• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কী হবে গণতন্ত্রের ‘হত্যা’ ও ‘বিজয়’ দিবসে?


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬, ০৪:৫৫ পিএম
কী হবে গণতন্ত্রের ‘হত্যা’ ও ‘বিজয়’ দিবসে?

ঢাকা: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতির ইতিহাসে একটি অন্যরকম অধ্যায়। এদিনে একতরফা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এ জয়ের মাধ্যমেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন হয় তারা। তাই এ দিনটিকে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে মনে করতে শুরু করে আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে, একইদিনকে গণতন্ত্রের হত্যা দিবস হিসেবে পালন করতে শুরু করে দেশের অপর বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। দিনটিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করে। তারা ওই নির্বাচনকে ভোটার বিহীন প্রহসনের নির্বাচন মনে করে। এর মধ্য দিয়ে দেশের গণতন্ত্রের ধারাকে ব্যাহত করা হয়েছে বলেও মনে করে তারা।

তবে ওই দিনের নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট, জাতীয় পার্টিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ১২টি দল। সেই নির্বাচনে জয় লাভের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

গেল দুই বছর ধরে বিশেষ এই দিনটিকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনীতির মাঠ। ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালনে উল্লাস আর আত্মতৃপ্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মধ্যে। আর গণতন্ত্রের হত্যা দিবস পালনে ক্ষমতাসীন দলের ওপর ক্ষোভ আর শত অভিযোগের তীর ছুঁড়ে দেয় বিএনপি।

২০১৭ সালের শুরুতেই এই দিবস ঘিরে মাঠের রাজনীতিতে ফের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তির দিন ৫ জানুয়ারিকে নিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে দু’দলই।

এর মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে কমিশন পুনর্গঠনের দাবি নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ এ দিনটির গুরুত্বকে নতুন মাত্রা দেবে। আর এই সময়েই ক্ষমতাসীন আর ক্ষমতার বাইরে থাকা দু’দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাক রাজনীতিতে অন্যরকম প্রভাব ফেলবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচি ‘রুটিন ওয়ার্ক’ হলেও পাল্টাপাল্টি বা মুখোমুখি সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে চাঙা হতে পারে রাজপথের রাজনীতি। তবে এর মধ্যেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ হুমকি দিয়ে বলেছেন, দশম সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে বিএনপিকে রাজপথে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হবে না।

সরকার দলের এ হুমকিতে বিএনপি কী রাজপথে নেমে অতোটা প্রভাব ফেলতে পারবে? এমন প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিএনপির দাবি, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে। যে কারণে দশম সংসদ নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তির দিন অর্থাৎ ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে দিবসটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে দলটি। এবার দিনটি ঘিরে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দাবি, দেশের সংবিধান সমুন্নত রাখতে ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিকল্প ছিল না। যদিও বিএনপিসহ দেশি-বিদেশি নানা চক্র চেষ্টা করেছিল ধ্বংসাত্মক পদ্ধতিতে নির্বাচন বানচাল করতে। কিন্তু বিরোধীদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি, শত বিরোধিতা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। যে কারণে দিবসটি ২০১৫ সাল থেকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ। এদিনে দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলটির পক্ষ থেকে সমাবেশ করা হবে। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকায় দুটি বৃহৎ সমাবেশ করা হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ার ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশ হবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং দলটির সব সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনকেও ৫ জানুয়ারির দিন অনুরূপ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, ৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে গণতন্ত্রের বিজয় উদযাপনের লক্ষ্যে শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) বর্ধিতসভা হবে। এই সভায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অন্তর্গত সব থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা থাকবেন। আশা করছি, একটা স্মরণীয় সমাবেশ করতে পারব।

বিএনপি সূত্র জানায়, আগামী ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তির দিনটি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনে ঢাকার বাইরে সব জেলা-উপজেলায় কালো পতাকা মিছিল আর রাজধানীতে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ৭ জানুয়ারি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে দলটি।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বাদে সারা দেশের সব জেলা-উপজেলায় কালো পতাকা মিছিল এবং কালো ব্যাজ ধারণ করবেন নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া এ উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ জানুয়ারি সমাবেশ করবে বিএনপি। সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আমরা ইতোমধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি এবং প্রক্রিয়া শুরু করেছি।

দুই পক্ষের অনড় অবস্থানের ঘোষণায় কিছুটা শঙ্কা দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। গণতন্ত্রের হত্যা না বিজয় এ প্রশ্নের চেয়ে বড় বিষয় শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি। এমনই মনে করছেন তারা।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগেই দেশের ৩০০ আসনের ১৫৩টি আসনের সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন ১৪৭ আসনে ভোট হয়। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট নির্বাচন বয়কট করে নির্বাচন বানচালের দাবিতে নির্বাচনের আগের তিন মাস এবং নির্বাচনের পরে কয়েক মাস সারা দেশে একযোগে আন্দোলন শুরু করে। নির্বাচনকেন্দ্রিক দেশি-বিদেশি নানা চাপের মুখে পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তার পরও ‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার’ যুক্তিতে নির্বাচনবিরোধীদের মোকাবিলা করে দেশ পরিচালনায় মনোযোগী হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!