• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁঠালিয়ায় চাই-বুছনা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা


ঝালকাঠি প্রতিনিধি আগস্ট ১২, ২০১৮, ০৭:১৫ পিএম
কাঁঠালিয়ায় চাই-বুছনা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

ছবি: সোনালীনিউজ

ঝালকাঠি : জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার চেচঁরীরামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চেচঁরী গ্রাম চাই-বুছনার জন্য বিখ্যাত। এ এলাকায় এখন অন্যান্য ব্যবসার পাশাপাশি চাই-বুছনা কারিগররা পিছিয়ে নেই কোনো ক্ষেত্রে। তাঁদের প্রচেষ্টা চলছে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে।

এখন শ্রাবণ মাস। খাল-বিল, নদী-নালায় নতুন পানি উঠতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে দেশীয় মাছের প্রজনন হওয়ায় মাছের সংখ্যাও বাড়ছে। দেশীয় মাছের স্বাদ নিতে গ্রামের খালে এবং উন্মুক্ত জলাশয়ে চাই-বুছনা (এক ধরনের মাছ ধরার ফাঁদ) পেতে মাছ ধরছে গ্রামের মৎস্যজীবি, হতদরিদ্রসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। তাই চাহিদার সামাল দিতে এবং মৌসুমী আয়ে চাই-বুছনা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা। শুধু ঘরের কর্তা ব্যক্তি নয়, বুনন কাজে সহযোগিতা করছে স্ত্রী, পুত্র, ভাই, বোন, বৃদ্ধ মা ও বাবা। তাঁদের সহযোগীতায় অনেকটাই এগিয়ে যায় এ বুননের কাজ।

এ উপজেলার কারিগররা বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আবার কেউ কেউ বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে ১৫০/১৭০ টাকা করে প্রতিটি বাঁশ কিনে তিনটি চাই অথবা দুটি বুছনা তৈরি করে থাকেন। প্রতিটি চাই গড়াসহ বাজারে বিক্রি করেন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। আর দিয়েই চলে অনেকের সংসার। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াসহ পারিবারিক বিভিন্ন ব্যয়। উপজেলার জমাদ্দার হাটে প্রতি সপ্তাহের রবি ও বুধবার বিকেলে বসে চাই-বুছনা বিক্রির হাট। উপজেলার আশপাশের এলাকা থেকেও আসে বিক্রেতারা।

চাই-বুছনা বুননের কারিগর উপজেলার দক্ষিণ চেচঁরী গ্রামের কবির হোসেন জানান, প্রতিবছর মাঘ মাসে চোখের দৃষ্টিতে অনুমান করে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকার প্রতিটি বাঁশ কিনতে হয়। এরপর বাঁশ সাইজ মতো কেটে পানিতে ভিজিয়ে রেখে শলা তৈরি করতে হয়। প্রতি সপ্তাহের তিনদিন বাঁশ থেকে শলা তৈরি করে এবং বাকি ৪ দিন দিনমজুরি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতিটি বুছনা তৈরিতে ২২০ থেকে ২৫০টি শলা লাগে। একটি ভালো বাঁশ থেকে ৩টি বুছনা তৈরি করা যায়। মাঘ মাস থেকে এ কাজ শুরু করেছে আশ্বিন মাস পর্যন্ত চলবে। এ কাজে সহযোগিতা করছে ভাই জামাল।

উপজেলার বটতলা বাজারে প্রতি সপ্তাহের শনি ও বুধবারে ১০০টি চাই নিয়ে বিক্রি করি। আমার কাছ থেকে অন্য বিক্রেতারা পাইকারী কিনে নেয়। সংসারের খরচ, পিতা-মাতার চিকিৎসা খরচ, ছেলে-মেয়ের পড়াশুনার খরচ এবং ঋণ শোধ করে সব মিলিয়ে বছরের আয়-ব্যয় সমান সমান থাকে। সরকারি সহায়তায় সহজ শর্তে এবং বিনা সুদে ঋণ পেলে একটু ভালোভাবে জীবন কাটানোর আশা প্রকাশ করেন কবির হোসেন ও তার পরিবার। শুধু কবির নন, এভাবে অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে এ মৌসুমি আয় থেকে। বেচা বিক্রিও করছে কারিগররা।

কথা হয় বামনা থেকে আসা চাই বিক্রেতা তাওহিদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিটি চাই গড়াসহ ১২০/১২৫ টাকা করে বিক্রি করছে। গড়া বাদে বিক্রি করছে ১০০ টাকায়। নিজে চাই না বানিয়ে কারিগরদের কাছ থেকে কিনে এনে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করে সংসার ও ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য এ মৌসুমি ব্যবসা করেন বলে জানান তিনি।

উপজেলার দক্ষিন চেঁচরী গ্রামে চাই বুছনা তৈরির কারিগর মো. জাকির হোসেন জানান, গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে বাঁশ কিনে চাই বুছনা বানানোর কাজ করি। ১৫০/১৭৫ টাকার একটি বাঁশে ২টি চাই অথবা ১টি বুছনা তৈরি করা সম্ভব হয়। ১টি বুছনা তৈরিতে পূর্ণ ১ দিন সময় লাগে। একা কাজ করে আগাতে পারি না। তাই স্ত্রী ও স্কুলগামী ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সুমি ও এ কাজে সহায়তা করে। একটি চাই সর্বোচ্চ ২০০ টাকায় এবং বুছনা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন। চাহিদা মতো বাঁশ কিনতে না পারা এবং চাই বুনানোর সুতোর দাম বৃদ্ধি বলে হতাশা প্রকাশ করেন মো. জাকির হোসেন।

স্থানীয় শিক্ষানুরাগী অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলহাজ মো. রেজাউল করিম জানান, চাই-বুছনা তৈরি কুটির শিল্পের আওতায় পড়ে। আর্থিক সমস্যার কারণে জেগে উঠতে পারছে না এ শিল্প। সরকারি সহায়তা পেলে তারা আরো স্বচ্ছল হতে পারত।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!