• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কারাগারে স্বাভাবিক আছেন খালেদা জিয়া


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৮, ১২:৩৪ পিএম
কারাগারে স্বাভাবিক আছেন খালেদা জিয়া

ঢাকা: কারাগারে প্রথম ও দ্বিতীয় দিন বেশ স্বাভাবিক দেখা গেছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। প্রথম দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার নামাজ আদায় ও পত্রিকা পড়েই কাটিয়েছেন। দ্বিতীয় দিন শুক্রবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সোয়া তিনটায় কারাগারে নেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনটিকে ‘সাবজেল’ ঘোষণা করে সেখানে রাখা হয় তাকে। 

বর্তমানে একজন নারী ও একজন পুরুষ ডেপুটি জেলার ও কয়েকজন নারী কারারক্ষী এই ‘সাবজেলে’ দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া, বাইরে রয়েছেন আরো শতাধিক কারারক্ষী। তারা সবাই খালেদা জিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেহেরুন নেছা নামে একজন মহিলা নার্সকে সার্বক্ষণিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

কারাগারে প্রথম দিন
কারাগারের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকালে কারাগারে নিয়েই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। আছরের নামাজ আদায় শেষে হালকা নাস্তা করলেও, রাতে কারাগারের দেয়া খাবার খেয়েছেন। সবজি, মাছ, মাংস ও ডালসহ সব ধরনের খাবারই তাকে দেয়া হয়েছিল। তার পছন্দের খাবার পেপের জুসও দেয়া হয়। এছাড়া, খালেদা জিয়া যে কক্ষে রয়েছেন সেখানে ডিস সংযোগ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পরপরই ঘুমিয়ে যান তিনি। 

দ্বিতীয় দিন
পরদিন শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করেন বেগম জিয়া। এরপর কারাগার থেকে সরবাহ করা কয়েকটি পত্রিকা পড়েছেন। পরে তাকে রুটি, সবজি, ডিম ও চা দেয়া হয়। তিনি সেগুলো খেয়েছেন। দুপুরেও কারা কর্তৃপক্ষের দেয়া খাবার খেয়েছেন খালেদা জিয়া। শুয়ে, বসে, পত্রিকা পড়ে ও কারারক্ষীদের সঙ্গে আলাপ করেই সময় কাটিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) একাধিক দফায় খালেদা জিয়ার শারীরিক পরীক্ষা করেছেন চিকিৎসক। বিকেলে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বিউটি, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ও তাদের ছেলে অভিক এস্কান্দার কারাগারে যান। তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘণ্টাখানেক সময় কাটান। ওই সময় তারা বিভিন্ন ধরনের খাবার নিয়ে যান। 

তবে এর বাইরে বিএনপি বা অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বশীল কোনো নেতাকে কারাগারে যেতে দেখা যায়নি। ওই দিন সকালে খালেদা জিয়ার জন্য তার পছন্দের কিছু ফল নিয়ে জেল গেটে গিয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতার স্ত্রী। কিন্তু খালেদা জিয়ার পছন্দের সেই ফল পৌঁছেনি তার কাছে। জেল গেট থেকেই ফিরিয়ে দেয়া হয় তাদের। দুপুরে আবারো ফল নিয়ে জেলগেটে যান বিএনপির তিন নেত্রী। তারা হলেন অ্যাডভোকেট আরিফা জেসমিন, নেত্রকোনা জেলা মহিলা দলের যুগ্মআহ্বায়ক রেহানা তালুকদার ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি উম্মে কুলসুম রেখা। পুলিশ তাদেরও ফিরিয়ে দেয়।

এদিকে, কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়ার শারীরিক এবং সামাজিক অবস্থার কথা চিন্তা করে তাকে ডিভিশন দেয়ার আবেদন নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে সাক্ষাৎ পাননি তার আইনজীবীরা।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা দিকে কারা ফটকে যান খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, জাকির হোসেন ভূঁইয়া ও এসএম জুলফিকার। তবে ২ ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করে কোনো কর্মকর্তার অনুমতি পাননি তারা। পাননি সাক্ষাৎও। পরে বাধ্য হয়ে তারা ফিরে যান বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

কারা অধিদপ্তরের ডিআইজি (ঢাকা বিভাগ) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন চিকিৎসক। তিনি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছেন। জেল কোড অনুযায়ী তাকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। 

কারাগারে কীভাবে তার সময় কাটছে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, সেখানে টেলিভিশন-পত্রিকা সবই রয়েছে। তিনি বই পড়তে চাইলে তাও দেয়া হবে।

কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে একবার তার স্বজনরা সাক্ষাৎ করতে পারবেন। তবে তার আইনজীবী চাইলে যে কোনো সময় সাক্ষাৎ করতে পারেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কক্ষে এখনো কোনো এসি লাগানো হয়নি। কয়েকটি গণমাধ্যমে এসি লাগানোর যে তথ্য দেয়া হয়েছে, তা ঠিক নয়। এ ছাড়া বাইরে থেকে আনা কারো খাবার সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের দেয়ার সুযোগ নেই। 

কারা অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন্স) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম শ্রেণির কয়েদি বন্দি হিসেবে খালেদা জিয়া সব সুবিধা পাবেন। এছাড়া, গত ২৪ ঘণ্টা কারা কর্তৃপক্ষের দেয়া সব খাবারই তিনি খেয়েছেন। তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন। বিকালে খালেদা জিয়ার স্বজনরা তার সঙ্গে দেখা করে কিছু খাবার ও ফল দিয়ে গেছেন।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!