• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
শহীদ হয়েছিল শত শত তাজা প্রাণ

ঐতিহাসিক ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস আজ


ফরহাদুজ্জামান ফারুক, রংপুর মার্চ ২৮, ২০১৭, ০৫:৩৬ পিএম
ঐতিহাসিক ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস আজ

রংপুর: আজ ২৮ মার্চ - ঐতিহাসিক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেড়াও দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে রংপুরের আদিবাসী সাঁওতাল, ওরাওঁসহ মুক্তিপাগল সাধারণ এবং মানুষ তীর-ধনুক, লাঠি-সোঠা, দা-কুড়াল, বর্শা-বল্লম ‘যার যা আছে’ তাই নিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করতে গিয়ে এক নজিরবিহীন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট মুক্ত করা।

এই দু:সাহসিক অভিযানে পাকিস্তানী সেনাদের মেশিনগানের উপর্যুপরি গুলিবর্ষণে পাখির মত প্রাণ হারিয়েছেন শত শত বীর জনতা। বাংলাদেশর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে রংপুরের মানুষের এই দুঃসাহসিক অভিযান এবং আত্মদানের কথা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

১৯৭১ এর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু কতৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাত্র একদিন পরই রংপুরের মুক্তিপাগল বীর জনতা ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল সে পথ ধরেই সূচিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রাম। একাত্তরের তিন মার্চ কিশোর শংকুসহ তিনজন শহীদ হওয়ার পর রংপুরের স্বাধীনতাকামী মানুষ সংগঠিত হতে থাকে। প্রস্তুতি গ্রহণ করে সশস্ত্র সংগ্রামের। এরই অংশ হিসেবে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও এর ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্বাধীনতাকামী মানুষ।

দিনক্ষণ ঠিক হয় ২৮ মার্চ। ঘেরাও অভিযানে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে রংপুরের বিভিন্ন হাটে-বাজারে ঢোল পেটানো হয়। আর এ আহ্বানে অভূতপূর্ব সাড়া মেলে। সাজ সাজ রব পড়ে যায় চারদিকে। যার যা আছে তাই নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নেয় এ অঞ্চলের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ছাত্র, কৃষক, দিনমজুরসহ সকল পেশার সংগ্রামী মানুষ।

রংপুরের আদিবাসীরাও তীর-ধনুক নিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকে। এক্ষেত্রে মিঠাপুকুর উপজেলার ওরাঁও সম্প্রদায়ের তীরন্দাজ সাঁওতালদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তীর-ধনুক, বল্লম, দা, বর্শা নিয়ে তারা যোগ দিয়েছিল ঘেরাও অভিযানে।

কিন্তু পাকিস্থানী সেনাকর্মকর্তারা রংপুরের মানুষের ২৮ মার্চ ক্যান্টনমেন্ট ঘেড়াও করার পরিকল্পনা আগেভাগেই জানতে পেরেছিল। তাই তারাও প্রস্তুত হয়েছিল ব্রাউনিং মেশিনগানে সজ্জিত গোটা দশেক জীপ নিয়ে ।

ঐদিন বিকেল তিন টার পর চারদিক থেকে আসা মুক্তিকামী মানুষের ঢল যখন ক্যান্টনমেন্টর কাছে চলে আসে তখনই একযোগে গর্জে ওঠে সবগুলো মেশিনগান। একটানা পাঁচ মিনিট গুলি চলে। পাখির মত লুটিয়ে পড়ে শত শত মানুষ। চারদিকে তাজা রক্তের বন্যা বয়ে যায়।

মেশিনগানের গুলিতে সঙ্গে সঙ্গেই যাদের মৃত্যু ঘটেছিল। কিন্তু আহত মানুষের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছিল চারিদিকের বাতাস। বর্বর পাকিস্থানী সেনারা নিহত আহত সব মানুষকে টেনে-হিচড়ে এক জায়গায় জড়ো করে তাদের উপর পেট্রোল ঢেলে আগুণ জ্বালিয়ে দেয়। জীবন্ত পুড়ে ছ্ইা হয় নিহত এবং আহত মানুষগুলো।

রংপুর শহরের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত মডার্ন মোড়ে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ “অর্জন” এবং নিসবেতগঞ্জের “রক্তগৌরব” ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চে রংপুরের মানুষের সেই দুঃসাহসিক গৌরবগাথা এবং বীর শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

শহীদদের স্মরণে নগরীর নিসবেতগঞ্জ হাটের পাশে নির্মিত ‘রক্ত গৌরব’ স্মৃতিস্তম্ভে দিবসটি উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল থেকেই আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিভিন্ন সংগঠনেরসহ স্থানীয় এলাকাবাসী সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!