• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওভারলোড হয়ে পুড়ছে হাজার হাজার ট্রান্সফরমার


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২২, ২০১৬, ০১:৪৪ পিএম
ওভারলোড হয়ে পুড়ছে হাজার হাজার ট্রান্সফরমার

বিদ্যুৎ খাতে সঞ্চালন ও বিতরণ সক্ষমতা আশানুরূপ না বাড়লেও প্রতিনিয়ম বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। ফলে ওভালোডেড হয়ে প্রতিদিনই পুড়ে যাচ্ছে বিপুলসংখ্যক ট্রান্সফরমার। মূলত সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বেড়ে যাওয়াতেই ওভারলোডেড হয়ে পড়ছে বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থার ট্রান্সফরমার। শুধুমাত্র গত মে মাসেই পুড়ে গেছে ৫ হাজার ৩৭৯টি ট্রান্সফরমার।

তাতে একদিকে যেমন সরকারের অর্থ অপচয় বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে গ্রাহকের ভোগান্তিও। যদিও ২০১৪ সালে বিদ্যুৎ বিভাগ ট্রান্সফরমারের ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে আনা ও পুড়ে যাওয়া রোধে নীতিমালা করেছে। তার আওতায় বেশকিছু নির্দেশনা জারি করা হয়। তবে পরিস্থিতির খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। বিশেষত গরম বাড়লেই ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ার হার বেড়ে যায়। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে বর্তমানে ২৮ হাজার ৮১টি ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড অবস্থায় আছে। সেগুলোর সরবরাহক্ষমতা প্রায় ৯ লাখ ২২ হাজার কিলো ভোল্ট। তার মধ্যে শুধু  মে মাসেই পুড়ে গেছে ৫ হাজার ৩৭৯টি। তাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকার। ওভারলোডেড ও পুড়ে যাওয়া ট্রান্সফরমারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (পবিবো)। সেজন্য সংস্থাটির বিভিন্ন সমিতির আওতায় নতুন সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। তারপরই রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি)।

সূত্র জানায়, সরকার ২০০৯ সাল থেকে দেশে ৭৪টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে ১০১টি। ওসব কেন্দ্রের সর্বোচ্চ উৎপাদনক্ষমতা ১২ হাজার ৩৩৯ মেগাওয়াট। ২০০৯-এর আগে তা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। অথচ সে অনুপাতে সঞ্চালন ও বিতরণ সক্ষমতা বাড়েনি।

২০০৯ সালে সঞ্চালন লাইন ছিল ৮ হাজার সার্কিট কিলোমিটার। এখন তা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭৮৯ সার্কিট কিলোমিটার। আর বিতরণ লাইন ২ লাখ ৬০ হাজার ৩০০ কিলোমিটার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার কিলোমিটারে। অথচ নতুন লাইন অনেক কম বাড়লেও বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২০০৯ সালে দেশের ৪৭ শতাংশ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় থাকলেও এখন তা দাঁড়িয়েছে ৭৬ শতাংশে। সামগ্রিক বিদ্যুতের লোড বাড়ায় ওভারলোডের সমস্যা বাড়ছে।

সূত্র আরো জানায়, দেশের অনেক এলাকাতেই সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি সংযোগ দেয়া হয়েছে। ফলে হঠাৎ কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। আর বাড়তি চাহিদা তৈরি হওয়াকেই ওভারলোড বলা হয়। ওই সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে না দিলে বিতরণ ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দেয়।

বিতরণ কোম্পানিগুলো পিক আওয়ারে (সর্বোচ্চ চাহিদার সময়) ওভারলোডেড ফিডারগুলোয় একাধিকবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। ফলে লোডশেডিং বেড়ে যায়। বর্তমানে পবিবোর ২৬ হাজার ৪৪৮টি ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড। ওসব ট্রান্সফরমারের সরবরাহ সক্ষমতা ৬ লাখ কিলো ভোল্টেরও বেশি। ওভারলোডেড ট্রান্সফরমারের কারণে বেশকিছু সমিতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

আর মে মাসে সংস্থাটির ৫ হাজার ২৯১টি ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে। আর পিডিবির ওভারলোডেড ট্রান্সফরমারের সংখ্যা ১ হাজার ১৮৯টি। সেগুলোর সরবরাহ সক্ষমতা ২ লাখ ৩২ হাজার কিলো ভোল্ট। তার মধ্যে মে মাসে সংস্থাটির ১৭টি ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে। একইভাবে ঢাকার একাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ডিপিডিসির ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার রয়েছে ৪০৯টি। তার মধ্যে গত মাসে পুড়ে গেছে ৮৮টি।

আর ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার ২৬টি। তার মধ্যে মে মাসে পুড়ে গেছে ১৯টি। তবে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। রাজধানীর অন্য অংশে বিদ্যুৎ বিতরণকারী এ কোম্পানির ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার মাত্র ৯টি। তবে গত মাসে এর ৮টিই পুড়ে গেছে।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম জানান, ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার কমিয়ে আনতে নিয়মিত সব সংস্থার কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে। তাছাড়া ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ার দায়দায়িত্ব নিরূপণে সব সংস্থাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতি মাসে মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে। তাতে দুই বছরে সমস্যা অনেকখানি কমিয়ে আনা গেছে। আগামীতে ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার আরো কমে আসবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম
 

Wordbridge School
Link copied!