• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কাজ দেয়া হয়নি জেলা পরিষদে নির্বাচিতদের


নিজস্ব প্রতিবেদক  জানুয়ারি ১৭, ২০১৭, ১২:২৭ পিএম
কাজ দেয়া হয়নি জেলা পরিষদে নির্বাচিতদের

প্রথমবারের মতো ভোটের মাধ্যমে জেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। তারা কি কাজ করবে তাদের পদমর্যাদা কি এখনো অজানা। তাই তাদের পদমর্যাদা ও কর্মপরিধি সম্পর্কে স্পষ্ট হতে চাইছেন জনপ্রতিনিধিরা। এদিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের পদমর্যাদাকে সরকার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখলেও তাদের কোন মর্যাদা দেয়া হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলছে, নির্বাচিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মর্যাদা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নিচে হবে না। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের কাজের পরিধি নির্ধারণ করে না দিলে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি ও আমলাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে। জেলা পরিষদে এর আগে দায়িত্ব পালন করা প্রশাসকরা ডিসি অর্থাৎ, সরকারের উপসচিবের পদমর্যাদা ভোগ করেছেন। গত মাসে পরোক্ষ ভোটে নির্বাচনের পর গত ১১ জানুয়ারি শপথ নিয়েছেন ৫৯ জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক বলেন, ১৩১ বছর পর জেলা পরিষদ নতুন অবয়বে এসেছে, যাত্রা শুরু হয়েছে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মর্যাদা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের হাউজে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন এমপিরা। সুতরাং তাদের পদমর্যাদা কিরূপ হওয়া উচিত এটা ধীরে সুস্থে আগাবে।
 
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মর্যাদা ডিসিদের নিচে হবে না বলে মনে করেন সচিব আবদুল মালেক। তিনি বলেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের দায়িত্বের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। সরকার যদি মনে করে তাদের মর্যাদা আরো বাড়াবে, সেটা সময়ই বলে দেবে কখন কী করতে হবে। সিটি করপোরেশনের মেয়রদের মর্যাদাও নির্ধারণ করা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের মেয়রকে মর্যাদা না দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের পদমর্যাদা অতিরিক্ত সচিবের নিচে নয়।

পদমর্যাদা না থাকায় কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না- এ প্রশ্নে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘কিছু সমস্যা তো আছেই, মাননীয় নেত্রী সেগুলো দেখবেন। আমাদের শপথের দিনই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের অনেক ক্ষমতা দেওয়া হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’ জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হওয়ার আগে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদে প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকারী মহিউদ্দিন বলছেন, প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনে তাকে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি। জেলা পরিষদের নির্বাচিত একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। এখনো বুঝতে পারছি না কোন পদটি বড়। এ নিয়ে সরকারি কোনো নির্দেশনা আছে বলে শুনিনি।’ 

আরেকজন চেয়ারম্যান বলেন, আইনে কী আছে কী নেই, তা তো গবেষণার বিষয়। আইনের ভাষাও কঠিন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের শপথ পড়িয়ে তাদের সৎ ও নিষ্ঠাবান থেকে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা পরিষদের ক্ষমতার পরিধি উল্লেখ করে ওই দিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা বেশকিছু কাজ উপজেলা পরিষদে হস্তান্তর করেছি। জেলা পরিষদের হাতেও যথেষ্ট ক্ষমতা থাকবে মানুষের সেবা নিশ্চিত করার এবং স্ব-স্ব জেলার সার্বিক উন্নয়নের।’

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা পদমর্যাদা চাইলেও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ একে বড় কোনো বিষয় হিসেবে দেখছেন না। তিনি বলেন, পদমর্যাদা দেয়ার পরেও মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যে ‘কনফ্লিক্ট’ হবে না, সেই নিশ্চয়তা কোথায়? পদমর্যাদার সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। পদমর্যাদা দিয়ে লাভ নেই, এটা দিয়ে নতুন সমস্যা হয়। তারা তো জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, এটাই তাদের পদ, তারা আইন অনুযায়ী কাজ করবেন। জেলা পরিষদ  চেয়ারম্যানদের কাজই ডিফাইন না মন্তব্য করে অধ্যাপক তোফায়েল বলেন, তাদের যে টাকা-পয়সা আছে তা তারা খরচ করতে পারেন, কিন্তু জেলা প্রশাসনের ওপর তাদের তো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আইনে লিমিটেড ক্ষমতা, ভবিষ্যতে কী হয়, জানি না। তাদের কাজ কী হবে? তারা কী ভূমিকা পালন করবেন তা নিয়ে অনেক কনফিউশন আছে। আইনে কোনোটাই ক্লিয়ার করা হয়নি। আইনে তাদের ১২টি ফাংশন আছে। একটা ফাংশন হচ্ছে- জেলা পর্যায়ে সব উন্নয়ন কর্মসূচি পর্যালোচনা। এটা যদি করতে হয়, ডিসির নেতৃত্বে যে উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি আছে, সেই ফাংশনটা চেয়ারম্যানের কাছে চলে আসে। তাহলে এটা আদৌ কী হচ্ছে, সেটা দেখতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পরিষদের একজন চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের কাজ কী হবে তা নিয়ে আমার পরিষ্কার ধারণা নেই। কোন কোন কাজ তদারকি করতে পারব বা করা উচিত, তাও ভালোমতো জানি না।’ জেলা পরিষদের আরেকজন জনপ্রতিনিধি বলেন, কাজ কী হবে-না হবে, তা না জেনেই নির্বাচনে নেমেছিলাম। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ত্বরান্বিত করতে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন। আমাদের পদমর্যাদাটাও ঠিক করে দেয়া উচিত।

১৭৭২ সালে জেলা প্রশাসন সৃষ্টির ১১০ বছর পর ১৮৮২ সালে লর্ড রিপনের ঐতিহাসিক রেজল্যুশনের মাধ্যমে তিন স্তরের গ্রামীণ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তনে স্থানীয় ‘জেলা বোর্ড’ শক্তিশালী প্রশাসনিক ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়, যা পাকিস্তানের প্রথম দশক পর্যন্ত বজায় ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জেলা পরিষদের অবকাঠামো, জনবল, সম্পদ ও জাতীয় বাজেটে নিয়মিত বরাদ্দ থাকলেও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি আড়ালে পড়ে।

১৯৭৫ সালে জেলায় ‘গভর্নর’ নিয়োগ করে জেলা প্রশাসকসহ জেলার সামগ্রিক প্রশাসনকে তার অধীন করে একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠার চিন্তা করা হয়। পরে বিএনপির শাসনামলে ‘জেলা উন্নয়ন সমন্বয়ক’ নামে একটি পদ সৃষ্টি করে প্রতিটি জেলায় রাজনীতিবিদদের মধ্য থেকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৮৮ সালে এইচ এম এরশাদ সরকার প্রণীত স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নিয়োগ দেওয়া হয়; যা ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ ছিল। পরে বিএনপি সরকার ডিসিদের এই দায়িত্বে রাখে।

২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের জন্য নতুন আইন করে। ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলায় গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো নির্বাচনের আয়োজন করা হলেও আদালতের আদেশে কুষ্টিয়া ও বগুড়ায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন আটকে যায়।

বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বর্জনে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দল মনোনীত ২১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ভোটের আগেই। ভোটের দিন আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদ্রোহীরা জেতেন ৩৮ জেলায়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!