• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কবি আবদুল হাই মাশরেকীর কবিতা


সাহিত্য সংস্কৃতি ডেস্ক জানুয়ারি ৯, ২০১৭, ০২:৩৯ পিএম
কবি আবদুল হাই মাশরেকীর কবিতা

আবদুল হাই মাশরেকী

বিধ্বস্ত অঙ্গনে মা

এই তো পেয়েছি মাকে
বাড়ির সামনে তার নতুন কবর ।
বধ্যভূমি ঘুরে ঘুরে 
কালোজিরে ধানক্ষেত তীরে এসে দেখি বিধ্বস্ত সকলি,
অগ্নিদগ্ধ মাঠে তবু বৃষ্টি পেয়ে গজায় সুতীক্ষ্ণ ঘাস
মায়ের বিষণ্ণ ঠোঁটে সহসা চমকে ওঠে কঠিন বিদ্যুৎ।

কয়টি বাঁশের খুটি ভর করে একখানি নড়বড়ে খড়ো চাল,
নিচে তার নিকানো মেঝেয় নতুন সংসার--
আনকোড়া হাড়ি ও পাতিল আগলিয়ে আছেন মা বসে
আলু-থালু রুক্ষ কেশ বিলাপে বিধুরা
সদ্য স্নাতা,
কে যেন জবরদস্তি করে সিনান করিয়ে তাকে--
নির্যাতনে নিহত একমাত্র মেয়ের ময়লা শাড়িটি
স্বহস্তে পরিয়ে রেখে গেছে
হাঁড়ি হাঁড়ি জল ঢেলে মজিয়ে গিয়েছে উঠোনের ধুলো ।

তবু ত শুকনো প্রাণ 
নতুন লাঙল-জোয়াল কাঁধে
কৃষিঋণে কেনা গরু দুটি খেদিয়ে চলেছে চাষী,
মাঠের আলের কোন নির্জন ছায়ায় কবে যে বাজবে বাঁশি
পোড়াবাড়ি সংলগ্ন পোড়া বটগাছে গজাবে নতুন পাতা কবে 
ডাকবে কোকিল--
জানে না সে ।

ওদিকে এখন কবর খোঁড়ে না কেউ 
শ্মশানে পোড়ে না শবদেহ,
খট খট, বাঁশ-কাটা শব্দে ওঠে কী যে তীক্ষ্ণ হাহাকার
শরণার্থী ফিরেছে এখানে--
উঠবে নতুন ঘর, 
মাচানে উঠবে লাউ-লতা
উঠোনের দো-আঁশ ধূলোয় গড়াগড়ি ছুটোছুটি করবে বাচ্চারা
সন্ধ্যায় জ্বলবে দীপ-অস্পষ্ট আলোয় পড়বে ক খ গ ।

কখনো পাটিতে শুয়ে বুড়ি দাদী
নাতীদের বুকের একান্তে নিয়ে 
শোনাবে কি ময়-দানবের গল্প?
লাঠি ঠুকে নুয়ে হাঁটা ফোকলা মুখের সেই 
অশীতি বর্ষীয়া নারী মরেছে সীমান্ত পাড়ে ।

ধর্ষিতা পলাশ আজ নিহত বকুল।
কোথায় যেন আমের মুকুলে তবু উঠেছে গুঞ্জন ।

এ কি কান্না? না আনন্দ! নাকি বেঁচে থাকবার 
আটপৌরে বাসনারা বিগলিত শবে কিলবিল করে ওঠে?
না, না, না।

মা নতুন মেঝেটা নিকিয়ে সবেমাত্র বসেছেন,
নেবেন দু’দণ্ড হাঁফ ছেড়ে।

তারপর কত কাজ।
কত যে ভাবনা তার--
ছেলেরা কোথায় রোজগারে যাবে,
পড়াশোনা করে ছোটরা মানুষ হবে।

.............................................................................

১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারি দেশ প্রত্যাবর্তনের সময় বঙ্গবন্ধুর অনুভূতির ওপর মরহুম কবি আবদুল হাই মাশরেকীর কবিতা। রচনাকাল : ১০ মার্চ ১৯৭২, ধানমণ্ডি, ঢাকা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!