• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাজ শেষ না করেই বিপুলসংখ্যক প্রকল্পের সমাপ্তি ঘোষণ


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ৯, ২০১৬, ০৩:৪৭ পিএম
কাজ শেষ না করেই বিপুলসংখ্যক প্রকল্পের সমাপ্তি ঘোষণ

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কাজ শেষ না করেই ১২১টি প্রকল্পের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ওসব প্রকল্পের কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকা সত্ত্বেও সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

আর অর্থ বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও পুরো এক বছরে ১শ’ প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অর্থই ব্যয় হয়নি। তাছাড়া কিছু অর্থ ব্যয় হলেও মাঠপর্যায়ে ১০৩টি প্রকল্পে কোনো কাজই হয়নি। ফলে পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্প গ্রহণের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়েছে বলে মনে করছে। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১৩-১৪ অর্থবছরেও ১৮১টি প্রকল্প পুরোপুরি সমাপ্ত না করেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। মূলত ওসব প্রকল্প গ্রহণের সময় বাস্তবতা বিবেচনা করা হয়নি। ফলে একদিকে যেমন জনগণের অর্থ ব্যয় করে উন্নয়নের নামে অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে জাতীয় জীবনেও তার কোনো সুফল প্রতিফলিত হচ্ছে না।

সেক্ষেত্রে উন্নয়নে সরকারের বিনিয়োগ বাড়লেও কাক্সিক্ষত প্রভাব পড়ছে না। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছওে মোট ২৫৩টি প্রকল্প সমাপ্তির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে ২২০টি। অবশ্য ওই লক্ষ্যমাত্রার আরো ২০টি প্রকল্প বাইরে সমাপ্ত হয়েছে।

সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে ২৪০টি। তবে শেষ হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে শতভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যা ১১৯টি। আর কিছু কাজ বাকি থাকা সত্ত্বেও সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে ১২১টি প্রকল্প। তাছাড়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সমাপ্ত করতে না পারা ৩৩টি প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণা না করে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ থাকলেও পুরো এক বছরে ওসব প্রকল্পের অনুকূলে কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) ১০০ প্রকল্পে এমন অবস্থা ছিল। তাছাড়া কিছু অর্থ ব্যয় হলেও মাঠপর্যায়ে ১০৩টি প্রকল্পে কোনো কাজই হয়নি। তারমধ্যে আকার কিছু প্রকল্প নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে জিইয়ে রাখা হয়েছে। অথচ সরকারি তহবিলের অর্থ ব্যয় হয়েছে প্রকল্প পরিচালক ও কর্মীদের বেতন বাবদ।

গত অর্থবছর কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যয় ৫৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা দেখানো হলেও ওই প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি নেই। স্কুল প্রোগ্রামে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকল্পের বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বঙ্গবন্ধু সেতুর ফাটল মেরামতে নেয়া প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ২৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। 

২০১৪-১৫ অর্থবছওে ওই প্রকল্পের জন্য অর্থছাড় হয় মোট ৫০ কোটি টাকা। কিন্তু ওই অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে এক টাকাও ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। ২০১৩ সালের জুনে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) অবকাঠামো ও বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণে ঢাকার উত্তরা তৃতীয় পর্যায়, আফতাবনগর, পূর্বাচল, বসুন্ধরায় এবং গুলশান-বনানীতে ৫টি গ্রিড সাব-স্টেশন নির্মাণে কাজ শুরু হয়।

কিন্তু প্রায় তিন বছর ধরেই ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ঝুলে আছে। মূলত ডেসকো এলাকায় ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ এবং লোডশেডিং কমানো, বিদ্যুতের অপচয় রোধ করা এবং ভবিষ্যতে চাহিদা পূরণে ১৩২/৩৩/১১ কেভি গ্রিড স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ওই প্রকল্পের আর্থিক ও ভৌত লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে প্রকল্পের ৫টি গ্রিড স্টেশন নির্মাণ কাজে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬০ শতাংশই শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা স্টেশন নির্মাণে এখনো পর্যন্ত কোনো অর্থই খরচ করতে পারেনি।

সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১৩-১৪ অর্থবছরের এডিপির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯৮টি প্রকল্পে সমাপ্তি। তারমধ্যে মাত্র ১৫১টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১৪৭ প্রকল্পের কাজ শেষ না কওে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ লক্ষ্যমাত্রার বাইরে আরো ৮২টি প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণা করেছে। সে হিসেবে ওই অর্থবছরে ২৩৩টি প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়। তবে সমাপ্ত ঘোষণা করা ওসব প্রকল্পের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিছু কাজ অসমাপ্ত রেখেই সমাপ্তি ঘোণা করা হয়েছে। এমন প্রকল্পের সংখ্যা ১৮১টি।

এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের এমন পরিস্থিতিতে সমগ্র উন্নয়ন প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির অন্যতম একটি দুর্বলতা মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিপুলসংখ্যক প্রকল্প অসমাপ্ত রেখে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে দুটি বিষয় থাকতে পারে। তার একটি হচ্ছে হয়তো ওসব কম্পোনেন্টের প্রয়োজনই ছিল না। অন্যটি হচ্ছে প্রয়োজন থাকলেও নানা কারণে সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। যদি প্রথমটি ঠিক হয় তাহলে প্রকল্প গ্রহণের যে প্রস্তাব সেখানে বড় দুর্বলতা ছিল।

কারণ ওসব কম্পোনেন্টের পেছনে সময় ও অর্থ ব্যয় করা অপচয়। আর দ্বিতীয়টি ঠিক হলে প্রকল্প গ্রহণের কাক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হয়নি। ফলে প্রকল্প যে কারণে নেয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট বাদ দিয়ে সমাপ্ত ঘোষণা করায় দেশের মানুষ সেই বেনিফিট থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এরকম কর্মকাণ্ড অর্থনীতির জন্য ভালো ফল বয়ে আনে না। এসব বিষয় খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

অন্যদিকে প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই সমাপ্তি ঘোষণার পেছনেও বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করেন আইএমইডির সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তাঁর মতে- প্রকল্প প্রণয়ন ও অনুমোদন পর্যায়ে যেসব সমস্যা হয় সেগুলোর মধ্য অন্যতম হচ্ছে, প্রয়োজনীয় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই সরকারি তহবিলে অনেক প্রকল্প গ্রহণ করা। তাছাড়া কোনো কোনো প্রকল্পের দলিলে অঙ্গভিত্তিক ব্যয় প্রাক্কলন বা কর্মপরিকল্পনাও থাকে না। ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি পায়।

একই সঙ্গে অনেক প্রকল্পের লজিক্যাল ফ্রেমওয়ার্কও যথাযথভাবে প্রণয়ন করা হয় না। বেশিরভাগ প্রস্তাবিত প্রকল্প দলিলের লক্ষ্যমাত্রা এমটিবিএফএ বরাদ্দ থাকে না, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কার্যাবলী সম্পাদনের ক্ষেত্রে সক্ষমতার অভাব ইত্যাদি কারণেও প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হয় এবং এরকম অবস্থা হয়।

সোনালীনিউজ/আমা

Wordbridge School
Link copied!