• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কর্মসংস্থান বৃদ্ধির রূপরেখা নেই বাজেটে


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জুন ১৭, ২০১৭, ০৮:৪৩ পিএম
কর্মসংস্থান বৃদ্ধির রূপরেখা নেই বাজেটে

ঢাকা: আমাদের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও কর বৃদ্ধির কৌশল (পলিসি) রয়েছে। কিন্তু কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য কোনো পলিসি নেই সরকারের। এবারের বাজেটেও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কোনো পলিসি দেয়া হয়নি। এজন্য দেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। বাজেট তৈরিতে মন্ত্রী ও জাতয়ি সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটির অংশগ্রহণ নেই। এমপিরা বাজেট বাস্তবায়নে কোনো আগ্রহ না দেখানোতে বাস্তবায়ন হয় না বলে এক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (১৭ জুন) সকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে নতুন অর্থবছরের (২০১৭-১৮) প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে আলোচকরা এমন মন্তব্য করেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) সংলাপটির আয়োজন করে। সিপিডির চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আলোচক হিসেবে সরকারের মন্ত্রী ও নীতি-নির্ধারক, দেশি-বিদেশি অতিথি ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলী খান বলেন, আমাদের বাজেট তৈরিতে সরকারের এমপি ও মন্ত্রীরা অংশ নেন না। অর্থমন্ত্রী বাজেট তৈরি করে থাকেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। এমপি, মন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরও মতামতকে উপেক্ষা করা হয় বাজেটে। ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে বাজেট তৈরিতে জাতীয় সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আলোচনা হয়। অন্য রাষ্ট্রগুলো আলোচনা করলেও আামদের দেশ সম্ভব নয়। বাজেট নিয়ে এমপিরাও আলোচনা করেন না। এজন্য সরকার বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারেন না। 

সরকারেরে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তীয় সংসদে অনেক দিন ধরে বিরোধী দল না থাকায় সংসদেও বাজেট আলোচনা হয় না। আমাদের বাজেটে অনেক কিছুই গোপন করা হয়। ১৯৭২ সালে জাতীয় বাজেটে কর বাড়ানোর প্রভাব কী হতে পারে তার একটি নোট দেয়া ছিল। কিন্তু বর্তমান বাজেটে কোন খাতে কর বাড়লো, কমলো তার কোনো নোট নেই। কর বাড়লে এর প্রভাব কী হবে এবং সরকার তা কিভাবে সমন্বয় করবে তারও কোনো নির্দেশনা নেই। ১৫ শতাংশ ভ্যাট অনেক বেশি। আপনি (সরকার) যদি ভ্যাট নেন, তাহলে আবগারি শুল্ক নিতে পারেন না। এটি ভ্যাটের বিপরীত। এজন্য সরকারকে ভ্যাট ও ট্যাক্সের জন্য নীতি মালা সংস্কার করা দরকার। 

আকবর আলী বলেন, রেল খাতে উন্নয়নে জোর দেয়া হলেও স্বাস্থ্য খাতে কোনো বিনিয়োগ নেয়ার উদ্যোগ নেই। শিক্ষাখাতেও বাজেটে অবহেলা করা হয়েছে। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার জন্য সরকারের কোনো নির্দেশনা নেই। কৃষি কাজের সংকটে আমাদের কোনো মনোযোগ নেই। আমরা যদি উদ্যোগ না নেই, তাহলে ভবিষ্যতে সংকটে পড়বো।

বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী ৩-৫ বছরের জন্য বিদেশি মুদ্রার সংকটে ভুগবো। আমরা অনেক বড় বড় লোন নিচ্ছি। আমরা তা পরিশোধ কিভাবে করবো। বিদেশি মুদ্রা অজর্ন করার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছি না। আমাদের রেমিটেন্স কমে যাচ্ছে। কাতার সংকট তা আরো বাড়িয়ে দিবে। এজন্য সরকারকে ভাবতে হবে বলেও মন্তব্য করেন সরকারের সাবেক এ আমলা।

সভাপতির চেয়ারে থেকে রেহমান সোবহান কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আলাদা করে কৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যয় ও সময় বেশি যাচ্ছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, অর্থমন্ত্রী জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট দিতে গিয়ে অনেক বিষয়ের প্রতি নজর দিতে পারেননি। তিনি সংবাদপত্রের ওপর ভ্যাট আরোপ করেছেন। এটি অর্থমন্ত্রীর একটি বড় ভুল। গণতন্ত্রের জন্য সরকারের সমালোচনার অধিকার থাকতে হবে। সকারের ভুল-ভালো দুটোই বলার সুযোগ থাকতে হবে। একটা হার্টের ওষুধ তৈরি করতে দেড় টাকা থেকে সাত টাকা প্রয়োজন। তার মূল্য হলো বাজারে ৩৫ থেকে দেড়শ টাকা। তার ওপর ভ্যাট মাফ করালেন, এর মানে হলো বড়লোকের জন্য আরো সুবিধা করে দিলেন।

এনবিআর’র সাবেক সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে ৬০ শতাংশই কালো টাকা। যে কারণে কর জিডিপির হার কম।সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অর্থমন্ত্রী চার লাখ টাকার যে বাজেট দিয়েছেন, সেখানে তিনি মনগড়া কতগুলো বিষয় বলে দিয়েছেন। আমি মনে করি, এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

আরো বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আবুল কালাম আজাদ, সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রীয় ভট্টাচার্য, অধ্যাপক বরকত-এ-খোদা, সাবেক অর্থ সচিব সিদ্দিকুর রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এনাম আহমেদ, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক সচিব সোহেল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ, ব্যবসায়ী নেতা আসিফ ইব্রাহিম, মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমীন প্রমুখ।

সিপিডির পক্ষে নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, গবেষক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব

Wordbridge School
Link copied!