• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি খালেদা জিয়া, লড়ছেন একাই


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৪, ২০১৮, ০৩:৩৫ পিএম
কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি খালেদা জিয়া, লড়ছেন একাই

ঢাকা: কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মুক্তির জন্য পর্দার আড়ালের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা এবং চিকিৎসার জন্য পছন্দের হাসপাতাল পেতে এখন একাই লড়ছেন তিনি। বিএনপি নেতা এবং নিজের আইনজীবীদের ওপর চরম ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া। দলটির একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

বিএনপি সমর্থক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, ৯০-এ স্বৈরাচার হটিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নায়ক ছিলেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গের মতো ত্যাগ স্বীকারেও দ্বিধা নেই তার। এ লড়াইয়ে হারতে রাজি নন তিনি। সাক্ষাৎ দেওয়া পরিবারের সদস্য এবং দলীয় নেতাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে এ বার্তাই দিয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। 

পুরান ঢাকার বিশেষ কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, গত সোমবার থেকে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু সেখানে যেতে রাজি নন তিনি। খালেদা ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া চিকিৎসা নেবেন না। গুঞ্জন রয়েছে, এর আগে বিএনপিপ্রধানের কাছে প্রস্তাব ছিল চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার। তাতেও রাজি হননি তিনি। তাহলে তার অসুস্থতা ও মুক্তির শেষ পরিণতি কী, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে জোর আলোচনা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি এই নেত্রী। তার মুক্তির জন্য আইনি লড়াই চললেও তা হালে পানি পাচ্ছে না। নেতাকর্মীদের আন্দোলনও আপাতত হিমঘরে। বিবৃতিনির্ভর কর্মসূচি থাকলেও তা করতে হচ্ছে ‘আড়ালে-আবডালে’। বিএনপিপ্রধানের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৩৭টি। একটিতে জামিন হলে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে আরেকটিতে। কোর্টে কোর্টে ঘুরছে মামলার ফাইল। এ পরিস্থিতিতে তার আইনজীবী ও দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও হতাশ। 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খানসহ অর্ধডজন নেতা গণমাধ্যমে বলেছেন, আইনি লড়াইয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না। তার মুক্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণে। রাজপথে দুর্বার আন্দোলনই মুক্তির একমাত্র পথ। সে আন্দোলন হবে ঈদের পরে। তবে সেটা কোন ঈদের পর- এমন প্রশ্ন সমর্থক-কর্মীদের মুখে মুখে। কারণ অতীতে আন্দোলনের দিন-মাস বদলেছে দফায় দফায়। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যতটুকু আন্দোলন হয়েছে তাতে সরকারের ওপর বিন্দুমাত্র রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়নি। 

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ আদালত ৫ বছরের দণ্ড দিয়ে ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠান। এর এক দিন পর বিক্ষোভ, মানববন্ধন, অবস্থান, অনশন, লিফলেট বিলি, জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বিএনপি। গত ২২ এপ্রিল পর্যন্ত টানা এসব কর্মসূচি চললেও দৃশ্যত রাজপথে নামেননি নেতাকর্মীরা। আবার যারা নেমেছেন, তারাও পুলিশি বাধাসহ নানামুখী প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন। কোথাও কোথাও চার দেয়ালের ভেতরেও সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মৌন অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পুলিশি বাধার মুখে তা পণ্ড হয়ে যায়। কারাগারে এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার দলের মহাসচিবসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ৮ নেতার বৈঠক হয়েছে। স্বজনরাও সাক্ষাৎ করেছেন। আইনজীবী প্যানেল দেখা করেছে কয়েকবার। কিন্তু কোনো সুখবর দিতে পারেননি তারা। 
সবার কাছে খালেদা জিয়ার প্রশ্ন ছিল, আমি জেলে কেন? জামিনযোগ্য মামলায় আমার জামিন হয় না কেন? জবাবে আইনজীবীরা তাকে জানিয়েছেন, বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রিত। সরকারের সদিচ্ছার ওপর জামিন নির্ভর করছে। 

দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন খালেদা জিয়া। সৌদি আরব ও লন্ডনে তিনি একাধিকবার চিকিৎসাও নিয়েছেন। তার চিকিৎসক প্যানেল ও দলের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, কারাবন্দি হওয়ার পর তার (খালেদা) পা ফুলেছে, চোখের সমস্যা বেড়েছে। গত ৫ জুন তিনি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। ‘মাইল্ড স্ট্রোকের শিকার’ হয়েছেন তিনি।  

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!