• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কী আছে ড. কামাল হোসেনের লিখিত ভাষণে


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮, ০৮:১৯ পিএম
কী আছে ড. কামাল হোসেনের লিখিত ভাষণে

ঢাকা : গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে বৃহত্তম জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কথা বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিক এক ঘোষণার মাধ্যমে সেই ঐক্য প্রক্রিয়া জনসম্মুখে এসেছে।

যেখানে এক সারিতে বসে ছিলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশারফ হোসেন, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ, ড. মঈন খান, বাংলাদশের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদের) এর নেতা আ.স.ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি তার বক্তব্যে একাধিকবার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ্য হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

সোনালীনিউজ-এর পাঠকদের জন্য এখানে ড. কামাল হোসেনের লিখিত ভাষণ হুবুহু তুলে ধরা হলো-


প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

আস্সালামু আলাইকুম

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আজকের এ সমাবেশে আপনাদের স্বাগত জানাই। আজকের এ সমাবেশ থেকে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহীদদের, শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। আমি সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি শের-ই-বাংরা এ, কে ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সকল শহীদদের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

বন্ধুগণ

আজ এ সমাবেশে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আপনারা এসেছেন। আপনারা এসেছেন একটি আকাঙ্খা নিয়ে, তা হচ্ছে : হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। আপনারা এসেছেন একটি প্রতিজ্ঞা নিয়ে, আর তা হচ্ছে লুণ্ঠিত ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আপনারা এসেছেন একটি স্বপ্ন নিয়ে, তা হচ্ছে আমাদের এ দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের সবার প্রত্যাশা, সুখী সমৃদ্ধ, উদার গণতান্ত্রিক ও বহুমতের বাংলাদেশ। দেশের পরিস্থিতি আপনারা সকলে জানেন। এখন দেশে অপশাসন ও দুঃশাসন চলছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে প্রতিনিয়ত হয়রানি ও অপদস্থ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্রের জন্য অনেক সংগ্রাম করে জয়ী হয়েছে, আবার হোচট খেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলতেন মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে কেউ তাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু আজ জনগণ সেই ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত।

আজ এ সমাবেশ থেকে আমি প্রিয় দেশবাসীকে জানাতে চাই- আমরা শুধু ক্ষমতার রাজনীতি করি না। আমরা জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। জনগণের ক্ষমতা জনগণের নিকট ফিরিয়ে দেয়াই আমাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আমরা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই। আপনারা জানেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্টার সংগ্রামের ইতিহাস যেমন আছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করার ইতিহাসও আছে।

আজ বাংলাদেশে উন্নয়নের নামে অবাধে লুটপাট চলছে। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের নামে জনগণের টাকা অপচয় করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা ও স্বর্ণ গচ্ছিত রাখাও নিরাপদ নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধনীর সংখ্যা বাড়ার যে প্রবণতা তাতে বাংলাদেরশর নাম সবার আগে, এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়।

এ থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈষম্যের একটা ভয়াবহ চিত্র পুটে উঠেছে। এখানে ধনী আরও হচ্ছে, গরীব আরও গরীব হচ্ছে, মধ্যবিত্তরা টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। বহির্বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছ্ তাই জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নেমেছে। প্রবাসীরা দেশের বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছে না। উপরোন্ত কতিপয় ধনীক শ্রেণী দেশের সম্পদ লুট করে বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছে।

সমবেত ভাই ও বোনেরা

কেউ কেউ আমাদের এ জতীয় ঐক্যের প্রচেষ্টা ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে, আমরা প্রকাশ্য সভা করছি। কোন গোপন বৈঠক করছি না। যারা জনগণের শক্তিকে ভয় পায়, তারা জনগণের সংগটিত হওয়ার প্রচেষ্টাকে ষড়যন্ত্র বলে জনগণকেই অপমান করছে। আমি বঙ্গবন্ধুর সানিধ্য পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু আমাকে সদ্য স্বাধীন দেশের সংবিধান রচনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এটা আমার সবচেয়ে বড় পাওনা। ব্যক্তিগতভাবে আমার চাওয়া-পাওয়ার আর কিছুই নেই। সংবিধান অনুযায়ী জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করাই একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে আমার পবিত্র কর্তব্য।

আমরা জনগণের ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকার মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষে- বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। জনগণ তাতে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। মৌলিক বিষয়ে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে। এখন সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার সময় এসেছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের প্রচেষ্টা সফল হবে, ইনশাল্লাহ।

আপনারা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলুন, মুক্তির বার্তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করুণ। অতীতে জনগণের বিজয়কে কেউ ঠেকাতে পারে নাই; ভবিষ্যতেও পারবে না, ইনশাল্লাহ্।
আপনাদের সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি। আল্লাহ হাফেজ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!