• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কলম্বিয়ার যে গ্রামে শুধু নারী ও শিশুদের বাস


ফিচার ডেস্ক এপ্রিল ২, ২০১৮, ০৪:২০ পিএম
কলম্বিয়ার যে গ্রামে শুধু নারী ও শিশুদের বাস

ঢাকা : কলম্বিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পর্বতময় অঞ্চলের সর্বশেষ শহরটি থেকেও প্রায় ৩ ঘণ্টার হাঁটা পথ, দূরত্বে এক গহীন গ্রাম। লা পুরিয়া। এ গ্রামেই বাস করে ‘অ্যামবেরা কাটিও’ উপজাতির কয়েকশ’ মানুষ। কিন্তু এসব মানুষের মধ্যে নেই কোনো পুরুষ। কলম্বিয়ার কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধেই লা পুরিয়ার এই দশা।

একসময় লা পুরিয়া গ্রামটির পুরুষদের ভাগাভাগি করে নিজেদের দলে নিয়ে নেয় বামপন্থি ফার্ক ও ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির গেরিলারা। এরপরও গ্রামটিতে অবশিষ্ট ছিল যে কয়েকজন পুরুষ তাদের সবাই যুদ্ধের কারণেই অপহরণ, খুন এবং পাচারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এখন এ গ্রামে অবশিষ্ট আছে কেবল কয়েকশ’ নারী, কিছু শিশু আর আছে বেশ কিছু কিশোরী মা।

সম্প্রতি লা পুরিয়া গ্রাম নিয়ে ইভান ভ্যালেন্সিয়া নামে এক ফটোসাংবাদিক ন্যাশনাল জিওগ্রাফির সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। ভ্যালেন্সিয়া গত বছরই লা পুরিয়ায় কয়েক মাস অবস্থান করেছিলেন একটি ডকুমেন্টারি তৈরির কাজে।

জানা গেছে, একসময় এ গ্রামটির পুরুষ সদস্যরা ঘন জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন খাবার সংগ্রহ করার জন্য। পুরুষ না থাকায় এ কাজটির নেতৃত্বে এখন নারীরাই আছেন। চার সন্তানের জননী ও ২৬ বছর বয়সের এক নারী ওই গোত্রটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গ্রামটিতে প্রবেশ করলে শিশুদের কলরব শোনা যায়। এদের বেশিরভাগের মা-ই কিশোরী। স্থানীয় একটি গেরিলা সংগঠনের অনবরত লালসার শিকার হয়েছে এসব কিশোরী।

লা পুরিয়ার শিশুরাও যুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে। গত বছর এক স্বাস্থ্য ক্যাম্পেইনে লা পুরিয়ার শিশুদের ছবি আঁকার জন্য কাগজ আর রঙ পেন্সিল দিয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবীরা। দেখা গেছে, তাদের প্রায় সবাই হাতে বন্দুক ধরে রাখা মানুষ এঁকেছে।

গত শতকের ষাটের দশকে শুরু হওয়া কলম্বিয়ার গৃহযুদ্ধ সম্প্রতি একটি শান্তিচুক্তির মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে। যদিও দেশটির সাম্প্রতিক একটি গণভোটে সাধারণ মানুষ গেরিলাদের সঙ্গে শান্তিচুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সত্যিকারের শান্তি এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যেই আছে। তাই পরিস্থিতির তেমন কোনো উত্তরণ ঘটছে না দেশটিতে।

ভ্যালেন্সিয়া বলেন, যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করা হলেও লা পুরিয়াকে এখনো সরকার অবজ্ঞাই করছে। সরকারি সাহায্য এবং স্বাস্থসেবার অভাবে শিশুরা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। ভ্যালেন্সিয়া দাবি করেন, যুদ্ধের সমাপ্তি হলেও এর রেশ এখনো চলছে। তিনি আশা করেন লা পুরিয়া আবারো একদিন প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। ছেলেশিশুরা এখন ওই গোত্রটির অমূল্য সম্পদ। তারা বড় হয়ে একদিন লা পুরিয়ায় আবারো নারী-পুরুষের ভারসাম্য ধরে রাখবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!