• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুসিকে নৌকার পরাজয়ের নেপথ্যে ৭ কারণ


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ১, ২০১৭, ০৫:০৮ পিএম
কুসিকে নৌকার পরাজয়ের নেপথ্যে ৭ কারণ

ঢাকা: কুমিল্লায় বিএনপির প্রার্থী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু টানা ক্ষমতা থাকায় সাংগঠনিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী। টানা ৯ বছর পৌর চেয়ারম্যান থাকার পর ৫ বছর সিটির মেয়র ছিলেন। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনের ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল দিতে হয়েছে এবারের নির্বাচনে।

এছাড়া নির্বাচনী কৌশল নিধারণ করে ভোটারদের আস্থা অর্জনে দূরদর্শিতার পরিচয় রাখতে পারেনি। সীমার পরাজয়ের নেপথ্যে দলীয় কোন্দলের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিষয় ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছিল, যা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে। নেপথ্যের অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে।

দলীয় অন্তর্কোন্দল: নৌকার প্রার্থীর পিতা অ্যাডভোকেট আফজাল খান ও তার দলীয় প্রতিপক্ষ সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের দ্বন্দ্ব প্রায় তিন যুগের। এ দ্বন্দ্ব কেন্দ্রীয় নেতা এবং দফায় দফায় বৈঠক করেও নিরসন হয়নি; যার প্রভাব ভোটে দেখা গেছে।

প্রার্থীর পরিবারের ইমেজ সংকট: আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার স্বচ্ছ ইমেজ থাকলেও তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নেই। শংকর হত্যাকাণ্ড, শহর ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল হত্যাকাণ্ড, দেবদ্বার পৌর যুবলীগ নেতা জালালউদ্দিন টিটু হত্যাকাণ্ডসহ বেশ কয়েকটি মামলায় অভিযুক্ত আফজাল খান পরিবারের সদস্যরা। এসব কারণ নির্বাচনে পরাজয়ের ফ্যাক্টর।

হিন্দু ভোটারদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ: হিন্দু সম্পত্তি দখল, শংকর হতাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার না পাওয়ার কারণে আফজাল খান কুমিল্লার হিন্দু সম্প্রদায় আফজাল খান পরিবারের প্রতি আস্থার ঘাটতি চলে আসছে অনেক আগে থেকে। এ নির্বাচনে এর প্রতিপালন ঘটেছে।

কেন্দ্রীয় নেতাদের দূরদর্শিতার অভাব: আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার পক্ষে ২৫ জনেরও অধিক কেন্দ্রীয় নেতা অবস্থান নেন কুমিল্লা শহরে। কুমিল্লার নির্বাচনে দলের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহকে প্রধান সমন্বয়কারী ও সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীমকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তারা প্রত্যেকে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ভাগ করে নিয়ে কাজ করেছেন নির্বাচনী এলাকায়। কিন্তু তাদের প্রচারণা ছিল মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যন্ত। ভোটারদের কাছ পর্যন্ত তারা পৌঁছাতে পারেননি। প্রচারণার ছিল শহরের প্রধান সড়ককেন্দ্রিক। কেন্দ্রীয় নেতারা দ্বন্দ্ব নিরসনে কৌশল অবলম্বন না করে হুমকি দিয়ে স্থানীয় দ্বন্দ্বকে আরো উসকে দিয়েছেন। তারা নারায়ণগঞ্জ আর কুমিল্লা এক করে দেখেছিলেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের দূরদর্শিতার অভাবে স্থানীয় কোন্দল আরো প্রকট হয়েছে।

স্থানীয় নেতাদের আস্থার সংকট: স্থানীয় অনেক নেতাকর্মী ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সীমার বিপক্ষে কাজ করেছেন। স্থানীয় নেতাদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল ছিল, ওপরে ওপরে মিটমাট হয়ে গেলেও ভেতরে ভেতরে উল্টোপথে হেঁটেছেন তারা। আর যে স্থানীয় নেতাকে ওয়ার্ডভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকের সঙ্গে ভোটারদের দূরত্ব রয়েছে। আবার দায়িত্বশীল নেতারা নির্বাচনী খরচ নিয়ে তা কর্মী পর্যন্ত পৌঁছায়নি। অনেক কর্মী নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে ধানের শীষের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। নির্বাচনের দিন নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন।

জামায়াতসহ কাউন্সিলর প্রার্থীদের তেলেসমাতি: মেয়র প্রার্থী সীমা দল সমর্থিত অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে ঐক্য গড়তে পারেননি। কারণ পুরনো শহরের অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী ছিল এমপি হাজী বাহার অনুসারী। অপরদিকে তিনটি ওয়ার্ডে জামায়াত সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা মেয়র পদে নৌকার সঙ্গে আঁতাত করেছিল।

কিন্তু নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে জামায়াত শেষ পর্যন্ত নৌকায় ভোট দেননি। সীমার নিজ ওয়ার্ড ৮নংসহ এসব তিন ওয়ার্ডে জমায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। জামায়াত নির্ভরশীলতা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। অপরদিকে আওয়ামী লীগ অনুসারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা ধানের শীর্ষের সঙ্গে আঁতাত করেছেন।

কালো টাকার ছড়াছড়ি: ধানের শীষের প্রার্থী নিম্ন মধ্যবৃত্তদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ভোট কেনন বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল নৌকার প্রার্থী। কারণ আওয়ামী লীগ-বিএনপির সরাসরি সমর্থক ৩০ ভাগ করে হলেও সাধারণ ভোটারও কম নয়। ফলে সাধারণ ভোটারদের কাছে না টানতে পারাও পরাজয়ের অন্যতম কারণ নৌকার বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!