• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
পাওয়া যাবে জীবনাচরণের তথ্য

কচ্ছপের পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার


বাগেরহাট প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৭, ১০:৪৭ পিএম
কচ্ছপের পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার

বাগেরহাট: বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রানি প্রজনন কেন্দ্রে বিশ্বে ‘বিলুপ্তপ্রায়’ প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকা’র এখন সংরক্ষণ ও প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে চলেছে। এই প্রজনন কেন্দ্রে কচ্ছপ বাটাগুর বাসকা’র বেড়ে ওঠা, প্রজনন এবং ডিম পাড়ার জন্য জন্য ইতোমধ্যেই তৈরী ও খনন করা হয়েছে একাধিক পুকুর, নালা, সেডসহ প্যান (কৃত্রিম পুকুর) ও ডিমপাড়াল স্থান।

বর্তমানে এই প্রজনন কেন্দ্রে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ১শ’ ১৭টি কিশোর ও ১০টি বড় বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ রয়েছে। এরমধ্য থেকে সব থেকে বড় দুটি বাটাগুর বাসকা কচ্ছপের পিঠে স্যাটালাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) ভাটার সময় ছেড়ে দেয়া হয়েছে সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগর মোহনায়। বড় দুটি বাটাগুর বাসকা’র পিঠে বসিয়ে দেয়া স্যাটালাইট ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে এখন সুদুর ইউরোপিয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বসে এই কচ্ছপের জীবনাচরণের তথ্য ও ছবি স্পষ্ট দেখা যাবে।

গবেষণার মধ্য দিয়ে জানা যাবে বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির এই কচ্ছপের স্বভাব, খাদ্য সংগ্রহ, বিচরণ, পরিবেশসহ বঙ্গোপসাগরের গভীর না অগভীর পানিতে থাকতে পছন্দ করে সে সব বিষয়।

এছাড়া এই দুটি কচ্ছপ বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশ ছেড়ে ভারত ও শ্রীলঙ্কা অংশে যায় কিনা জানা সম্ভব হবে। এখন থেকে দীর্ঘ এক বছর ধরে কচ্ছপটির গতিবিধি পর্যালোচনা করা হবে। পর্যলোচনা ও গবেষণা শেষে সুন্দরবন এবং বঙ্গোপসাগরে এ প্রজাতির কচ্ছপের আরো বাচ্চা অবমুক্ত করা হবে। করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্র থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রণি প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৌহিদুর রহমান জানান, বাংলাদেশের বন বিভাগ, আমেরিকার টারটেল সারভাইভাল এলায়েন্স, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা জু ও প্রকৃতি জীবন ফাউন্ডেশনের অথর্আয়ানে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রণি প্রজনন কেন্দ্রের কুমির ও হরিণের পাশাপাশি ২০১৪ সালে গড়ে তোলা হয় বাটাগুর বাসকা’র কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র। বিশ্বে ‘বিলুপ্তপ্রায়’ প্রজাতির তালিকায় থাকা বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ করমজলে প্রজননের আগে বিশ্বের মধ্যে শুধু মাত্র সুন্দরবনসহ বাংলাদেশ ও ভারতে ছিলো মাত্র ১শ টির মতো।

মাত্র ৩ বছরে সুন্দরবনের করমজলে প্রজননের মাধ্যমে এর সংখ্যা এসে দাড়ায় ১২৭টিতে। বর্তমানে করমজল কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রে বর্তমানে ১শ ১৭ কিশোর-কিশোরী ও ১০টি বড় বাটাগুর বাসক প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি বড় পুরুষ ও ৪টি নারী কচ্ছপ রয়েছে। বড় অন্য দুটির পিঠে পিঠে স্যাটালাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে রোবাবর (৫ ফেব্রুয়ারি) ভাটার সময় ছেড়ে দেয়া হয়েছে সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগরের মোহনার আদাচাই এলাকার সগিরের পানিতে। এছাড়া ৮টি কচ্ছপ চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ডিম দিবে। এরপর ডিম থেকে ফুটে বের হওয়া বাচ্চাগুলো প্রাপ্ত বয়স্ক হলে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরে অবমুক্ত করা হবে।

বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ঢাকা অঞ্চলের বন সংরক্ষক জাহিদুল কবির বলেন, বিশ্বের সংকটাপন্ন এই প্রজাতির কচ্ছপ  বাংলাদেশ ও ভারতের অংশে রয়েছে মাত্র ১শ টির মত। বিলুপ্ত প্রায় এ প্রাণীকে আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। এ জন্যই মূলত এ আয়োজন কিংবা উদ্যোগ।

তিনি আরো বলেন, বিলুপ্তির পথে থাকা এই প্রজাতির কচ্ছপ রক্ষায় ২০০৮ সালে উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালে করমজলে এ প্রজাতির কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। মূলত এ প্রাণীটির স্বভাব, খাদ্য সংগ্রহ, বিচরণ, পরিবেশসহ বঙ্গোপসাগেরর গভীর না অগভীর পানিতে থাকতে পছন্দ করে সে সব বিষয়ে জানার জন্য দুটি কচ্ছপের পিঠে স্যাটেলাই ট্রান্সমিটার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।

সুন্দরবনের জেলে-বাওয়ালীদের জালে যদি কখনও এ কচ্ছপ দুইটি আটকা পড়ে তাহলে তারা যেন আমাদেরকে খবর দেয়। তা না হলে তারা যেন দ্রুত জাল থেকে অবমুক্ত করে দেয়। এ জন্য জেলে-বাওয়ালী, র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, পুলিশ ও নৌ বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন। সকলের প্রচেষ্টা ছাড়া কোনভাবেই এ প্রাণীটিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!