• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
সমাধিতে ফুল কবে?

কলকাতা থেকে কবে আনা হবে রোকেয়ার মরদেহ!


ফরহাদুজ্জামান ফারুক, রংপুর ডিসেম্বর ৯, ২০১৬, ১২:১১ পিএম
কলকাতা থেকে কবে আনা হবে রোকেয়ার মরদেহ!

রংপুর: বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই পাকিস্তান থেকে বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের মরদেহ চাঁপাইনবাবগঞ্জে আনার পর এই অঞ্চলের মানুষ রোকেয়ার মরদেহটিও পায়রাবন্দে এনে সমাহিত করার দাবিতে জোড়ালো আন্দোলনে নামেন। ২০০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া মেলায় রংপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক বিএম এনামুল হক দাবিটির প্রতি একাত্মতা ঘোষনা করে উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রতি করেন।

এরপর থেকে বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদ, বেগম রোকেয়া ফোরাম, বেগম রোকেয়া পাঠাগারসহ বিভিন্ন সংগঠন এই দাবি বাস্তবায়নে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক স্মারকলিপি প্রদান করেছে। এনিয়ে এখনো এ অঞ্চলে চলছে সভা, সেম্পোজিয়াম, গোলটেবিল বৈঠকসহ নানা কর্মসূচি। সাংবাদিক সম্মেলন করে রোকেয়া অনুরাগীরা দাবিটি সরকারের উর্ধতন মহলেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।

২০১০ সালে রংপুরের তৎকালীন ডিসি বিএম এনামুল হক বলেছিলেন, ‘মরদেহ পায়রাবন্দে আনার ব্যপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। আগামী বছর (২০১১) রোকেয়া দিবসের আগে তার মরদেহ পায়রাবন্দে আসবে বলেও তিনি ঘোষনা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ঘোষণার পর ছয় বছর চলে গেছে। কিন্তু আজও এ ব্যপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি জেলা প্রশাসন।

বেগম রোকেয়াকে নীতিনির্ধারক মহলে গুরুত্ব দেয়া হয় না বলে অভিযোগ করে পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের। এখানকার স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ করে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী বিবিসি’র জরিপে বিশ্বসেরা ২০ নারীর তালিকায় ৬ নম্বর স্থান পাওয়া বেগম রোকেয়ার মরদেহ পূর্বের ডিসি সাহেব ঘোষণা দিয়েছিলেন পায়রাবন্দে আসবে। কিন্তু সেই ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত এখন ফাইলবান্দি’।

অন্যদিকে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ একরামুল হক জানান, ‘২০০৯ সালে  প্রশাসনের আশার প্রেক্ষিতে আমরা আশায় বুক বেঁধে ছিলাম। ভেবেছিলাম ২০১০ সাল থেকেই রোকেয়ার সমাধিতে আমরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে পারবো। কিন্তু সেই আশায় বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে। ঘোষণা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই’।   

একজন মহিয়সী নারীকে নিয়ে প্রশাসনের এরকম প্রহসন উচিত হয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাততালি নেয়ার জন্য তৎকালীন ডিসি সাহেব যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তা এখন স্পষ্ট’।

এদিকে রোকেয়ার ভাতিজি রনজিনা সাবের বলেন, ‘সরকারের কি এমন সমস্যা যে আমাদের এই সামান্য দাবিটুকুও পূরণ করতে পারছে না। অন্যদের মরদেহ যদি আনা যায়। তবে কেন রোকেয়ার মরদেহ আনতে সরকার এত টালবাহনা করছে। তা আমাদের বোধগম্য নয়’।

এ ব্যপারে কথা বলার জন্য রংপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক (ডিসি) রাহাত আনোয়ারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, আজ ৯ ডিসেম্বর শুক্রবার। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৩৬তম জন্ম ও ৮৪তম মৃত্য দিবস আজ। উপ-মহাদেশের নারীসমাজকে কু-সংস্কারের দেয়াল ছেদ করে আলোর মশাল হাতে ধরিয়ে দেয়া এই নারীর অনুরাগীদের মন ভালো নেই। সরকারের অবহেলা আর উদ্যোগহীনতার কারণে এখানে রোকেয়া চর্চা ও পর্যটন কেন্দ্রের দ্বার রুদ্ধ। ছয় বছর আগে জেলা প্রশাসনের দেয়া রোকেয়ার দেহাবশেষ কোলকাতা থেকে পায়রাবন্দে আনার প্রতিশ্রুতিও লালফিতায় বন্দি।

বাংলা তথা উপমহাদেশের বন্দি নারীদের শেকল ছিড়ে স্বমহিমায় আলোকিত জীবন গড়ার প্রদীপ জ্বালানিয়া রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দের নিভৃত পল্লী খোর্দ্দমুরাপুর গ্রামের বিখ্যাত সাবের পরিবারের জহির উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের ঔরসে ও রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানীর গর্ভে জন্মগ্রহন করেন। ১৮ বছর বয়সে খান বাহাদুর সাখাওয়াত হোসেন সাহেবের সাথে তার বিয়ে হয়। ২৮ বছর বয়সে স্বামী হারান তিনি। ১৯১০ সালের শেষ দিকে কোলকাতায় যান তিনি। এরপর তিনি দু’পারেই নারী জাগরন ও উন্নয়নে কাজ করেছেন।

নারী জাগানিয়া চিন্তা থেকে লিখেছেন অবিরাম-অবিরত। সমাজের কুসংস্কার ভাঙ্গতে করেছেন সময়ের সাহসী উচ্চারণ। তার লেখা অবরোধবাসিনী, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অর্ধাঙ্গী, মতিচুর ছাড়াও অসংখ্য কালজয়ী গ্রন্থ সে সময় নারী জাগরণ আন্দোলনকে উজ্জীবিত করে। আজও তা আন্দোলিত করছে বিশ্ব নারী সভ্যতাকে।

মহিয়সী এই নারী ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কোলাকাতায় মারা যান। কোলকাতার সোদপুরে তাকে সমাহিত করা হয়।

প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এবছরও এ দিনটিকে ঘিরে গদবাঁধা কিছু আয়োজন, কথামালা নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন হবে। কিন্তু রোকেয়ার লেখনি ও দর্শনের কোন হেফাজত থেকে যাবে তথৈবচ। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও তার জন্ম-মৃত্যূ দিবসে পায়রাবন্দে মেলা, আলোচন সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আজ সকালে জেলা ও বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে রোকেয়া স্মৃতিস্তম্ভে পূষ্পমাল্য অপর্ন, বাদ জোহার মিলাদ মাহফিল, এবং বিকেলে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন নারী সংগঠন ও বেসরকারি সংস্থাগুলো একই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!