• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
মিয়ানমারের নতুন কৌশল

কখনো দেশে ফিরতে পারবে না রোহিঙ্গারা!


আন্তর্জাতিক ডেস্ক জানুয়ারি ১৭, ২০১৭, ১১:১৬ এএম
কখনো দেশে ফিরতে পারবে না রোহিঙ্গারা!

ঢাকা: রোহিঙ্গা হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন অগ্নিসংযোগের পর এবার ‍নতুন কৌশলে মিয়ানমার। জরিপ চালিয়ে রোহিঙ্গাদের নাম নিবন্ধন করছে দেশটির সরকার। এতে প্রাণভয়ে পালিয়ে থাকা হাজার হাজার রোহিঙ্গা আজীবনের জন্য মিয়ানমারের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।

মিয়ানমারের এ সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। রাখাইন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নে পুকে দেয়া এক চিঠিতে জাতিসংঘের রাখাইন বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা চেরিস কার্টার বলেছেন, সহিংসতা বন্ধের পর পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা যাতে নিজ গৃহে ফিরে যেতে না পারেন সে জন্যই এমন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয় সমন্বয়ের দফতর ‘ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউমেনিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স’ (ইউএনওসিএইচএ) সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছে, রোহিঙ্গাদের শতাধিক ভবন ইতিমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মালিকানাধীন আরও ৮১৯টি ভবন গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। এর মধ্যে ৬৯৬টি ভবন হল সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাসগৃহ। অন্যদিকে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের দেড় হাজার ভবন ভেঙে দিয়েছে মিয়ানমার। রাখাইন রাজ্যের তিনটি শহরে রোহিঙ্গাদের আবাস। এ তিনটি শহর হল- রেদিডং, বুথিডং ও মংডু। এই তিন শহরে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের ৯ অক্টোবর সীমান্ত চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলায় মিয়ানমারের ৯ জন বিজিপি সদস্য নিহত হওয়ার জের ধরে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে অভিযান শুরু করে। অভিযানে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও নারীদের ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি’র বিশেষ দূত চাও টিন বাংলাদেশ সফর করে সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে যাচাই-বাছাই করে দেখার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় জরিপ ও উচ্ছেদ অভিযানের কারণে প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সোমবার যুগান্তরকে বলেন, মিয়ানমারের বিশেষ দূত সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলেছেন। আমরা রোহিঙ্গা সংকট স্থায়ীভাবে সমাধানের লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তাব দিয়েছি। কূটনৈতিক টেবিলে এ প্রক্রিয়া চলার মধ্যে মাঠপর্যায়ে যদি এ পরিস্থিতি বিরাজ করে তবে তা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে মারাত্মক ব্যাহত করবে। কেননা পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ভেঙে ফেলা এবং তাদের জরিপের বাইরে রাখায় যাচাই-বাছাইয়ে রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে তাদের কোনো প্রমাণ থাকবে না। সরকারের জরিপে আবাসিক ঠিকানায় তাদের নাম থাকবে না। ফলে সহিংসতা বন্ধ হলেও তাদের নিজ বাড়িঘরে ফিরে যাওয়ার কোনো আইনগত সুযোগ থাকবে না।

এদিকে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কারণে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করে তাদের জমি কর্পোরেটের হাতে তুলে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে বরং নির্যাতনের হুমকি দেয়া হচ্ছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, মিয়ানমারে এ প্রক্রিয়া নতুন নয়। বরং নব্বইয়ের দশকে শুরু হয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর অভিযান চলাকালে রোহিঙ্গা উচ্ছেদের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।

রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের মালিকানাধীন ১২ লাখ ৬৮ হাজার ৭৭ হেক্টর (৩১ লাখ একর) জমি কর্পোরেটদের বরাদ্দ দিয়েছে।

জাতিসংঘের রাখাইন বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা চেরিস কার্টার তার চিঠিতে বলেন, রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলা এবং এ সময়ে রোহিঙ্গাদের খানা জরিপ পরিচালনা করা উস্কানিমূলক। রোহিঙ্গাদের নজরে রাখার জন্য প্রতিবছরই খানা জরিপ পরিচালনা করা হয়। তবে সেই জরিপ শুরু হয় জানুয়ারি মাসে। কিন্তু এ বছর জরিপ শুরু করা হয়েছে নভেম্বরে। অর্থাৎ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সেনা অভিযান শুরুর পর। অভিযান শুরুর সময়েই দমন-পীড়নের ভয়ে অন্তত ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। তাদের একটা বড় অংশ আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। তাছাড়া গোটা রাখাইন রাজ্যে এমন জরিপ হয়নি। এ জরিপ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত তিন শহরেই সীমিত। যারা বাংলাদেশে পালিয়ে না এসে মিয়ানমারের কোনো স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের নামও জরিপ তালিকায় থাকবে না। এটা রোহিঙ্গা সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!