• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কঠোর সরকারে বেসামাল বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৯, ২০১৭, ১০:০৫ এএম
কঠোর সরকারে বেসামাল বিএনপি

ঢাকা : সরকারের কঠোর আচরণে বেসামাল হয়ে পড়েছে বিএনপি। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে সরকারের দিক থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতাই পাচ্ছেন না তারা, এমনটাই অভিযোগ দলটির নেতাদের। তারা বলছেন, বিএনপি যতই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় থাকতে চায় না কেন, সরকার স্বৈরাচারী আচরণই করে যাচ্ছে। নতুন বছরের শুরুতেই ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে সরকারের আচরণে নেতাদের মনে এই ধারণা দৃঢ় হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট নেতাদের দাবি, বর্তমানে বিএনপির রাজপথে তেমন কোনো কর্মসূচি নেই, তবু তাদের দিবসভিত্তিক কর্মসূচিও পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। সরকার বিএনপিকে আবারো সহিংসতার দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু বিএনপি এখনই হরতাল-অবরোধের মতো রাজপথের কর্মসূচিতে নামার চিন্তা করছে না।

বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সরকারের আচরণ প্রসঙ্গে দলটির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মনে করেন, বিরোধী দলের কর্মসূচির কথা শুনলেই ক্ষমতাসীনদের মসনদ কেঁপে ওঠে, কারণ জনগণই তাদের মূল আতঙ্ক। সরকার জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণেই বিএনপিকে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সভা-সমাবেশের ওপর হামলা ও বাধা দেয়ার ঘটনায় তারা জনগণের কাছে ক্রমাগত নিন্দিত ও ধিকৃত হচ্ছে। তার মতে, ‘লাখ লাখ পায়ের আওয়াজে কেঁপে কেঁপে উঠছে স্বৈরাচারের মাটি। দুরন্ত-দুর্নিবার আন্দোলনের শক্তি টের পেয়ে আওয়ামী নেতারা ভয়ে আবোল-তাবোল বকছেন।’ 

আর সরকারের এমন আচরণকে অগণতান্ত্রিক এবং উসকানি হিসেবেই দেখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৫ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার উসকানি দিয়ে বিএনপিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে চাইছে। তবে বিএনপি সংঘাতের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। বিএনপি ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনে বিশ্বাসী। 

এছাড়া দলের অন্য সিনিয়র নেতারা মনে করছেন, সরকার বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে না দেয়ায় সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সরকারের কর্তৃত্ববাদী চরিত্র মানুষের কাছে আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিএনপি যে কারণে বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিবাদী বলে আসছে, তা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এ অবস্থায় বিএনপি এখনই হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে গিয়ে শক্তি ক্ষয় করতে চায় না। তারা চায় দল গোছানোর পাশাপাশি সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থেকে নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করতে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন সামনে রেখে বিএনপি নতুন করে সমঝোতার একটি উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সরকারের আচরণে মনে হচ্ছে, তারা মনে করছে, বিএনপিকে কোনোভাবেই ‘স্পেস’ দেয়া উচিত হবে না। আওয়ামী লীগ নিজেরা সমাবেশ করেছে, জাতীয় পার্টি সমাবেশ করেছে, কিন্তু বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়া হলো না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারের উচিত ছিল বিএনপিকে স্পেস দেয়া, কারণ সমাবেশ করা রাজনৈতিক দলের অধিকার।

প্রসঙ্গত, বিএনপি নেতারা বলছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তি থেকে হরতাল-অবরোধে গেলেও পরবর্তী সময়ে সে ধরনের কর্মসূচিতে না গিয়ে বিএনপি ‘ইতিবাচক’ রাজনীতিতে থাকার দিকে জোর দেয়। এরই অংশ হিসেবে গত বছর দলের জাতীয় কাউন্সিলে একটি রূপকল্প তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে জঙ্গিবাদ ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরা এবং নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়। যদিও নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর কিছুটা আশাবাদী হয়েছিল বিএনপি, কিন্তু দশম জাতীয় নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে এসে সরকার বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়নি। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দলীয় কর্মসূচিতে বাধা এসেছে।

এ প্রসঙ্গে দলটির নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, বিএনপির এই নমনীয়তাকে সরকার দুর্বলতা মনে করছে। তবে এটাও তারা মানছেন, সরকারবিরোধী ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলার মতো সাংগঠনিক শক্তি এখন বিএনপির নেই। সরকার বিএনপিকে এখন কোনো সুযোগ দিতে চায় না বলেও তারা মনে করছেন।

উল্লেখ্য, চৌদ্দ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রথম বর্ষপূর্তিতে সমাবেশ করতে না পেরে টানা অবরোধের ডাক দিয়েছিল বিএনপি। তিন মাস সে কর্মসূচি চলেছিল। কিন্তু সরকার পতন হয়নি। পরবর্তী সময়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ঘোষণা না দিলেও কর্মসূচি থেকে ফিরে আসে। গত বছর ৫ জানুয়ারির দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে সমাবেশ করতে পেরেছিল বিএনপি। সেদিন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তিনি সমাধান চান।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!