• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কদর বাড়ছে সিনিয়র নেতাদের, হাইব্রিডরা কোণঠাসা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৩, ২০১৭, ১১:৫৭ এএম
কদর বাড়ছে সিনিয়র নেতাদের, হাইব্রিডরা কোণঠাসা

ঢাকা : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে সিনিয়র নেতাদের কদর বাড়ছে। দলের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তাদের মতামত নেয়া হচ্ছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ দলের সভাপতির কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে।

অন্যদিকে, এক এগারোর পর দলের ভেতর তরুণ, হাইব্রিড ও বাম নেতাদের গুরুত্ব পেলেও এখন তা নেই। বরং এসব নেতাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডে খোদ দলের সভাপতিই বিরক্ত।

এছাড়া দলের বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা নিয়েও সন্তুষ্ট নন সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সাংগঠনিক অবস্থা আরও মজবুত করতে সিনিয়র নেতাদের সক্রিয় হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে দলের সিনিয়র নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ সেলিম ও ওবায়দুল কাদেরকে দলের সাংগঠনিক অবস্থা আরও মজবুত করতে আরও বেশি সক্রিয় হওয়ার জন্য বলেন। পাশাপাশি দলের ভেতর আসা তরুণ নেতৃত্বের অনেকেই অল্প সময়ের ভেতর কোটিপতি বনে যাওয়া এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশ না নেয়ার বিষয়েও খোজঁখবর নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ সারির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শেখ হাসিনা এখন টের পাচ্ছেন চমকের মন্ত্রিসভা ও চমক দেওয়া কেন্দ্রীয় কমিটি দিয়ে আগামীর কঠিন সময়গুলো মোকাবিলা করতে পারবেন না। আর তাই দীর্ঘদিন সাইডলাইনে থাকা সংস্কারপন্থী আরো অনেক নেতার গুরুত্ব বাড়তে শুরু করেছে দলীয় প্রধানের কাছে। এরই মধ্যে দল গোছাতে প্রবীণ নেতাদের সাংগঠনিক সফরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিচ্ছেন। সংস্কারপন্থী হিসেবে দীর্ঘদিন উপেক্ষা ও বঞ্চনার শিকার কোনো কোনো নেতাকে বিভিন্ন কূটনৈতিক বৈঠকেও পাঠানো হচ্ছে দলের প্রতিনিধি হিসেবে। এ সবই হচ্ছে শেখ হাসিনার ইচ্ছায়।

জানা গেছে, সংস্কারপন্থী নবীন নেতাদেরও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমা করে দেওয়া হতে পারে। ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দলীয় ঐক্য সুদৃঢ় করতে সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে- এ তাগিদ অনুভব করছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সম্প্রতি আইন-শৃংখলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে রদবদলের প্রক্রিয়া শুরু হলেও দলের সিনিয়র নেতাদের পরামর্শে সে প্রক্রিয়া থেমে যায়। এছাড়া সম্প্রতি সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার বিষয়টিও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দ আশরাফ দলের অনেক চ্যালেঞ্জিং দায়িত্বও হাতে নিয়ে তা সম্পন্ন করতে এখন আরো বেশি প্রস্তুত রয়েছেন তারা। অন্যদিকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছেও এই নেতাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কদর বাড়ছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, আট বছর পর দলের মধ্যে কে কোন পন্থী- এই ইস্যুটি আর নেই। থাকা উচিতও নয়। এখন দলের জন্য সবাই নিবেদিত হয়ে কাজ করবেন।

এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে দল গোছানোর জন্য এবং বিরোধী দলের অপপ্রচারের জবাব দিতে আওয়ামী লীগের যে সাংগঠনিক ১২টি টিম গঠন করা হয়েছিল, তাতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন আমু ও তোফায়েল। এ ছাড়া বরিশাল, টাঙ্গাইল, গাজীপুর উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে এনে তোফায়েল আহমেদ আবারও দলের অর্পিত দায়িত্ব সফলভাবে সম্পন্ন করেছিলেন। ওই সময় প্রাণপণ চেষ্টা করেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য। কিন্তু হেরে যান দলীয় কোন্দলের কাছে। এবারও এসব নেতাদের সাংগঠনিক দায়িত্ব দেয়া হবে।

এদিকে, গত দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের যেসব তরুণ নেতা বিভিন্ন দায়িত্ব পেয়েছিল, তাদের অনেকের বিষয়ে ব্যাপক অভিযাগে জমা পড়েছে দলীয় সভাপতির কাছে। সভাপতির নির্দেশে এসব নেতাদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংস্কারপন্থী অভিযোগে মরহুম আবদুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও প্রয়াত আবদুল জলিল আওয়ামী লীগের মূল স্রোত থেকে বাদ পড়েন। তাঁদের জায়গা হয় দলের উপদেষ্টা পরিষদে। এরই মধ্যে সংস্কারবাদীর চিহ্ন গায়ে নিয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন আবদুর রাজ্জাক ও আবদুল জলিল।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!