাখ এবং এসএসসি ও সমমানের প্রায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থীর সবাই এমসিকিউ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। আর এ উৎকণ্ঠতার ছাপ শিক্ষাবীদদের উপরও ভর করেছে।

শিক্ষাবিদ এবং বুয়েট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে না পেরে এমসিকিউ পদ্ধতি উঠিয়ে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত  নেওয়া হচ্ছে তা যৌক্তিক হয়নি। সারা পৃথিবী যেখানে এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয় সেখানে আমরা এটা পারছি না। কেন পারছি না? আমরা কি খারাপ জাতি?

তিনি বলেন, তবে সরকারি যদি এমসিকিউ বাতিলের সিদ্ধান্তে অটল থাকে তো সেটা ঝুলিয়ে রাখার কিছু নেই। কারণ এটা শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবনায় ফেলে দিচ্ছে।

তিনি পরামর্শ রেখে বলেন, প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে প্রশ্নব্যাংকও করা যেতে পারে। যেখান থেকে খুব কম সময়ে প্রশ্ন যাচাই করে পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। প্রশ্ন ব্যাংকের এমন পদ্ধতি থাকতে হবে যেখানে একটি পছন্দ করলে দ্বিতীয়বার সেটি পছন্দ করার সুযোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে একই প্রশ্ন বারবার আসবে না। তাতে ফাঁসের সুযোগটাও কমে আসবে।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!