• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাদেরের ম্যাজিকে বদলাবে কি ছাত্রলীগ?


আবু ইউসুফ অক্টোবর ২৫, ২০১৬, ০৬:৫৯ পিএম
কাদেরের ম্যাজিকে বদলাবে কি ছাত্রলীগ?

ঢাকা: উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস। সেই সঙ্গে অসম্প্রদায়িক সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকারও। স্বাধীনতার পর চার চারবার ক্ষমতায় আসা এই দলটির সফলতা আর ব্যর্থতার দায়ও কম নয়।

তবে সবকিছু সামলে জনপ্রিয় দল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সামনে বড় বাধা ছাত্রলীগের আত্মঘাতী আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। গৌরবের ইতিহাস বহনকরা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড বার বারই বিব্রত করে আসছে শীর্ষ নেতাদের। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অপহরণ, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, শিক্ষক লাঞ্ছনাসহ এমন কোনো ঘটনা নেই যার সঙ্গে জড়িত নয় ছাত্রলীগ।

তরুণ প্রজন্মের কাছে আদর্শ তো দূরের কথা ছাত্রলীগ হয়ে পড়েছে ভয় আর আতঙ্ক। ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডের জন্য সামাজিক অবস্থানও তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে সবাই যে এসব অপরাধে জড়িত তা কিন্তু নয়। শীর্ষ নেতারা বলছেন গুটিকয় নেতার কারণে গোটা দলকে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে।

এমনি এক পরিস্থিতিতে স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস বহনকারী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের। নির্বাচিত হয়ে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনেই ওবায়দুল কাদের জানিয়ে দিলেন, ‘আমাদের নিজেদের বদলাতে না পারলে আমরা দেশকে পরিবর্তন করতে পারব না। আমাদের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে।’

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বলাভের পরদিন ২৪ অক্টোবর ধানমণ্ডিতে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের আরো বললেন, ‘আমাদের আচরণ সামনে আরো শৃঙ্খলাবদ্ধ হবে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে আরো গুণগত পরিবর্তন হবে।’ তিনি দলীয় প্রধানকে স্মরণ করে নেতাকর্মীদের প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, ‘আমরা যদি নিজেদের বদলাতে না পারি তাহলে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে বদলাব কীভাবে?’ এ জন্য দলের নেতাকর্মীদের আচরণ বদলাতে অনুরোধ করেন।

এখন প্রশ্ন হলো, ছাত্রলীগের বিতর্কিত আচরণ পাল্টানো নিয়ে সাধারণ সম্পাদক কী পরামর্শ দেবেন? তাহলে কি ছাত্রলীগকে পাল্টে ফেলবেন ছাত্রলীগের সাবেক প্রধান? এর আগে অনেকবারই ছাত্রলীগকে ধমক দিয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।

গেল বছর (২০১৫) ২৬ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ২৮তম সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছিলেন। পরামর্শ দিয়েছিলেন, নিজেদেরকে আগে বদলাতে হবে। নিজেদের আচার-আচরণে পরিবর্তন না আনতে পারলে ছাত্রলীগ তার ঐতিহ্যে ফিরে যেতে পারবে না।

এর আগের বছর ২০১৪ সালের মে ১৬ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩৩তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আয়োজন করেছিল ছাত্রলীগ। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগ মেধাবী তরুণদের সংগঠন। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু গুটি কয়েক নামধারী ছাত্রলীগ কর্মীর কারণে গোটা দলকে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। দলকে জাতির কাছে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। তারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি অপহরণসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। এ সকল অপকর্মের সাথে যে সব নেতাকর্মী  জড়িয়ে পড়েছে তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগকে অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’

গেল বছর (২০১৫) সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত হন। পরদিন ৩১ আগস্ট ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে দল থেকে ‘আগাছা’ উপড়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ছাত্রলীগকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে বলব, কাজে-কর্মে যে আগাছা, তা উপড়ে ফেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।’

বলা প্রাসঙ্গিক, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর নানা ঘটনা আর অঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ছাত্রলীগ। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে অনেকেই সেজন্য ছাত্রলীগে ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ দায়ী করেন।

ছাত্রলীগের ওই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা আরো বলেছিলেন, ‘পরাজিত শক্তির দোসর ও চাটুকাররা এখনও কিছু আছে।’ তার বাবা বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে বলেন, “জাতির পিতা বলতেন, ‘বাংলাদেশের মাটি উর্বর। এখানে চারা ফেলতেই যেমন গাছ হয়, তেমনি আগাছাও জন্মায়। অনেক সময় আগাছা প্রকৃত গাছকেই খেয়ে ফেলে’।”

ছাত্রলীগের ২৮তম সম্মেলনে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম অবশ্য ছাত্রলীগকে উপমহাদেশের একটি প্রতিষ্ঠিত সংগঠন হিসেবে দাবি করে জানিয়েছিলেন, অপরাধে জড়িত থাকার কারণে ওই অবধি ৯শ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। চারশ’ নেতাকর্মীকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। যাদের আইনের মাধ্যমে বিচারও হচ্ছে। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতে সন্ত্রাসের কারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১০ ছাত্রলীগ নেতা নিহত হওয়ার তথ্যও তুলে ধরেন।

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন ছিল এ যাবৎকালের সবচেয়ে বৃহৎ ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক আয়োজন। দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়াকে নিজের রাজনৈতিক জীবনের সর্বোচ্চ পুরস্কার ও স্বীকৃতি বলে মনে করছেন ওবায়দুল কাদের। সে কারণেই তিনি দলকে আরো শক্তিশালী করতে নিজেকে উজাড় করে দেবেন।

সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলা প্রকাশ পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের আচরণ সামনে আরো শৃঙ্খলাবদ্ধ হবে।’ তিনি দলে শক্তিশালী টিমওয়ার্ক গড়ে তোলার কথাও বলেন। নিজেকে মন্ত্রী না ভেবে সেবক ভাবেন। এতোকিছুর পরে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে ছাত্রলীগকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন সেটাই দেখার বিষয়।

গত ২৩ অক্টোবর দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে সর্বম্মতিক্রমে অষ্টমবারের মতো সভানেত্রী পদে পুনর্নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আগের কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। এরপর নির্বাচনী অধিবেশনে সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

প্রস্তাবটি সমর্থন করেন পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এরপর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ প্রস্তাব সমর্থন করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। এর মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত হয়ে যায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদটি।

কাদেরের হাতে দুই এজেন্ডা
আ.লীগে শক্তিশালী টিমওয়ার্ক গড়বেন কাদের

সোনালীনিউজ/এমটিআই/এমএন

Wordbridge School
Link copied!