• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়

কালিমা মোচনে চলছে দিনগণনা


বিশেষ প্রতিবেদক আগস্ট ২০, ২০১৮, ০৯:৪৭ পিএম
কালিমা মোচনে চলছে দিনগণনা

ঢাকা : ২১ আগস্ট নারকীয় সেই গ্রেনেড হামলার ১৪ বছর পার হয়েছে। ২০০৪ সালের এই দিন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী (তৎকালীন সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী) শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে জঙ্গিরা ওই বর্বরোচিত হামলা চালায়।

ভাগ্যক্রমে ওইদিন তিনি বেঁচে গেলেও বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হয়ে ওঠে রক্তের নদী। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি গ্রেনেড হামলায় আহত হন সাংবাদিক-পথচারীসহ অনেকে।

দীর্ঘ প্রতিকূলতা ও নাটকীয়তার পর এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বিচার প্রক্রিয়া এখন শেষ পর্যায়ে। ওই ঘটনার কুশীলবদের ১৮ জন এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামিদের কয়েকজনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলেও ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে কচ্ছপগতিতে। তবে আশার কথা শুনিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তিনি জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরে এ মামলার রায় হবে।

আইনমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর থেকেই গ্রেনেড হামলা মামলার রায় নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। ওইদিনের বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে অনেেকই দেহে স্প্রিন্টারের ক্ষত নিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে মানুষগুলো আশার আলো খুঁজে পেয়েছেন, নিহতদের স্বজনেরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় দিন গুনছেন। সবার বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, রায়ে প্রকৃত অপরাধীদের দণ্ড দেওয়ার মধ্য দিয়ে জাতির ললাট থেকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কালিমা মোচন হবে।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিয়মতান্ত্রিকভাবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি এমনও করতে পারতেন একটা স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে তিনদিনের মধ্যে বিচার করে সামারি ট্রায়াল করে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, দেশের আইন মেনেছেন এবং দেশের আইনি পদ্ধতি মেনেই তাদের বিচার চলছে।

মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তিনি জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি ৫২ জন। এর মধ্যে ১৭ জন পলাতক। এ মামলায় আদালতে ২২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া আসামিদের প্রত্যেককে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ আসামি হিসেবে বাবরের যুক্তিতর্ক আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ আগস্ট উপস্থাপন হবে। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলেই রায় দেয়ার পাল। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালত এ রায় দিতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার এ ঘটনাটির জন্য তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ইন্ধনে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশসহ (হুজি) তিনটি জঙ্গি সংগঠন দায়ি বলে তদন্তে উঠে এসেছে। গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন জোট সরকার ঘটনা তদন্তে ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে। এক মাস ১০ দিনের মাথায় ১৬২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দিয়ে কমিশন বলে, সংগৃহীত তথ্য-প্রমাণ সন্দেহাতীতভাবে ইঙ্গিত করে এ হামলার পেছনে একটি শক্তিশালী বিদেশি শক্তি জড়িত। তবে প্রতিবেদনে বিদেশি শক্তির নাম নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজিয়ে ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে নেয়ার অপতৎপরতা চালায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দ্বিতীয় দফায় অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসে হামলার নীলনকশা। দুই দফা তদন্তে মোট ৫২ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিলের পর শুরু হয় বিচার কাজ। আর দ্বিতীয় দফায় চার্জ গঠনের সাড়ে ছয় বছর পরও মামলার বিচার কাজ অদ্যাবধি শেষ হয়নি। তবে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির বিচার কার্যক্রম নিষ্পত্তির দ্বারপ্রান্তে এসেছে। বর্তমানে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে পঞ্চম কার্যদিবসে বাবরের যুক্তিতর্ক উপস্থান করা হয়েছে। আসন্ন ঈদের পরপরই বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থান শেষ হবে। আর এ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থান শেষ হলেই আদালত এ মামলার রায় ও আদেশ দেবেন বলে প্রত্যাশা রাষ্ট্রপক্ষের।

মামলা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় দুটি মামলা দায়ের হয়। এর একটি হত্যা মামলা ও অপরটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলা। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলা দুটির বিচার কাজ একসঙ্গে চলছে। হত্যা মামলায় মোট আসামি ৫২ জন ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় ৪১ জন। সর্বমোট ৫২ আসামির মধ্যে ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এদের মধ্যে ৮ জন জামিনে ও ২৫ জন কারাগারে ছিল। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাসহ ভিন্ন মামলায় তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ১৮ আসামি পলাতক থাকায় তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ চলছে। একই সঙ্গে বিদেশে পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে।

মামলার দীর্ঘসূত্রতা কারণ জানিয়ে রেজাউর রহমান বলেন, দীর্ঘদিনে বিচার শেষ না হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল তদন্তকালে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজিয়ে এ মামলাটি বিপথে নেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। একপর্যায়ে হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডের উৎস, মজুদ, সংগ্রহ ও বিতরণ সুনির্দিষ্টভাবে চার্জশিটে উল্লেখ না থাকায় তা অধিকতর তদন্তের জন্য যায়। অধিকতর তদন্তে এক বছর ১০ মাস ২৯ দিন লেগেছে। এরপর ২০১২ সালের ১৮ মার্চ দ্বিতীয় দফায় অভিযোগ গঠন করা হয়। প্রথম চার্জশিটে আসামি ছিল ২২ জন। অধিকতর তদন্তে আরও ৩০ জন যুক্ত হয়ে মোট আসামি হয় ৫২ জন। মামলায় মোট ৪৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আসামিপক্ষ মামলাটির বিচার কাজ বিলম্বিত করতে বিভিন্ন অজুহাতে এ পর্যন্ত ৫ বার উচ্চ আদালতে গেছে। এতে ২৯২ কার্যদিবস ব্যয় হয়েছে। আসামিপক্ষ সময়ক্ষেপণের জন্য অনেক সময় অপ্রাসঙ্গিক জেরাও করেছে। এত কিছুর পরও আমরা বিচার কাজের শেষ পর্যায়ে আসতে পেরেছি। ১০৯ কার্যদিবস ধরে এ মামলার যুক্তিতর্ক কার্যক্রম চলছে। ৪৪ জন আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। বর্তমানে শুধু লুৎফুজ্জামান বাবরের যুক্তিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশের বিচারপ্রার্থী মানুষের কথা মাথায় রেখে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে। ঈদের পরপরই বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হবে। আর এর পরই এ মামলার রায় ও আদেশ হবে বলে আশা করছি।

জানতে চাইলে লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী এম নজরুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের ১২ জন সাক্ষী লুৎফুজ্জামান বাবরকে সম্পৃক্ত করে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ইতিমধ্যে ৮ সাক্ষীর বিষয়ে বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। বাকিদের বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে বড়জোর আরও পাঁচ থেকে ছয় কার্যদিবস সময় লাগতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ মামলার বিচার নিষ্পত্তি খুব একটা বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে হয় না। কারণ, প্রথম চার্জশিটে সাক্ষী ৪০৮ জন, দ্বিতীয় চার্জশিটে ৮২ জন। সব মিলিয়ে সাক্ষীর সংখ্যা অনেক। এ ছাড়া আদালতে ২২৫ জন সাক্ষীকে পরীক্ষা করা হয়েছে। ৫২ জন আসামির পক্ষে প্রত্যেক সাক্ষীকে ধারাবাহিকভাবে জেরা করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার জেরা হয়েছে ৪০০ পৃষ্ঠার ওপর। একেক জন সাক্ষীর জেরা হয়েছে ১০০ থেকে ১৫০ পৃষ্ঠা। প্রত্যেক সাক্ষীকে জেরা করতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়েছে। এ ছাড়া আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও বিচারক রয়েছেন। আসামিপক্ষে যদি কোনো কারণে সময় প্রয়োজন হয় তাহলে বিচারক তা বিবেচনা করেই সেই আদেশ দেবেন। অযৌক্তিক কারণে বিচার বিলম্বের সুযোগ নেই।

গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন জোট সরকার ঘটনা তদন্তে ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে। এক মাস ১০ দিনের মাথায় ১৬২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দিয়ে কমিশন বলে, সংগৃহীত তথ্য-প্রমাণ সন্দেহাতীতভাবে ইঙ্গিত করে এ হামলার পেছনে একটি শক্তিশালী বিদেশি শক্তি জড়িত। তবে প্রতিবেদনে বিদেশি শক্তির নাম নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

গ্রেনেড হামলার ঘটনায় প্রথমে পৃথক চারটি মামলা করা হয়। এরপর মামলাগুলোর তদন্তে দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয় আওয়ামী লীগের ওপর। সাজানো হয় ‘জজ মিয়া’ নাটক। বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে মামলার কার্যক্রম থেমে যায়। পরে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। ২০০৮ সালের ১১ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল করিম। এতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। ২০১০ সালের ৩ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে নতুন আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ।

২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বহুল আলোচিত সাক্ষী জজ মিয়া আদালতে সাক্ষ্যে বলেন, ‘২০০৫ সালে প্রথমে আমাকে সেনবাগ (নোয়াখালী) থানায় ধরে নেয়া হয়েছিল। চোরাচালানের মামলা রয়েছে জানিয়ে থানায় নেয়ার পর নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আমার সঙ্গে কথা বলেন। মারধরের পর চোখ বেঁধে আমাকে ঢাকায় আনা হয়। এ সময় থানায় জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়। তারা আমাকে এই বলে হুমকি দেয় যে, তুই বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলায় জড়িত ছিলি। যদি এটা স্বীকার না করিস, তাহলে অন্য মামলায় আসামি করে তোকে ক্রসফায়ারে দিয়ে দেব। আমরা যেভাবে বলি তোকে সেভাবে শুনতে হবে। আমাদের কথা শুনলে তুই বেঁচে যাবি। তখন আমি বলি, স্যার, তাহলে কীভাবে বাঁচাবেন? তারা বলে, তোকে রাজসাক্ষী রাখা হয়েছে। তৎকালীন সিআইডি কর্মকর্তা রুহুল আমিন আমাকে বলেন, আমাদের কিছু করার নেই, এটা ওপরের নির্দেশ।’

জজ মিয়া আদালতকে আরও বলেন, স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হওয়ার পর শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার অনেকগুলো ভিডিও দেখানো হয়েছিল তাকে। সিআইডি কর্মকর্তা জজ মিয়াকে বলেন, আমরা যা শেখাব, আদালতে তাই বলবি। জজ মিয়া বলেন, সিআইডি অফিসে আমাকে রেখে গ্রেনেড হামলার বিষয়ে অনেক ঘটনা মুখস্থ করানো হয়।

হামলায় নিহত যারা আইভী রহমান, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স কর্পোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগ কর্মী রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগমসহ ২৪ জন নিহত হন।

হামলায় আহত যারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, এএফএম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেনসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।

একনজরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা

১. ঘটনার তারিখ ও সময় : ২১.০৮.২০০৪,

২. সময় : বিকেল : ০৫টা ৪০ মিনিট,

৩. এজাহারের তারিখ : ২২.০৮.২০০৪,

৪. মামলার নং ও ধারা : মতিঝিল থানার মামলা নং-৯৭(০৮)০৪, ধারা : ১২০বি/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩০২/২০১/২১২/২১৭/২১৮/৩৩০/১০৯/৩৪ দ.বি. ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের ৩/৪ ও ৬ ধারা।

৫. ঘটনাস্থল : ২৩নং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়,

৬. এজাহারকারী : এসআই শরীফ ফারুক আহমেদ,

৭. মৃতের সংখ্যা : ২২ জন,

৮. আহতের সংখ্যা : কয়েক শত,
৯. ঘটনায় ব্যবহৃত গ্রেনেড : ৯টি,

১০. একই বিষয়ে আরও অভিযোগ করেছিল : ৪ জন। ১) আবদুল জলিল এমপি : পিটিশন মামলা নং-২১০৫/০৪, ২) আলহাজ আজিজ উদ্দিন : সিআর মামলা নং-১১৭৮/০৭, ৩) এসএম কামাল হোসেন, বিভাগীয় সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মতিঝিল থানার সাধারণ ডায়রি নং-১৩৭৭, তাং-১৬.০৯.০৪ইং, ৪)আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মতিঝিল থানার সাধারণ ডায়রি নং-২১২১, তাং-২০.১০.০৪ইং।

১১. তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ : ৭ জন ও তাদের তদন্তকাল- ১) মো. আমির হোসেন : এসআই, মতিঝিল থানা, ২২.০৮.২০০৪ থেকে ২৩.০৮.২০০৪ইং, ২) শামসুল ইসলাম : পুলিশ পরিদর্শক, ডিবি ঢাকা, ২৩.০৮.২০০৪ থেকে ২৫.০৮.২০০৪ইং, ৩) আবদুর রশিদ : সহকারী পুলিশ সুপার, ২৩.০৮.২০০৪ থেকে ২৪.১২.২০০৫ইং, ৪) মুন্সী আতিকুর রহমান : সহকারী পুলিশ সুপার, ২৪.১২.২০০৫ থেকে ২২.০৮.২০০৭ইং, ৫) মো. রুহুল আমিন : বিশেষ পুলিশ সুপার তদারকি ও দিক-নির্দেশনার দায়িত্বে, ২৪.০৮.২০০৪ইং হতে, ৬) মো. ফজলুল কবীর : ২২.০৮.২০০৭ থেকে ০৬.০৬.২০০৮ইং, ৭) আবদুল কাহার আকন্দ : ০৩.০৮.২০০৯ থেকে ০২.০৭.২০১১ইং।

১২. অভিযোগপত্র দাখিল : ০৯.০৬.২০০৮ইং,

১৩. প্রথম অভিযোগ গঠন : ১১.১১.২০০৮ইং,

১৪. রাষ্ট্রপক্ষের ৬১ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অধিকতর তদন্তের আবেদন : ২৫.০৬.২০০৯ইং,

১৫. অধিকতর তদন্তের আদেশ : ০৩.০৮.২০০৯ইং,

১৬. সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল : ০২.০৭.২০১১ইং,

১৭. অধিকতর তদন্তে ব্যয়িত সময় : ১ বছর ১০ মাস ২৯ দিন,

১৮. পরবর্তী অভিযোগ গঠন : ১৮.০৩.২০১২ইং,
১৯. মোট আসামি : ১. দ্রুত বিচার মামলা নং-২৯/১১-তে মোট আসামি ৫২ জন, ২. দ্রুত বিচার মামলা নং-৩০/১১-তে মোট আসামি ৪১ জন, ৩. অভিযোগপত্রে মোট আসামি ২২ জন, ৪. সম্পূরক অভিযোগপত্রে মোট আসামি ৩০ জন, ৫. উপস্থিত আসামি ৩৪ জন, ৬. হাজতি আসামি ২৬ জন, ৭. জামিনপ্রাপ্ত আসামি ৮ জন, ৮. পলাতক আসামি ১৯ জন।

২০. মোট সাক্ষী : ৪৯১ জন। অভিযোগপত্রে মোট সাক্ষী : ৪০৮ জন, সম্পূরক অভিযোগপত্রে সাক্ষী : ৮৩ জন।

২১. আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে : ১৬৬ জন, পরবর্তী ধার্য্য তাং-২৯.০৭.২০১৫ইং,

২২. অত্র আদালতে অর্থাৎ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ বদলি : ০৮.০৯.২০১১ইং,

২৩. অত্র মামলায় জড়িত জঙ্গি সংগঠন : ১) হরকাতুল জিহাদ ও ২) হিজবুল মুজাহিদিন।
২৪. জড়িত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান : ১) ডিজিএফআই, ২)এনএসআই, ৩) পুলিশ, ৪) সিআইডি, ৫) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আসামি বিষয়ক তথ্য

১. অত্র মামলার মোট আসামি : ৫২ জন

২. দ্রুত বিচার মামলা নং ২৯/১১ থেকে ৫২ জন (হত্যা মামলা), তারিখ : ১৮.০৩.২০১২


৩. দ্রুত বিচার মামলা নং-৩০/১১ থেকে ৪১ জন (বিস্ফোরক মামলা), তারিখ : ১৮.০৩.২০১২

৪. হাজতি আসামির সংখ্যা : ২৫ জন। ১) মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সী, ২) মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, ৩) শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল, ৪) মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, ৫) আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, ৬) মো. জাহাঙ্গীর আলম, ৭) হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, ৮) শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, ৯)হোসাইন আহম্মেদ তামিম, ১০) মো. আবদুস সালাম পিন্টু, ১১)মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, ১২) আরিফ হাসান ওরফে সুমন, ১৩) রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ, ১৪) মো. উজ্জল ওরফে রতন, ১৫) মো. লুৎফুজ্জামান বাবর, ১৬ মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ১৭) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, ১৮) আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, ১৯) আওলা শেখ আবদুস সালাম, ২০) মো. আবদুল মাজেদ বাট, ২১) আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ, ২২) মাওলানা আবদুুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, ২৩) মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, ২৪) মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, ২৫) হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া।

জামিনপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা : ৮ জন ১. মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ কমিশনার, ২. মো. শারাফুল হুদা, আইজিপি (অব.), ৩. শহুদুল হক, আইজিপি (অব.), ৪. খোদা বক্স চৌধুরী, আইজিপি (অব.), ৫. রুহুল আমিন, বিশেষ পুলিশ সুপার (অব.), ৬. আবদুর রশিদ, (অব.) এএসপি, ৭. মুন্সী আতিকুর রহমান, (অব.) এএসপি, ৮. লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক।

পলাতক আসামির সংখ্যা : ১৯ জন ১. মাওলানা মো. তাজউদ্দিন, ২. মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, ৩. আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, ৪. মো. খলিল, ৫. জাহাঙ্গীর আলম বদর, ৬. মো. ইকবাল, ৭. আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, ৮. লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, ৯. তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া, ১০. হারিছ চৌধুরী, ১১. কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, ১২. হানিফ মালিক হানিফ পরিবহন, ১৩. লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোর্য়াদ্দার, ১৪. মেজর জেনারেল এটিএম আমিন (এলপিআর), ১৫. মুফতি শফিকুর রহমান, ১৬. মুফতি আবদুল হাই, ১৭. রাতুল আহম্মদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু, ১৮. ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, ১৯. পুলিশ সুপার ওবায়দুর রহমান খান।

উল্লেখ্য, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় অভিযোগপত্রের প্রেক্ষিতে হত্যা ও বিস্ফোরকের জন্য দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন।তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুর রশীদ, মুন্সী আতিকুর রহমান, রুহুল আমিন মামলাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইন্ধনে জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছিল। অধিকতর তদন্তে তাদের এই ষড়যন্ত্রমূলক কারসাজি ধরা পড়ে ও তাদের তিনজনকে এই মামলায় আসামি করা হয়।

গ্রেনেডের প্রকৃতি আর্জেস গ্রেনেড, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। পাকিস্তান ও অস্ট্রিয়াতে উৎপাদন হয়। অস্ট্রিয়াতে এখন আর তৈরি হয় না। এই মামলার গ্রেনেডগুলোর উৎস পাকিস্তান, পাকিস্তানি নাগরিক মো. আবদুল মাজেদ ভাট, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন (পলাতক)-দের মাধ্যমে আনা হয়েছিল। যা আসামি মো. আবদুল মাজেট ভাট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছে এবং মাজেদ ভাটের স্ত্রী নাহিদ লায়না কাকন দ্রুত বিচার আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে একই কথা বলেছে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা ও আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বে শূন্য করতে নারকীয় এই গ্রেনেড হামলা করা হয়।খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান এই মামলার পলাতক আসামি, সে হাওয়া ভবনে বসে এই নারকীয় হামলার নীলনকশা করেছিল যা মামলার অন্য আসামি মুফতি হান্নান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছে।মামলার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার ঘটনার সাথে সাথে আলামত নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। রাষ্ট্রপক্ষ ন্যায় বিচার প্রত্যাশী।

সৌজন্যে : অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, সংসদ সদস্য।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!