• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কমছে না শীতের দাপট


রংপুর প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৪, ২০১৮, ১২:৩২ পিএম
কমছে না শীতের দাপট

রংপুর : রংপুর অঞ্চলে চলছে মাঝারি ও ভারি শৈত্যপ্রবাহ। সপ্তাহখানেকের বেশি সময় ধরে কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের জনজীবন। এরই মধ্যে দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে।

গত বুধবার থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন রয়েছে উত্তরের আকাশ। যেন নিখোঁজ হয়েছে সূর্য। রোববার (১৪ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে মাঘ মাস। মাঘের শীত আরো তীব্রতর হবে-এমন আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে অসহায় দরিদ্ররা।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরে এমন তাপমাত্রা বিরাজ করায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না রংপুর অঞ্চলের মানুষজন। প্রচণ্ড শীতে মারা পড়ছে হাঁস-মুরগি ও গৃহপালিত পশু।

এদিকে, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, শীতের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের প্রকোপ। গত কয়েকদিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. বিকাশ মজুমদার জানান, শীতজনিত রোগবালাই বিশেষ করে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক মানুষ। তিনি বলেন, এসব রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে গরম কাপড় পড়ানো জরুরি। মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন বাচ্চাদের শীত না লাগে। তবে বেশি অসুস্থ মনে হলে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

শীতে অসুস্থ নারী, পুরুষ ও শিশুদের জরুরি চিকিৎসার জন্য রংপুর বিভাগের আট জেলার ৫৪টি উপজেলায় ৬২টি  মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের উপ পরিচালক ডা. শাহিনা আখতার জানান, প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের কারণে সৃষ্ট রোগ নিরাময়ে জরুরি সেবা দিতে ৬২টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিশেষ করে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন চরাঞ্চলে বসবাসকারী হাজার হাজার পরিবার শীতে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তাদের মাঝে এখন পর্যন্ত কোনো শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। রংপুরে রয়েছে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক শীতার্ত মানুষ। এর মধ্যে শুধু রংপুর মহানগরীতেই বাস করে প্রায় ৭০ হাজার ভাসমান নারী-পুরুষ। এরা রেল স্টেশনের প্ল্যাটফরম, বিভিন্ন অফিস আদালতের বারান্দা আর ফুটপাতে রাত কাটায়। এদের কারোরই নেই প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র।

এ ব্যাপারে রংপুর জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফরিদুল হক জানান, এক লাখ কম্বল চেয়ে তারা দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র দিয়েছিলেন। কিন্তু বরাদ্দ পেয়েছেন মাত্র ৫৪ হাজার। এসব কম্বল রংপুরের আট উপজেলায় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। আরো শীতবস্ত্র চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

শীতের কামড় ফসলেও: রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক দিনের অব্যাহত ঘন কুয়াশাসহ শৈত্যপ্রবাহের কারণে উঠতি আলুক্ষেতে ব্যাপকহারে আলুর মড়ক বা পচন রোগ দেখা দিয়েছে। এতে এলাকার কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এ রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না বলে ধারণা করছেন আলুচাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রংপুর জেলায় ৫১ হাজার ২৭৫ হেক্টর, লালমনিরহাটে পাঁচ হাজার ৩৮৫ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ছয় হাজার ২৩১ হেক্টর, নীলফামারীতে ২২ হাজার ২৭০ হেক্টর ও গাইবান্ধায়  সাত হাজার ৫৮৭ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে আলুর গাছগুলো সবুজ রং ধারণ করে সজীব হয়ে উঠেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতের সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় আলু ক্ষেতে আলুর মড়ক রোগ দেখা দিয়েছে। মহানগরীর উত্তম হাজিরহাট,  কোবারু, বুড়িরহাট, গোয়ালু, অভিরাম, তামপাট, নব্দিগঞ্জ, সাহেবগঞ্জ, হারাগাছসহ বিভিন্ন এলাকায় দিশেহারা কৃষকরা আলুক্ষেত রক্ষায় আক্রান্ত ক্ষেতে ছত্রাকনাশক  স্প্রে করছেন।

তামপাট এলকার কৃষক নুরুল ইসলাম, আশরাফুল আলম জানান, গত বছর দুই বিঘা জমিতে আলু আবাদে ২০ হাজার টাকা খরচ হলেও এবার সারসহ কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকের দাম বেশি হওয়ায় বিঘাপ্রতি অন্তত চার হাজার টাকা খরচ বেড়ে যাবে। তার ওপর এই শীতের কারণে আলুর ক্ষতি হলে কৃষকদের সর্বনাশ হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ঘন কুয়াশা আর শৈতপ্রবাহ আলু ফসলের জন্য ক্ষতিকর। ঘন কুয়াশা থাকলে আলুক্ষেত ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ ব্যাপারে কৃষকদের সচেতন করার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ আলুর মড়ক বা নাবি ধসা রোগ দমনে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে। সেই সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগও অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!