• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কলরেট বৃদ্ধির প্রতিবাদে মুঠোফোন বন্ধ করে প্রতীকী ধর্মঘট


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৯, ২০১৮, ০৪:৫৭ পিএম
কলরেট বৃদ্ধির প্রতিবাদে মুঠোফোন বন্ধ করে প্রতীকী ধর্মঘট

ঢাকা: অযৌক্তিক ভয়েস কলরেট বৃদ্ধি, ইন্টারনেটের মূল্য সমন্বয় ও টেলিকম খাতে নৈরাজ্য বন্ধে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক  এক ঘণ্টা মুঠোফোন বন্ধ করে প্রতীকী ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হয়।

মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) সকালে এই ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হয়।

সভাপতির বক্তব্যে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, টেলিফোন খাতে বর্তমানে নৈরাজ্য দেশের যে কোনো সেক্টরকে হার মানিয়েছে। সড়ক বেহালের চেয়ে খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে টেলিকম খাত। এ খাতে জবাবদিহি নেই বললেই চলে।

তিনি বলেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সরকার যখন ফোরজি চালু করে; সে সময় হঠাৎ করে সিম রিপলেসমেন্টের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১২০ টাকা আদায় করা হয়। এরপর গত ১৪ আগস্ট হঠাৎ করে কলরেটে সমতা আনার নামে ভয়েস কলরেট ৫০-৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়।

মহিউদ্দীন বলেন, চলতি বাজেটে ইন্টারনেটের ওপর সরকার ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করলেও আজও তা বাস্তবায়ন করা হল না। সংসদে পাস হওয়া বাজেট কী কারণে আজও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, তা জাতির কাছে একটি প্রশ্ন।

সভাপতি আরো বলেন, গত ১ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর পরিবর্তন শুরু হয়। এখানেও দেখা যায় পূর্বের নির্ধারিত ৩০ টাকা ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করার কথা থাকলেও এমএনপি চালুর দুদিন আগেই জানা গেল এনএমপি চার্জ ৫০ টাকা।

এর সঙ্গে ভ্যাট ১৫ শতাংশ এবং সিম রিপলেসমেন্ট ভ্যাট ১০০ টাকা গ্রাহককে দিতে হবে। এভাবে একের পর এক প্রযুক্তির সম্প্রসারণের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে অযৌক্তিকভাবে জোরপূর্বক অর্থ আদায় করে নেয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মহিউদ্দীন আহমেদের ভাষায়, অপারেটরদের দৌরাত্ম্যের কাছে অসহায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গ্রাহকদের সুরক্ষা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

তিনি আরো বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন ও ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা গণমাধ্যমের কাছে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে দেখাতে সক্ষম হয়েছিলাম। কীভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি করে অর্থ আদায় করা হচ্ছে?

আমরা দাবি করেছিলাম যে, অফনেট অননেট বাতিল করে ২৫ পয়সা কলরেট করার। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আমরা কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পাই নাই। তাই আজও আমাদেরকে রাজপথে এক ঘণ্টার জন্য মোবাইল ফোন বন্ধ করে প্রতীকী ধর্মঘট পালন করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এরপরও যদি কলরেট ও ইন্টারনেটের মূল্য কমানো সেই সঙ্গে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণসহ কথায় কথায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ করা না হয়; তাহলে আমরা সারা দেশের গ্রাহকদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।

প্রতীকী ধর্মঘট কর্মসূচিতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকী বলেন, অপারেটররা এমনিতেই লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। যত্রতত্রভাবে কলড্রপ, নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন ও বিভিন্ন অফারের নামে লুটপাট করে যাচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা সরকারের কোনো উদ্যোগই আমরা দেখছি না।

তিনি বলেন, দেশে ব্যবসারত বড় অপারেটরদের মালিক বিদেশি বা বিদেশি রাষ্ট্র হওয়ায় লাভের টাকা বাংলাদেশে বিনিয়োগ না করে স্বেচ্ছাচারিতাভাবে বিদেশে পাচার করছে। তিনি দ্রুত টেলিযোগাযোগ খাতের শৃঙ্খলা ফেরানোসহ কলরেট কমানোর পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন গড়ার আহ্বান জানান।

বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, প্রতিদিনই কয়েক হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করছে অপারেটররা। সেদিকে সরকারের মনোযোগ না দিয়ে উল্টো তাদের আরও লুটপাটের ব্যবস্থা করতে কলরেট বৃদ্ধি করে জনগণের পকেট কাটার সব বিধিব্যবস্থা সরকার করে দিয়েছে।

অতিদ্রুত টেলিযোগাযোগ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে কলরেট কমাতে হবে। না হলে সারা দেশে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুশিয়ারি দেন তিনি।

ধর্মঘট কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য দেন- জাগো বাঙালির সভাপতি ও বিএনএর মহাসচিব মেজর (অব.) ডা. হাবিবুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য হুমায়ুন কবির হিরো, ভাড়াটিয়া পরিষদের আহ্বায়ক বাহারানে সুলতান বাহার, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের আহ্বায়ক হারুনুর রশিদ, যাত্রীকল্যাণের যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল ইসলাম, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের প্রচার সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর কাজী মাহফুজ, কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন, অ্যাডভোকেট শেখ সোলায়মান, মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা সীমা আক্তারসহ অন্যরা।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!