• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কিডনি অকেজো করে দিতে পারে ‘টেস্টিং সল্ট’ (ভিডিও)


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৭, ২০১৮, ০৮:২২ পিএম
কিডনি অকেজো করে দিতে পারে ‘টেস্টিং সল্ট’ (ভিডিও)

ঢাকা: খাবার মজাদার করার জন্য রেস্টুরেন্ট, ফাস্টফুড এমনকি বাসায়ও ব্যবহার করা হয় টেস্টিং সল্ট। যাকে বিজ্ঞানীরা স্নায়ুবিষ বলছেন।

তারা বলছেন, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট বা এমএসজি নামের রাসায়নিক উপাদানে তৈরি টেস্টিং সল্ট বা স্বাদ-লবণ স্নায়ুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিভিন্ন জটিল রোগের ঝুঁকি আছে এতে, অথচ কোনো পুষ্টিগুণই নেই।

শুধু খাবারকে মুখরোচক বা মজাদার করার জন্য টেস্টিং সল্ট প্রধানত চাইনিজ ও থাই খাবারে এবং নামিদামি রেস্টুরেন্ট, বিয়ে, মেজবানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের রান্নায় অধিক পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। অনেকে ঘরোয়াভাবে তৈরি খাবারেও ব্যবহার করেন।

বিশেষজ্ঞরা জানান, টেস্টিং সল্ট মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি করে যাতে মনে হয় খাবারটি খুবই সুস্বাদু। ওই খাবারের প্রতি আসক্তি বাড়ায়। শিশুরাও বেশি পছন্দ করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, কিছুদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্নায়বিক অসুস্থতার লক্ষণযুক্ত নতুন রোগের কথা জানায়, যার নাম দেওয়া হয় ‘চাইনিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোম’। খাবারে টেস্টিং সল্টের প্রভাবেই এই রোগ হয়ে থাকে। টেস্টিং সল্ট মানবদেহে প্রবেশ করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে বিষিয়ে তোলে। ফলে স্নায়ুতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ঘুম কম হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে স্বাভাবিক খাবার অরুচিকর লাগে। কাজে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়। একটা সময় দেখা যায় খুব সামান্য বিষয় নিয়েই ঝগড়া ও এক পর্যায়ে মারামারি শুরু করে দেয়।

আর বাচ্চারা টেস্টিং সল্টের প্রভাবে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তিও কমতে শুরু করে। এজন্য টেস্টিং সল্টকে বলা হচ্ছে স্নায়ুবিষ।  

অধ্যাপক ফারুক আরও বলেন, নিয়মিত টেস্টিং সল্ট ব্যবহারকারীদের মধ্যে মাথাব্যথা, খিঁচুনি, হরমোন নিঃসরণে গোলযোগ, মনোবৈকল্য, শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ছটফটানি ভাব, হঠাৎ ক্ষেপে যাওয়া, মুটিয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

পুষ্টিবিদ ও বিএসটিআই এর সাবেক ডিজি অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা বলেন, টেস্টিং সল্টে কোনো পুষ্টিগুণ নেই। যা আছে সবই ক্ষতিকর। শুধু মুখের স্বাদ বাড়ানোর জন্যই টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্বের কয়েকটি দেশে টেস্টিং সল্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এটি নিষিদ্ধ করা উচিত।

গবেষণায় দেখা যায় বাজারে বিক্রি হওয়া পটেটো চিপসে মাত্রাতিরিক্ত টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়। এছাড়া চিকেন ফ্রাই থেকে শুরু করে শিশুদের সিরিয়াল, চকলেট, বেবি ফুড, সস, বিস্কুট, বিশেষ করে ক্র্যাকারস, সল্টেড ও ভেজিটেবল বিস্কুট, হরেক রকম স্যুপ, সালাদ ড্রেসিং, ফ্রাইড রাইস, ফ্রাইড প্রোন, প্রোন বল, সুইট অ্যান্ড সাওয়ার প্রোন, চিকেন ভেজিটেবল, ফিশ ভেজিটেবল, পিৎজা, স্যান্ডউইচ, নুডলস, হোটেল-রেস্টুরেন্টের রোস্ট, ফ্রাই, কারিসহ চায়নিজ সব খাবারে মাত্রাতিরিক্ত টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়।

অধ্যাপক গোলাম মাওলা বলেন, চায়নিজ রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পর কারও মাথাব্যথা, বমি ভাব, খিঁচুনি, চামড়ায় ফুসকুড়ি, হাত-পায়ে দুর্বলতা, জ্বালাপোড়া, কাঁপুনি, বুকে চাপ, অবসাদ, ঝিমুনি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলে বুঝতে হবে, এটি টেস্টিং সল্টের প্রভাব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেস্টিং সল্ট ছাড়াও কালারফুল খাবারের প্রতি মানুষের আসক্তি এখন খুবই বেশি। ঘরে তৈরি লেবুর শরবত শ্রেষ্ঠ পানীয় হলেও মানুষ তা গ্রহণ না করে টেক্সটাইলের রং দেয়া শরবতের বিভিন্ন উপাদান খাচ্ছে।

অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে বাজারে বিক্রি হওয়া এসব শরবতের উপাদানের ৯৯ ভাগই টেক্সটাইল রং দেয়া। শুধু শরবত কেন কেক, রেস্টুরেন্টে ভাজা কাবাব এমনকি চকলেটেও টেক্সটাইল কালার দেয়া হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ফুড কালারকেও পুরোপুরি নিরাপদ বলছেন না। সেখানে টেক্সটাইল কালার তো ভয়াবহ।

অধ্যাপক আ ব ম ফারুক আরও বলেন, টেক্সটাইল কালার খাওয়ার ফলে প্রথম বদহজম দেখা দেয়। আস্তে আস্তে তা গ্যাস্ট্রিক ও পরে আলসারে পরিণত হয়। আর শেষ হয় ক্যান্সার দিয়ে। তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে দেশের ৭৩ ভাগ মানুষ গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত।

পুষ্টিবিদ ও বিএসটিআই এর সাবেক ডিজি অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা বলেন, টেস্টিং সল্ট আমদানির বিষয়ে সরকারিভাবে এখনও কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। তবে জনস্বাস্থ্যে ক্ষতিকর হলে সেটির ব্যবহার বন্ধ করা সরকারের দায়িত্ব। উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, যদি বিএসটিআই কে আরও ক্ষমতা দিয়ে বাজার মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে জনগণ এর সুফল পাবে।

ভিডিও:

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!