• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ানডে সিরিজও হাত ছাড়া মাশরাফিদের


ক্রীড়া প্রতিবেদক অক্টোবর ১৮, ২০১৭, ০৯:৫৬ পিএম
ওয়ানডে সিরিজও হাত ছাড়া মাশরাফিদের

ঢাকা: গত আড়াই বছর ধরে দুর্দান্ত সময় পার করে আসছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডকে হারিয়ে লাল সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন মাশরাফি-মুশফিকরা। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়াও সিরিজ জিতে যেতে পারেনি। এমনকি শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাদের জিততে দেয় টাইগাররা। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দাঁড়াতেই পরেছে না তামিম-সাকিবরা। টেস্ট সিরিজের পর এবার ওয়ানডে সিরিজও হাত ছাড়া হলো মাশরাফিদের।

দক্ষিণ আফ্রিকার পাহাড়সম ৩৫৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৭.৫ ওভারে ২৪৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ফলে ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে সিরিজে ২-০ তে পিছিয়ে পড়ে মাশরাফির দল। 

এদিন ভাল ভাবেই শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস। চাহিদা অনুযায়ী বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই রান তুলছিলেন তারা। কিন্ত ইনিংসের অষ্টম ওভারে বাংলাদেশকে বড় ধাক্কা দেন ডোয়াইন প্রেটোরিয়াস। টাইগারদের সবচেয়ে বড় ভরসা তামিমকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন এই প্রোটিয়া পেসার।

এরপর ইমরুলের সঙ্গে যোগ দেন লিটন কুমার দাস। তিনি চার-ছক্কা হাঁকিয়ে দারুন কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই আন্দিলে ফেলুকওয়োর বলে এলবিডব্লিউ হন লিটন। বল ব্যাটে লেগেছে মনে করে রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের।

৬৯ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়েন ইমরুল ও মুশফিক। ব্যাট হাতে সেরাটা দিয়ে বাংলাদেশকে খেলায় রাখেন তারা। তাতে দেড়শ রান পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। সেই সাথে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান ইমরুল। গত বছরের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৯ রানের পর ৪ ইনিংস বাদে হাফ-সেঞ্চুরি পেলেন ইমরুল।

এরপর ইমরান তাহিরের জোড়া আঘাতে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। তাহিরের করা ২৯তম ওভারের শেষ বলে এক্সট্রা কাভারে ডি ভিলিয়ার্সকে সহজ ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ইমরুল। লাল সবুজ দলের অন্যতম ভরসার প্রতীক সাকিব আল হাসানও এদিন নিজেকে মেলে ধরতে পারেন নি। দলীয় ১৭১ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার লেগ-স্পিনার ইমরান তাহিরকে অহেতুক খোঁচা মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাকিব। তখন তার নামের পাশে মাত্র ৫ রান।

এরপর বাংলাদেশের আশা-ভরসার প্রতীক হিসেবে ছিলেন মুশফিকুর। সাথে ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ-সাব্বির রহমান-নাসির হোসেনের মত ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু হতাশ করেছেন তারা। ক্যারিয়ারের ২৭তম হাফ-সেঞ্চুরির তুলে ৬০ রানে থেমে যান মুশফিকুর। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭০ বল মোকাবেলায় নিজের ইনিংসটি সাজান মুশি।

এরপর দলের হাল ধরতে ব্যর্থ হন পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা। তাই ২৪৯ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষদিকে মাহমুদুল্লাহ ৩৫, সাব্বির ১৭ ও নাসির ৩ রান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ফেলুকুয়াও ৪টি ও তাহির ৩টি উইকেট নেন।

বুধবার (১৮ আক্টোবর) পার্লের বোল্যান্ড পার্ক ওভালে টস জিতে ফিল্ডিং নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক ও হাশিম আমলা দারুন সূচনা করেন। ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা উদ্বোধনী জুটি ভেঙে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান।

১৮তম ওভারে সাকিব আল হাসানের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদানে নিজের প্রথম ওভারেই ব্রেক থ্রু এনে দেন বিশ্বসেরা এই বাংলাদেশি অলরাউন্ডার। ওভােরের তৃতীয় বলে কুইন্টন ডি কককে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন সাকিব। ওভারের শেষ বলে ফাফ ডু প্লেসিসকে সরাসরি বোল্ড করে সাঝঘরে ফেরান এই স্পিনার।

একই ওভারে দুই উইকেট হারিয়েও দক্ষিণ আফ্রিকার রানের চাকা থামেনি। তৃতীয় উইকেটে আমলা ও ডি ভিলিয়ার্স ১৩৬ রানের জুটি গড়ে প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়ে উঠতে সহায়তা করেন। আমলাকে থামিয়ে ১৩৬ রানের জুটি ভাঙেন রুবেল হোসেন। তার করা ৩৬তম ওভারের শেষ বলে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে আমলা ফিরে গেলে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফেরে টাইগার শিবিরে।

কিন্তু সেই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। চতুর্থ উইকেটে ডুমিনিকে নিয়ে ৭০ বলে ১১৭ রানের ঝোড়ো জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে দেন ডি ভিলিয়ার্স। তবে এই মারকুটে ব্যাটসম্যানকে ডাবল সেঞ্চুরি করতে দেননি রুবেল হোসেন। এই পেসারের করা ৪৮তম ওভারের চতুর্থ বল তুলে মারতে সাব্বির রহমানের ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ভিলিয়ার্স। তার আগে ১০৪ বলে ৭টি ছক্কা আর ১৫টি চারের মারে ১৭৬ রান করেন তিনি।

ডি ভিলিয়ার্স আউট হওয়ার পর অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে আটকে রাখেন পেসাররা। তাসকিন এবং রুবেলের করা শেষ ১৪ বলে মাত্র ১০ রান নিতে সক্ষম হয় প্রোটিয়ারা। তবুও স্বাগতিকদের রান দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ৩৫৩।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে রুবেল হোসেন ৬২ রান দিয়ে নেন ৪টি উইকেট। বাকি দুই উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান।

সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুশফিকুর রহিমের শতকে ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৮২ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েও পাত্তা পায়নি বাংলাদেশ। ১০ উইকেটেই ম্যাচটি জিতে নেয় প্রোটিয়ারা।

আগামী ২২ অক্টোবর ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে মাশরাফির বাংলাদেশ। এখন দেখার বিষয় শেষ ওয়ানডে জিতে অন্তত হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারে কি-না বাংলাদেশ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!