• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এরশাদের মনোনয়ন বাণিজ্য চাঙ্গা!


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ২৪, ২০১৭, ০৫:৩৫ পিএম
এরশাদের মনোনয়ন বাণিজ্য চাঙ্গা!

ঢাকা: নির্বাচন ঘনিয়ে এলে নড়েচড়ে বসেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। অংশ নেন বা না নেন স্থানীয় বা জাতীয় সব স্তরের নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ ঠিকই করেন তিনি। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা থাক বা থাক এমন প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলে বছর জুড়েই।

সংশ্লিষ্ট জায়গায় দলের জনসমর্থন বা কমিটি না থাকলেও থাকবে এরশাদের প্রার্থী। নির্বাচনের ২-৩ বছর আগেই ঘোষণা দিয়ে দেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রার্থীর নাম। আবার নির্বাচন সময় ঘনিয়ে এলে মনোনীত প্রার্থীও কয়েকদফা বদল করেন তিনি। আর এসব প্রার্থী বাছাইয়ের পেছনে এরশাদকে খুশি রাখার বিষয়টিও ‘ওপেন সিক্রেট’।

পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ জাতীয় নির্বাচনের প্রতিটি আসরেই তিনশত আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেন নির্বাচনের অনেক আগেই। এছাড়া গত ২০-২৫ বছরে স্থানীয় নির্বাচনের সব কয়টি বিভাগে নির্বাচন না করলেও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজে পিছিয়ে থাকেননি তিনি।

প্রতিটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে ‘টাকা ওয়ালা’ ব্যক্তিরা পান জাতীয় পার্টির মনোনয়ন। এদের কারো কারো দল করার রের্কড না থাকলেও শুধু এরশাদকে খুশি করতে পারলেই মেলে মনোনয়ন। আবার জাতীয় পার্টির কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম নীতি হলো ‘টাকা নেই তো পদ নেই’। এমন কথাই শোনা যায় বঞ্চিতদের পক্ষ থেকে।

এরশাদের পতনের পর জাতীয় পার্টি জাতীয় নির্বাচনের প্রতিটি আসরেই অংশ নেয়। নির্বাচনের প্রার্থী এবং প্রাপ্ত ভোট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রায় ৮৫ শতাংশ আসনেই জামানত হারান এরশাদের প্রার্থীরা।

গত জাতীয় নির্বাচনগুলোতে বৃহত্তর রংপুর, সিলেট এবং খুলনায় জাতীয় পার্টির অবস্থান কিছুটা ভালো দেখা গেলেও বর্তমান সময়ে এসে তা ভেঙে পড়েছে। এখন অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকায় জাতীয় পার্টির কোনো কার্যক্রম নেই। তারপরও প্রার্থী মনোনয়নে এগিয়ে রয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।

১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সর্বমোট ২৭২টি আসনে প্রার্থী দেয়। এতে মাত্র ৩৫টি আসন পায় এরশাদের দল। সেই নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে মাত্র ১১ শতাংশ ভোট পায় জাতীয় পার্টি। অধিকাংশ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ৯৬ সালের ৬ষ্ঠ নির্বাচনে কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গে জোট করে ২৯৩টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৩২টি আসন পায় দলটি।

২০০১ সনে ২৮১টি আসনে প্রার্থী দিয়ে প্রাপ্ত আসনে সংখ্যা ১৪টি। ২০০৮ সনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে ৪৯টি আসনে প্রার্থী দিয়ে আসন পায় ২৭টি। সর্বশেষ ২০১৪ সনে দশম সংসদ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে ৮৬টি আসনে মধ্যে ৩৪টি আসনে জয় পায়। যদিও সেই নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেকগুলো দল অংশ নেয়নি। সেখানে এরশাদের দল ভোট পায় মাত্র ৭ শতাংশ।

৫ম সংসদ থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই এরশাদের ভোটের হার কমতে থাকে। সর্বশেষ বর্তমান সরকারের আমলে দেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে জাতীয় পার্টির অবস্থা এতটাই করুন, এরশাদের দুর্গখ্যাত রংপুরেও জিততে পারেনি তার দল।

তারপরও প্রতিবছরই নির্বাচন আসার আগেভাগে মনোনয়ন দেওয়ার কাজে ব্যস্ততা বেড়ে যায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের। শোনা যায়, দলের নেতা বানানো এবং মনোনয়ন দেওয়া ছাড়া এরশাদ পার্টির অন্য কোনো কাজে ততটা বেশি মনোযোগী নন।

চলতি মাসে এরশাদের বনানী কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে হঠাৎ খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেন এরশাদ। যদিও সেই সিটি নির্বাচন এখনো দেড় বছর বাকি। খুলনা সিটি মেয়র প্রার্থী মুশফিকুর রহমান নগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল কাশেম হত্যা মামলার অন্যতম আসামি।

শেখ আবুল কাশেমের সহোদর শেখ আবুল হোসেন নগর জাতীয় পার্টির চলমান কমিটির সভাপতি। জেলা নেতাদের মতে- বলা নেই, কওয়া নেই, হঠাৎ কেন প্রার্থী দিলেন এরশাদ। এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফিরছেন অনেকে।

এদিকে, দলীয় নেতা হত্যা মামলার আসামিকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণায় খুলনা নগরীর প্রভাবশালী জাতীয় পার্টি পরিবার ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় জাপায় গণপদত্যাগের হুমকিও দিয়েছেন জেলা ও মহানগর নেতারা। নির্বাচনের এতটা আগে প্রার্থী ঘোষণার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি জেলা জাতীয় পার্টির নেতারা। বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে এরশাদের দলে নাম লিখিয়ে তিনি এখন খুলনার মেয়র প্রার্থী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেখ আবুল কাশেমের পরিবারের একজন জানান, সন্ত্রাসীর জাতীয় পার্টিতে প্রবেশে দলের ইমেজ নষ্ট হয়েছে। তা ছাড়া এই যোগদানকারী বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টির কর্মীদের ওপর হামলা ও সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। শেখ আবুল কাশেমের নিকটাত্মীয়রাও জাতীয় পার্টির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুব সংহতি ও ছাত্র সমাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তারা এমন মনোনয়নের পেছনে ভিন্ন কোনো কারণ দেখছেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে অন্তত ১০০ আসনে শিল্পপতিদের দিয়ে নির্বাচন করাতে চায় জাতীয় পার্টি। সে জন্য সারা দেশে বিত্তশালীদের পার্টিতে ভেড়ানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু বাদ সেধেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের নতুন আইন অনুযায়ী, কমপক্ষে তিন বছর দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলে কেউ ওই দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। সে জন্য গোপনে জাতীয় পার্টিতে শিল্পপতি ব্যবসায়ীদের যোগদানের কাজ চলছে।

বিত্তশালীদের যোগদানের বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন রাখছে দলটি। সময়-সুযোগমত জানিয়ে দেওয়া হবে বিত্তশালী ওই নেতা তিন বছর আগেই পার্টিতে যোগদান করেছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে এসএ টেলিভিশনের স্বত্ত্বাধিকারী সালাউদ্দিন আহমেদ, মাই টিভির স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন সাথী, আইসিএল গ্রুপের এমডি শফিকুর রহমান, টাঙ্গাইলের সৈয়দ ইউসুফ আবদুল্লাহ তুহিনসহ অনেকে ইতোমধ্যে পার্টিতে যোগদান করেছেন। এছাড়া আলাচনা আছে আরো অনেককে নিয়ে।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, একদিকে এইচ এম এরশাদ ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে, জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এটাকে আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী কর্মকাণ্ড মনে হতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রিয় নেতা এইচ এম এরশাদ রাজনৈতিক মেরুকরণের সব দরজা খোলা রেখেছেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!