• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাজের গতি বাড়াতে ভাগ হচ্ছে মন্ত্রণালয়


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৩১, ২০১৬, ০৭:০৮ পিএম
কাজের গতি বাড়াতে ভাগ হচ্ছে মন্ত্রণালয়

বিশেষ প্রতিনিধি

সরকার প্রশাসনিক কাজের গতি বাড়াতে বড় মন্ত্রণালয়গুলোকে ভাগ করার উদ্যোগ নিয়েছে। ওই মন্ত্রণালয়গুলো হচ্ছে- শিক্ষা, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, স্থানীয় সরকার এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন। মূলত প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ হিসেবেই  মন্ত্রণালয়গুলোকে ভাগ করে প্রতিটিতে দুটি বিভাগ করা হবে। আর প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন একজন সচিব। এজন্য সচিবের পাঁচটি নতুন পদও সৃষ্টি করা হবে। পাশাপাশি প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণ মন্ত্রীর পাশাপাশি প্রত্যেক বিভাগের জন্য একজন করে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেয়ারও পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি দফতরগুলোকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে একটি প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন। এ নিয়ে এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (সংস্কার ও সমন্বয়) কাজ করছে। শিগগিরই তা প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। আর সচিব কমিটির সুপারিশে পর্যায়ক্রমে মন্ত্রণালয়গুলোকে বিভাজন করে নতুন নামকরণ করতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাব তোলা হবে। ওই প্রস্তাব পাস হলেই প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

সূত্র জানায়, শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রথমে ভাগ হয়ে চারটি বিভাগ হবে। পর্যায়ক্রমে অন্য ৩টি মন্ত্রণালয়ও ভাগ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। ইতিমধ্যে ৫টি মন্ত্রণালয়কে বিভাজনের বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিভাজন করে প্রথমে তিনটি বিভাগ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আপাতত দুটি বিভাগ করা হবে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ। এর মধ্যে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা থাকবে। তাছাড়া থাকবে সংশ্লিষ্ট দফতর ও অধিদফতর। ওই বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন একজন সচিব। তার বাইরে হবে উচ্চশিক্ষা বিভাগ। ওই বিভাগের দায়িত্বেও একজন সচিব থাকবেন। তবে পুরো মন্ত্রণালয়ে একজন মন্ত্রীর পাশাপাশি এক বা একাধিক প্রতিমন্ত্রীকেও নিয়োগ দেয়া যাবে। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হবে দুটি বিভাগ। তার মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিচালনা ও তদারকিতে থাকবে একটি বিভাগ। আর রাজনৈতিক বিষয় ছাড়াও অন্য বিভাগ পরিচালনা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পাসপোর্ট অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। দুই বিভাগেই দু'জন সচিব দায়িত্ব পালন করবেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, কারাগারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থাকবে ওই বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। নিয়ম অনুযায়ী তাদের আর্থিক বিভাজনসহ সব ধরনের কাজ করবেন ওই বিভাগের সচিব।

সূত্র আরো জানায়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়কেও ভাগ করে দুটি বিভাগ করা হচ্ছে। তার মধ্যে একটি হবে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিভাগ, অন্যটি পরিবারকল্যাণ বিভাগ। স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত সবকিছু থাকবে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে। আর পরিবারকল্যাণ কার্যক্রমে গঠিত হবে নতুন একটি বিভাগ। ওই বিভাগেও আলাদা একজন সচিব থাকবেন। তাছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কেও দুই ভাগে ভাগ করা হবে। প্রতিটি ভাগকে একটি বিভাগ করা হচ্ছে। শুধু বিমানের সাথে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো পরিচালনায় থাকবে একটি বিভাগ। এর দায়িত্বে থাকবেন একজন সচিব। তাছাড়া পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি বিভাগ করা হবে। এরও আলাদা একজন সচিব থাকবেন। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার বিভাগ আবারো ভাগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। কারণ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের পরিধি বাড়ায় শুধুমাত্র একটি বিভাগ দিয়ে কাজ করা দুরূহ হয়ে পড়ছে। এজন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা ও তদারকির জন্য একটি বিভাগ করা হবে। আর এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট দফতর পরিচালনায় থাকবে অন্য বিভাগ। ওই বিভাগের আলাদা একজন সচিব থাকবেন। এর সাংগঠনিক কাঠামোও হবে আলাদা। বর্তমানে সরকারের ৪৫টি মন্ত্রণালয়ে ৭৫ জন সচিব রয়েছেন। তার মধ্যে ৮টি মন্ত্রণালয়ের একাধিক বিভাগ রয়েছে। প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন আলাদা আলাদা সচিব। এক্ষেত্রে সাংগঠনিক কাঠামোও আলাদা। ইতিমধ্যে আরো ৫টি মন্ত্রণালয়ে একাধিক বিভাগ করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে ১৯৭২ সালে শিক্ষা, ধর্ম, খেলাধুলা ও সংস্কৃতিবিষয়ক যে মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়েছিল ১৯৯৩ সালের আগস্ট মাসে সেখান থেকে স্বতন্ত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার গঠনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ সরকারের যাত্রা শুরুর সাথে সাথেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যাত্রা হয়। তবে যুদ্ধকালে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি এতো ব্যাপক ছিল না। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ঢাকায় সচিবালয় স্থানান্তর করা হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মধ্য দিয়েই মূলত ওই মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কার্যক্রম শুরু হয়। আর ১৯৮৬ সালে সরকারি আদেশ অনুসারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তাছাড়া স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যাত্রা শুরু হয়। ওই মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচটি বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এর আগেই দুটি ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, অন্যটি হচ্ছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। দুই বিভাগের দু’জন সচিব রয়েছেন। এখন কাজের পরিধি বাড়ায় শুধু স্থানীয় সরকার বিভাগকেই আবারো দু’ভাগ করার চিন্তা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে একাধিক মন্ত্রণালয় বিভাজন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সংস্কার ও সমন্বয়) সচিব এনএম জিয়াউল আলম বলেন, বিভাজনের বিষয় নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিধি ও অনুবিভাগ কাজ করছে। তা করতে হলে প্রথমে 'অ্যালোকেশন অব বিজনেস' সংশোধন করতে হবে। কারণ এখানে মন্ত্রণালয়গুলোর কর্মবণ্টন একীভূত। আলাদা বিভাগ হলে আলাদাভাবে কর্মবণ্টন করতে হবে। মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে নতুন বিভাগ গঠনের প্রস্তাবনা এলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জানান, কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে বিভাজনের সিদ্ধান্ত রয়েছে এমন কথা শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো প্রস্তাব আসেনি। কারণ এ কাজগুলো করবে মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগ। তবে পদ সৃষ্টির বিষয়টি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষাসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজের পরিধি বেড়েছে। এ ধরনের কাজ মন্ত্রণালয়ের একটিমাত্র প্রশাসনিক কাঠামো দিয়ে করা সহজসাধ্য নয়। তাই কাজের চাপ কমিয়ে আনতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে বিভাজন করা হবে। মন্ত্রণালয় বিভাজন হলে কাজও ভাগ হয়ে যাবে। তখন নির্দিষ্ট সময়ে সবকিছু বাস্তবায়ন হবে। তিনি বলেন, এখনও নির্দিষ্ট সময়ে কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। তবে কর্মকর্তাদের ওপর বেশি চাপ পড়ছে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!