• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কলায় জীবন, কলায় মরণ!


লাইফস্টাইল ডেস্ক অক্টোবর ১৫, ২০১৬, ০৫:৫৩ পিএম
কলায় জীবন, কলায় মরণ!

কলা দেশ-বিদেশের একটি জনপ্রিয় ও সহজলভ্য ফল। খেতেও ভালো। এর অনেক ওষুধি গুণও রয়েছে। কলার মতো গুণী ফল বা খাবার আর কিছু হতে পারে না। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিদিনের রুটিনে কলা রাখুন।

বাংলা ভাষায় ‘কলা’ এমন একটি শব্দ, যার আগে বা পিছে কিছু যোগ করলে ‘মান-সম্মান হারানোর’ উপক্রম হয়। যেমন, একজন অন্যজনকে বললো ‘কলা খাও’; তাতে অন্যজন রেগেও যেতে পারেন। কেননা ব্যাপারটা কলা খাওয়ার প্রস্তাবে না, অসম্মানের জায়গা থেকে।

পাকা কলার গুণ


অনেকের ধারণা কলা খেলে মানুষ মোটা হয়ে যায় বা ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা দেয়, এগুলো ঠিক নয়। কলা খেলে শরীররে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না।   প্রতিদিন অন্তত একটি করে কলা  শরীরে কি কি উপকার করে তা নিয়ে আজকের ‘কলা বন্দনা’ সাজানো হয়েছে।

মেদ ঝরায় : কলায় রয়েছে ভিটামিন বি, যা পেটে ফ্যাট জমতে দেয় না। এ দেহের অন্য জায়গাতেও জমে থাকা মেদ  কমাতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিসের চরম শত্রু : খাবারে থাকা চিনি ও শর্করা উপাদানকে কলা শুষে নয়ে। ফলে তা রক্তে মিশতে পারে না। এছাড়া এতে থাকা প্রোটিন ও ফ্যাট ডায়বেটিস রোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

পেট ফোলা ও গ্যাস দূর করে : কলায় থাকা পটাশিয়াম শরীরে অতিরিক্ত পানি বের করে  দেয়। কলা খেলে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয় যা গ্যাস জমতে দেয় না। যে কারণে পেট ফোলা কম থাকে। পেটে গ্যাস জনিত সমস্যা থাকলে রোজ ১-২টি করে কলা খেলে উপকার পাবেন।

হাড় মজবুত করে : কলায় থাকা ক্যালশয়িাম হাড়কে মজবুত করে ও হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।

মাংসপেশী গঠনে : কলায় রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম যা খুব দ্রুত মাংসপশেীর গঠন বিশেষ সাহায্য করে।

ব্যথা দূর করে : নানান কাজের পরে শরীরে অনেক সময় ব্যথা হয়। কলা খেলে তা অনেক খানি দূর হয়ে যায়। কলায় থাকা পটাশিয়াম ব্যথা সারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

রাগ কমাতে : আপনি যদি অল্পতেই  রেগে যান ও বিরক্ত হন তাহলে তা কমাতে রোজকার খাবারে কলা রাখুন। কলায় নোরপাইনফ্রিন নামক  উপাদানটি আপনার রাগ প্রশমনে বিশেষ সহায়তা করে।

অনিদ্রা দূর করতে : কলা খেলে অনিদ্রা হয়। কলার  ‘টাইপ্টোফ্যান’ নামক অ্যামিনো অ্যাসিড ঘুমোতে সাহায্য করে।

কোলেস্টেরল কমায় : শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টরোল কমাতে কলা বিশেষভাবে সাহায্য করে। এতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

পাকা কলার খোসার গুণ

কলা শুধু শরীরকে ফিট থাকতে সাহায্য করে না, এটি মানুষকে সুন্দর রাখতেও বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু কলার পুষ্টিগুণ ছাড়াও  খোসার রয়েছে কিছু অসাধারন গুণ। জেনে নিন পাকা এবং কাঁচা কলার খোসার অভিনব কিছু ব্যবহার।

১. খাবার হিসেবে কাঁচা কলার খোসার ওপরের আঁশ  ফেলে দিয়ে কুচি করে নিন। এরপর এটা ভাঁপিয়ে নিন। এর সাথে শুকনো মরিচ ভাজা, পেঁয়াজ, রসুন ও সরিষার তেল দিয়ে বেটে নিন। চমৎকার র্ভতা হয়্ব যাবে। চাইলে এর সাথে ছোট চিংড়ি মাছও দিতে পারেন।

২. ছোট ছোট ব্রণকে তাৎক্ষণিকভাবে দূর করতে সাহায্য করবে কলার খোসা। কলার খোসার  ভেতরের অংশটি দিয়ে ব্রণের ওপর ঘষতে থাকুন । কিছুক্ষণ পর  দেখবেন ব্রণ মিলিয়ে গেছে।

৩. এই হলদেটে দাঁত সাদা করতে কলার খোসার ভেতরের দিকটা দাঁতে ঘষতে থাকুন ২ মিনিট ধরে। এরপর ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর আপনার নিয়মিত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মেজে ফেলুন। মাত্র ৭ দিনেই দাঁত হয়ে উঠবে ঝকঝকে সাদা।

৪. মশা বা পোকামাকড়ের কামড়ের ফলে ত্বকে চুলকানি হয়। এই জ্বলুনি বা চুলকানি থেকে তাৎক্ষণিক রক্ষা পেতে চাইলে কলার খোসার ভেতরের দিকটা আক্রান্ত স্থানে ঘষলে চুলকানি কমে যাবে।

৫. এবার পাকা কলার খোসার ভেতরের অংশটা দিয়ে জুতার উপরে  ৫ মিনিট ঘষে নিন। এরপর একটি পাতলা পরিস্কার কাপড় দিয়ে জুতা জোড়া ভালো করে মুছে নিন। জুতা চকচকে দেখাবে।

৬. কলার খোসার ভেতরের অংশটি দিয়ে সিডি বা ডিভিডিতে ভালো করে ঘষে নিলে সিডি বা ডিভিডিতে স্ক্র্যাচ থাকবেনা।  সিডি বা ডিভিডিও চলবে আগের মতোই।

৭. কলার খোসার ভেতরের অংশ আঁচিলের উপর রাখুন। নিয়মিত ব্যবহারে আঁচিল শুকিয়ে পড়ে যাবে।

কাঁচা কলার গুণ


পাকা কলার মতো কাঁচা কলাতেও রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ। ভর্তা, তরকারি অথবা বড়া বানিয়ে খাওয়া যায় কাঁচা কলা। কাঁচা কলায় রয়েছে পটাশিয়াম, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও র্কমক্ষম থাকতে সাহায্য করে। এছাড়া ভিটামিন -বি৬ ও ভিটামিন-সি পুষ্টি যোগায় শরীরে।

জেনে নিন কাঁচা কলার গুণাগুণ সম্পর্কে
১. প্রতিদিন নিয়মিত কাঁচা কলা খেলে ওজন কমে যায়। কাঁচা কলায় রয়েছে প্রচুর আঁশ জাতীয় উপাদান যা অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

২. কাঁচা কলা ডায়বেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।

৩. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

৪. কাঁচা কলায় রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন যা শরীরের হাড়কে শক্তিশালী করে।

৫. কাঁচা কলা একটু ভারি জাতীয় খাবার। ফলে ক্ষুধা কম লাগে।

৬. অ্যাসিডিটি কমিয়ে খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে ।

৭. কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

কলার মোচার গুণ


কলাগাছ বাংলাদেশের সর্বত্র দেখা যায়। প্রায় সারা বছরই কলার ফলন হয়। তাই সব সময় বাজারে নানা জাতের কলা পাওয়া যায়। কলার রয়েছে নানান পুষ্টি। কলার মোচা, থোড়, কাঁচা কলা, পাকা কলার রয়েছে আলাদা আলাদা পুষ্টিগুণ। যেমন- রক্ত বৃদ্ধির  ক্ষেত্রে মোচার ভূমিকা অপরিসীম। নিয়মিত মোচা খেলে রক্তহীনতা হয় না। এতে প্রচুর পরিমানে আয়রন পাওয়া যায়। আয়রন রক্তের স্বাভাবিক কাজের ভারসাম্য বজায় রাখে।

মোচায় আয়রন ছাড়া ক্যালসয়িাম, ম্যাগনেসিয়াম আয়োডিন ইত্যাদিও পাওয়া যায়। এই উপাদানগুলোর ফলে দাঁতের গঠন শক্তিশালী হয়। যে মহলিারা নিয়মিত এই সবজিটি খান, তাদের রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। রাতকানা রোগ প্রতিরোধের উপাদান থাকে মোচায়। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন। 

আর্য়ুবেদ মতে, কলার মোচা শক্তি বৃদ্ধি করে। কলার মোচা সেদ্ধ করে পেঁয়াজ, লবণ ও সরষে তেল দিয়ে ভর্তা করে খেলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে। হজম, ডায়াবেটিস এসবের জন্য কলার মোচা খুবই উপকারী। যাদের নাক দিয়ে রক্ত পড়ে তারা কলার মোচা ভর্তা খেলে উপকার পাবেন।

কলার যেমন গুণের শেষ নেই তেমনি আবার এর অনেক অপকারিতাও রয়েছে-

ওজন বৃদ্ধি : মাঝারি মাপের একটি কলায় প্রায় ১০৫ ক্যালরি শক্তি থাকে। কাজেই অতিরিক্ত কলা খেলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা হতে পারে।

মাইগ্রেন : কারো যদি মাইগ্রেনের সমস্যা থাকে ত্রব তাদের কলা এড়িয়ে চলাই ভালো। কলায় টাইরামাইন নামের উপাদান মাইগ্রেনের ব্যথা বৃদ্ধির কারন।

ডায়াবেটিস : কলায় সুগারের পরিমাণ বেশি থাকায় অতিরিক্ত কলা খেলে ডায়াবেটিস বাড়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

দাঁতের ক্ষয় : প্রচুর পরিমানে শর্করা থাকায় বেশি কলা খেলে দাঁতের ক্ষতি হয়। এমনকি দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য কলা চকোলেটের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর।

গ্যাস : কলাতে থাকা ফ্রুক্টোজ এবং ফাইবার এক সঙ্গে পেটে গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে।

অ্যালার্জি : কলা অনেক সময়ই অ্যালার্জির কারণ হয়ে থাকে। অনেক সময় ঠোঁট ফুলে যায়, বুক ও গলা জ্বালা করে।

শ্বাস নিতে সমস্যা : যাদের শ্বাস যন্ত্রের সমস্যা তাদের  বেশি মাত্রায় কলা খেলে সমস্যা  বেড়ে যেতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য : বেশি কলা খাওয়ার ফলে অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিণ্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!